দাম্পত্য জীবনে সুখি হতে চান?
প্রকাশিত : ১২:২৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২১
আপনি কী একজন শুদ্ধ মানুষ হতে চান? তাহলে পথ চলার ক্ষেত্রে কিছু শুদ্ধাচার মেনে চলুন। আর তা যদি আপনি পারেন, তবে দেখবেন চমৎকার এক জগতে প্রবেশ করেছেন। শুদ্ধ হওয়া বিষয়টি এমন নয় যে এটা আপনা আপনি হয়ে যায়। শুদ্ধ হওয়ার জন্যে আপনাকে এটা চর্চ্চা করতে হবে। এটা অনেকটা ভালো সঙ্গীত শিল্পী বা ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠার মতোই। সাফল্যের জন্যে তাদেরকে যেমন চর্চ্চা করতে হয়, শুদ্ধা মানুষ হওয়ার ব্যাাপরেও আপনাকে সেটা করতে হবে।
দাম্পত্য জীবনে সুখি হওয়ার কিছু মন্ত্র রয়েছে। যা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যদি মেনে চলেন তবে সংসার হবে স্বর্গ। আসুন জেনে নেই কি সেই শুদ্ধাচার-
- স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে পরিবারের প্রধান এবং স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে পরিবারের প্রাণ ও মূল চালিকাশক্তি মনে করুন।
- স্বামী/ স্ত্রীর সাথে কখনো বিরক্তি নিয়ে বা নিস্পৃহ ভঙ্গিতে কথা বলবেন না।
- স্বামী/ স্ত্রীকে আদেশের সুরে কিছু করতে বলবেন না। একে অপরকে আক্রমণ করে কথা বলবেন না।
- অন্যদের সামনে স্বামী/ স্ত্রীকে হেয় করবেন না।
- কখনো অন্যের স্বামী/ স্ত্রীর সাথে নিজের স্বামী/ স্ত্রীর তুলনা করবেন না।
- স্বামী/ স্ত্রীকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করবেন না। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
- স্বামী/ স্ত্রীর ব্যাপারে অহেতুক খুঁতখুঁতে হবেন না। কঠোর ভাষায় তার ভুল ধরিয়ে দেবেন না। ভুলগুলোকে সময়-সুযোগমতো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিন।
- মনে মনে স্বামী বা স্ত্রীর সাথে তর্ক করবেন না/ অশ্রদ্ধা পোষণ করবেন না। মানুষ যা চিন্তা করে, না চাইলেও তার প্রকাশ ঘটে কথা ও আচরণে।
- গৃহস্থালি কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করুন। এটি শুধু কাজ নয়, এটি স্ত্রীর প্রতি আপনার ভালবাসারও বহিঃপ্রকাশ।
- পরস্পরের কাছ থেকে প্রতিদান আশা করবেন না। দায়িত্ব পালন করে যান, প্রতিদান স্রষ্টা দেবেন।
- নববধূ এবং আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে পারস্পরিক কোনো অনুযোগে নিষ্ক্রিয় থাকবেন না, এড়িয়ে যাবেন না। স্বামী হিসেবে স্ত্রী ও আপনার পরিবারের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করুন।
- দুই পরিবারের রুচি, অভ্যাস, চিন্তাভাবনা, আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য থাকতেই পারে। এগুলোর ব্যাপারে উদার ও নমনীয় হোন। নিজেদের বোঝাপড়াটা ঠিক করুন। তাহলেই দ্বন্দ্ব-সংঘাত কমতে থাকবে।
- কিছু ব্যক্তিগত অভ্যাস রয়েছে, যা আরেকজনের পছন্দ না-ও হতে পারে। অভ্যাসগুলো ক্ষতিকর হলে তা পাল্টানোর জন্যে উদ্বুদ্ধ করুন। আর ক্ষতিকর না হলেও কেন সেগুলো আপনার পছন্দ নয় তা শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন। কখনোই পরস্পরের পরিবারকে দোষারোপ করবেন না।
- দুই পরিবারের অভিভাবক ও সদস্যদের মধ্যে সুন্দর ও আন্তরিক সম্পর্ক দাম্পত্য জীবনকে অনেক ভুল ও সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে। তাই ছেলেপক্ষের অবস্থান উঁচুতে আর মেয়েপক্ষের অবস্থান নিচুতে-এমন না ভেবে পরস্পরকে সম অবস্থানে রাখুন। এতে সম্পর্ক সুন্দর থাকবে।
- স্বামী/ স্ত্রীর অসুস্থতায় যথাসম্ভব সেবা করুন। দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। কী খেতে ইচ্ছে করছে বা কী প্রয়োজন তা জেনে নিয়ে ব্যবস্থা করুন। তার অসুস্থতাজনিত অসহিষ্ণু মেজাজের বিপরীতে আপনি শান্ত-সহনশীল আচরণ করুন।
- অনৈতিক বা অকল্যাণকর না হলে স্বামী/ স্ত্রীর পারিবারিক প্রথার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং তাতে অংশ নিন।
- ‘আমার বাবা বিষয়টিকে এভাবে দেখতেন, আমার মা এভাবে করতেন’-এ ধরনের তুলনা না করে নিজেদের মতো করে ভাবতে শিখুন।
- বিবাহ-পূর্ব প্রত্যাশা এবং বিবাহ-পরবর্তী বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান যত বেশি হবে দাম্পত্য সুখ তত কমতে থাকবে। তাই প্রত্যাশাকে যুক্তিসঙ্গত রাখুন, বাস্তবতাও সহনশীল থাকবে।
- বিবাহিত জীবনের সুখ-শান্তি ও মমতা ধরে রাখুন পারস্পরিক সম্মান বিশ্বস্ততা ও সহযোগিতা দিয়ে।
- শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেরা একান্তে কথা বলার সময় বের করে নিন।
- আপনাকে ভুল বুঝতে পারে এমন কোনো কথা ও তথ্য স্বামী/ স্ত্রীকে জানানোর আগে আবার ভাবুন।
- বস্তুগত চাওয়া-পাওয়াকে সবসময় যুক্তিসঙ্গত সীমার মধ্যে রাখুন। মানসিক চাপ সৃষ্টি করে স্বামী/ স্ত্রীকে দুর্নীতি করতে বাধ্য করবেন না।
- স্বামী-স্ত্রীর ভুল বোঝাবুঝিতে তৃতীয় পক্ষকে (আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী) জড়াবেন না। সুযোগ বুঝে সরাসরি কথা বলুন। নিজেরা আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন।
- তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত বিষয়গুলোতে যেচে পড়ে সিদ্ধান্ত দিতে যাবেন না বা কৌতূহলী হবেন না। তারা সহযোগিতা চাইলে পরিস্থিতি বুঝে পরামর্শ দিন।
- বাইরে খেতে হলে প্রথম সুযোগেই স্বামী/ স্ত্রীকে জানান। এতে তার মানসিক প্রস্তুতিটা সুন্দর হবে।
- অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের পরও ব্যস্ততা থাকলে বাসায় প্রথম সুযোগেই জানিয়ে রাখুন। এতে দুশ্চিন্তা ও ভুল বোঝাবুঝি কমবে।
- সামর্থ্যের বাইরে খরচ করা থেকে একে অন্যকে প্রথম থেকেই বিরত রাখুন।
- কর্মজীবী স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। পরিবারকে দেয়া সময় সমমর্মিতায় ভরিয়ে রাখুন।
- পরস্পরের প্রিয় ও ভালোলাগা বিষয় সম্পর্কে জানতে সচেষ্ট হোন।
- স্বামী/ স্ত্রীর চেয়ে নিজেকে ডিগ্রি, সামাজিক মর্যাদা, বিত্ত-বৈভবে শ্রেষ্ঠ মনে করবেন না। বিবাহিত জীবনে আপনারা অংশীদার। আপনার সাফল্যে স্বামী/ স্ত্রীর যে-কোনো ভূমিকা অকপটে স্বীকার করুন।
- যদি বোঝেন স্বামী আজ বেশি পরিশ্রম করে এসেছেন কিংবা বাসায় মেহমান আসায় স্ত্রীকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে, তাহলে তার প্রতি সহানুভূতিশীল ও সমমর্মী হোন।
- স্বামী বা স্ত্রীকে প্রতিদিন অন্তত একবার বলুন ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’।
- যথাসম্ভব একসাথে খাওয়া ও একসাথে মেডিটেশন চর্চা করুন।
- মাঝেমধ্যে পরস্পরকে প্রয়োজনীয় বা প্রিয় কিছু উপহার দিন।
- মা ও শাশুড়ি, বাবা ও শ্বশুরকে সমদৃষ্টিতে দেখতে চেষ্টা করুন। দেবর-ননদ বা শ্যালক-শ্যালিকাকেও আপন ভাইবোন মনে করুন।
- বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে সন্তান নেয়ার বিষয়ে দুজন মিলে পরামর্শ করুন।
- গর্ভে সন্তান এলে তাকে কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত মনে করুন। পৃথিবীতে তার আগমনকে হাসিমুখে বরণ করে নিন।
- গর্ভধারণকালে মায়ের কাছ থেকে তথ্য চলে যায় সন্তানের ডিএনএ-তে। সুস্থ ও আলোকিত সন্তানের জন্যে এ সময় উৎফুল্ল থাকুন, সৎ চিন্তা করুন।
- কমপক্ষে চার সন্তানের শোকরগোজার মা-বাবা হোন। এরাই পরিবারকে প্রাণচঞ্চল রাখবে।
- বিয়ের কিছুদিন পরই যদি জানতে পারেন যে, স্বামী/ স্ত্রী মানসিক রোগী বা এমন কোনো রোগে আক্রান্ত/ মাদকাসক্ত/ সমস্যায় জর্জরিত, যা আপনি মেনে নিতে পারবেন না, তাহলে দ্রুত আপনার পরিবারের সাথে পরামর্শ করুন। আসলে মাদকাসক্ত/ সমস্যাগ্রস্ত/ জটিল রোগগ্রস্ত বা মানসিক রোগীর প্রতি মমতা প্রদর্শন আর তার সাথে সংসার করা এক কথা নয়।
- ভালো ও কল্যাণকর উদ্যোগ এবং সেবামূলক কাজে দুজন যত একাত্ম হবেন, পারিবারিক সুখ তত বাড়তে থাকবে।
এসএ/