ঢাকা, বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫

দুবাইতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের সম্পদের পাহাড়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১০, ৭ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৫:১৮, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের বিপুল সম্পদের হদিস মিলেছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাথি হয়েছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই তালিকায় আওয়ামী লীগ সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাফওয়ান সোবহান, ব্যাংকার নাফিজ সরাফাত, স্টার সিরামিকসের চেয়ারম্যান সৈয়দ একে আনোয়ারুজ্জামান, আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ একরামুজ্জামান, ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী, বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইনসের মালিক শাহাব সাত্তার, ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও এনটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিসান মির্জা, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাফওয়ান সোবহান তাসবীর, মাহীন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মেঘনা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান লস্কর, ঢাকা-১০ আসনের সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও প্রিমিয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান হেফজুল বারি মোহাম্মদ ইকবাল, নোয়াখালী-২ আসনের সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য এবং পারটেক্স স্টার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এমএ হাসেম ও তার ছেলেদের নাম এসেছে। 

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ দুবাই ভূমি বিভাগের ২০২০ ও ২০২২ সালের রেকর্ড ও কিছু ইউটিলিটি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি ডেটাসেট তৈরি করে। এই ডেটাসেটটি ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের 'দুবাই আনলকড' শীর্ষক বৈশ্বিক তদন্তে ব্যবহার করা হয়। তবে, সেখানে বাংলাদেশের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অভিযুক্ত এই ব্যক্তিদের কেউ কেউ বর্তমানে বা পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। তাদের কেউ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন, আবার কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গত নভেম্বরে এমন অন্তত তিনজন আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন, যাদের সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে।

অনেকের নামে শত শত কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করা ও অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের মামলা রয়েছে। আবার অনেকের কোম্পানির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত চলমান।

দুবাই ভূমি বিভাগের সরকারি রেকর্ড এবং সম্পত্তির প্রতি বর্গফুটের গড় মূল্যের ভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়েছে যে, এই ১৯ জনের মালিকানাধীন ৮২টি সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ২৯ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।

কিছু ক্ষেত্রে এসব সম্পত্তি পরিবারের সদস্য বা অন্যান্য একাধিক সুবিধাভোগীর নামে রয়েছে। 

এর আগে গত ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনার অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রিটে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআরের) প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রমের অগ্রগতি জানিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে চারটি সংস্থাকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তবে আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরও কোনো ভূতুরে কারণে এই বিষয়ে তদন্তই শুরু হয়নি। 

প্রসঙ্গত, দুবাইয়ের ব্যস্ততম এলাকা থেকে শুরু করে শান্ত মরুভূমির প্রান্তর—এই ঝকমকে শহরটি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশি ধনীদের 'সেকেন্ড হোম' হিসেবে ভীষণ প্রিয়।

শহরটির দ্রুত বর্ধনশীল আবাসন খাত বাংলাদেশিদের জন্য সম্পদ গচ্ছিত রাখার আকর্ষণীয় জায়গা। এর বড় কারণ হলো—সুউচ্চ ভবন ও পর্যটনের জন্য খ্যাত দুবাইয়ে নগদ অর্থ দিয়ে সম্পত্তি কেনা যায়। এমনকি শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও নগদ অর্থে সম্পত্তি বিক্রি করে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বারবারই দুবাইকে হুন্ডি লেনদেনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। বিশাল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক ও বাংলাদেশিদের সেখানে অবস্থান করা এর অন্যতম কারণ।

এছাড়া, দুবাইয়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ডলার বা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি অর্থ দেশটির সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করলে 'গোল্ডেন ভিসা' দেয় দুবাই।

দুবাইয়ের ভূমি বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রিয়েল এস্টেট খাতে ২০ লাখ আরব আমিরাত দিরহাম বা তার বেশি মূল্যের সম্পত্তি ক্রয়ে বিনিয়োগকারীদের ১০ বছরের নবায়নযোগ্য রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয় এই সেবা (গোল্ডেন ভিসা)। স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান ও পিতামাতাকেও এই ভিসায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। যদি সম্পত্তিটি বন্ধক থাকে, তাহলে ২০ লাখ দিরহাম পরিশোধের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকের একটি চিঠি জমা দিতে হবে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি