ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

দুরূদ শরীফ পাঠের ফজিলত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪১, ২২ মে ২০২০

মুসলমানদের জন্য রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা সকল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ফেরেশতাগণ ও ঈমানদারকে নবীর প্রতি দরূদ পড়ার নির্দেশ আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়েছেন। নবীর প্রতি দরূদ পড়ার অর্থই হলো- আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন ও হুকুম পালন করা।

আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি সালাত-দরূদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সূরা আহজাব: ৫৬)

দুরূদ শরীফ সমস্ত বিধানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কাজ। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন বিধানে নিজের ও নিজের ফিরিশতাদের কথা উল্লেখ করেননি- আমিও এ কাজ করছি, তোমরাও করো। একমাত্র দুরূদ শরীফ ব্যতীত। সমস্ত ফেরেশতারা কোন নির্দিষ্টকরণ ছাড়াই, সর্বদা হুযূরে পাকের উপর দুরূদ শরীফ প্রেরণ করেন।

দুরূদ শরীফ গোটা জীবনে একবার পাঠ করা ফরজ। যেখানেই মহানবীর নাম আসে, একবার পাঠ করা ওয়াজিব। নামাযের অভ্যন্তরে ‘আত্তাহিয়্যাতু’-এর পর পাঠ করা ‘সুন্নাত’। আর সর্বদা পাঠ করা মুস্তাহাব।

আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবের প্রশংসা ও গুণগান মর্যাদাময় স্থানে করেছেন এবং তাঁর উপর রহমত প্রেরণ করেছেন। ফেরেশতাগণও রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহত্ব বর্ণনা করেছেন। অতএব, মুসলমানদেরও এরূপ মর্যাদা সহকারে দুরূদ সালাম প্রেরণ করা জরুরি। 

পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু মহান আল্লাহ্ তা‘আলার গুণগান করে, কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা স্বয়ং তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। এজন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করা একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর আস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৮৪)

হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের তুলনায় আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার ওপর দরূদ পড়বে।’ (সুনানে তিরমিজি: ৪৮৪)

হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল) অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪৬)

হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম স্তরে চড়লেন তখন বললেন, ‘হে আল্লাহ কবুল করুন’। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন, ‘হে আল্লাহ কবুল করুন’। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন, ‘হে আল্লাহ কবুল করুন।’ খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা আপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনও শুনিনি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হলো না- সে বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো কিন্তু সে আপনার ওপর দরূদ পড়ল না- সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম, তখন তিনি বললেন, যে পিতা-মাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। (বায়হাকি: ১৪৬৮)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি- ‘যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশকারী হবো।’  [আল্ ক্বওলুল বদী’] 

হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত- ‘নিঃসন্দেহে প্রত্যেক দোয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে, তা থেকে কিছুই উপরে আরোহন করে না, যতক্ষণ না তুমি তোমার নবীর উপর দুরূদ শরীফ পড়বে।’

দুরূদ পাঠের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় ফযিলত হল দুরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হয়। কেননা, আল্লাহর এক বিন্দু রহমত সমগ্র পৃথিবীর চেয়েও বড় এবং প্রশস্ত।

সূত্র: সহিহ সিত্তাহ

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি