ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দুর্ভাগা রাজা নাকি তরুণ যুবরাজ, শেষ হাসি ফুটবে কার মুখে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনি হতভাগ্য বয়স্ক রাজা। এর আগে খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। কিন্তু একবারও সেরার মুকুট ওঠেনি তার মাথায়। ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে। ক্লাব ফুটবলে সফল হলেও, এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ব্যর্থ লিওনেল মেসি। 

অন্যদিকে আছেন বিশ্বকাপের তরুণ যুবরাজ কিলিয়ান এমবাপ্পে। প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে নেমেই করেছেন বাজিমাত, জিতেছেন ট্রফি। মাত্র দ্বিতীয় বিশ্বকাপেই হয়ে উঠেছেন তারকা। 

আজকের ফাইনালে লড়াই হবে দু’দলের এই দুই সেরা ফুটবলারের।

এবারের বিশ্বকাপের দুই সেরা ফুটবলার মেসি ও এমবাপ্পে। দু’জনেই করেছেন পাঁচটি করে গোল। এখনো পর্যন্ত গোল লক্ষ্য করে ১০টি করে শট মেরেছেন দু’জনেই। মেসি যেমন গোল করিয়েছেন বেশি, তেমনি এমবাপ্পে সুযোগ তৈরি করেছেন সবচেয়ে বেশি। তাই ফাইনালে লড়াই হবে সমানে সমান।

দু’জনেই নিজেদের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইনাল খেলতে নামছেন। তবে ৩৫ বছর বয়সের বয়স্ক মেসি নামছেন একটি ফাইনালে হেরে, আর ২৩ বছরের তরুণ এমবাপ্পে নামছেন একটি ফাইনালে জিতেই। 

২০০৬ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে নেমেছিলেন মেসি। পরের ১৬ বছরে তিনি ফুটবল দুনিয়া শাসন করেছেন। এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ছাড়া তার তুলনায় আসতে পারেননি আর কেউই। নিজের শেষ বিশ্বকাপ জিততে চান তিনি। 
এবার কি ভাগ্য সহায় হবে? না কি আরও একবার ট্রফির পাশ দিয়ে খালি হাতেই চলে যেতে হবে তাকে?

২০০৬ সালে হোসে পেকারম্যানের আর্জেন্টিনার হয়ে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে বদলি হয়ে খেলতে নেমেছিলেন মেসি। প্রথম ম্যাচেই গোল করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেবারের বিশ্বকাপে বদলি হয়েই খেলতে হয়েছিল তাকে। 

২০১০ বিশ্বকাপের আগেই অবশ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন মেসি। সেবার আর্জেন্টিনার দায়িত্বে ছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। তার দলের প্রধান ফুটবলার ছিলেন মেসি। গ্রুপ পর্যায়ে ভালোই খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল মেসিদের।

২০১৪ সালে মেসিকে কেন্দ্রে রেখেই দল তৈরি করেছিলেন আলেসান্দ্রো সাবেলা। সেবার গ্রুপ পর্যায়ে চারটি গোল করেছিলেন মেসি। নেদারল্যান্ডসকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে সেই জার্মানির কাছেই হারতে হয়েছিল মেসিদের। ট্রফির কাছে গিয়েও ব্যর্থ হতে হয়েছিল তাকে। 

ততোদিনে ক্লাবের হয়ে প্রায় সব ট্রফি জেতা হয়ে গেছে লিওর। বার্সেলোনার হয়ে লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা দেল রে থেকে শুরু করে পিএসজির হয়ে লিগ ওয়ান- সবই জিতেছেন। বালন ডি'অর জিতেছেন সাত সাত বার। 

কিন্তু দেশের হয়েই নেই কোনো সাফল্য। একটি অলিম্পিক সোনা ও একটি কোপা আমেরিকা ছাড়া। কোপার ফাইনালে দু’বার ও বিশ্বকাপের ফাইনালে এক বার হেরেছেন মেসি।

২০১৮ সালেও ব্যর্থ হয়েছেন। কোনোরকমে গ্রুপ পর্ব টপকানোর পরে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ফ্রান্সের সামনে পড়েছিলেন তারা। সেবার এমবাপ্পে ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার রক্ষণ। সেই অর্থে গতবারের ওই হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ আছে এবারের ফাইনালে।

এখনও পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপ মিলিয়ে মেসি খেলেছেন ২৫টি ম্যাচ। গোল করেছেন ১১টি। অন্যদিকে মাত্র দু’টি বিশ্বকাপে ১৩টি ম্যাচে ৯ গোল করে ফেলেছেন এমবাপ্পে। ফ্রেঞ্চ তারকা যে গতিতে এগোচ্ছেন, তাতে বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসাকে (১৬ গোল) টপকাতে তার হয়তো আর একটি বিশ্বমঞ্চই যথেষ্ট হবে।

অন্যদিকে, ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ফ্রান্স। কিন্তু তার পরের সাতটি বিশ্বকাপে চমকে দিয়েছে তারা। সাত বারের মধ্যে চার বার ফাইনালে উঠেছে ফরাসিরা। ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। হেরেছে ২০০৬ সালে। এবার জিতলে তিন নম্বর শিরোপা হবে ফরাসিদের।

১৯৯৮ সালে ফুটবলার হিসেবেই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন দিদিয়ের দেশম। ২০ বছর পর ২০১৮ সালে জিতেছিলেন কোচ হিসেবে। এবার জিতলে ব্রাজিল ও ইতালির নজির ছুঁয়ে ফেলবে ফ্রান্স। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। সেই কীর্তি গড়ার সুযোগ থাকছে ফ্রান্সের সামনে। 

এই দলের ২৩ সদস্যের মধ্যে ১৭ জন চাইলে অন্য দেশের হয়ে খেলতে পারতেন। কারণ, তারা কেউই ফরাসি নন। দেশটির অভিবাসন নীতিই তাদের দলকে এতোটা শক্তিশালী করে তুলেছে। তাইতো প্রথম একাদশের ছ’জন ফুটবলার না থাকার পরেও তাদের দেখে মনেই হচ্ছে না যে, দেশমের দল কোনোভাবে কমজোর হয়েছে। দলগত সংহতি তাদের প্রধান শক্তি।

খেলার বিচারে এবারের বিশ্বকাপেই সবচেয়ে ভালো ফুটবল খেলছেন মেসি। জিততে মরিয়া তিনি। কোনো প্রতিপক্ষই তাকে আটকে রাখতে পারেনি। ফাইনালে নামার আগে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সির মালিক। 

অন্যদিকে ফ্রান্সের ১০ নম্বর জার্সির মালিক এমবাপ্পে নেমেছেন দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপ জিততে। নেমেছেন ইতিহাসের খাতায় নাম লেখাতে। মেসির মঞ্চে শ্রেষ্ঠ হতে। 

লড়াই হবে সমানে সমানে। আজ রাতে লুসাইল স্টেডিয়ামে ঝড় তুলতে নামবেন দুই দলের এই দুই সেরা ফুটবলার। এক দিকে মেসি নামবেন ভাগ্যবদল করতে। অন্যদিকে এমবাপ্পে নামবেন নিজেকে রাজার আসনে বসাতে।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি