দুঃস্বপ্ন দেখেন! এর কারণ কী?
প্রকাশিত : ১৬:৪২, ২০ আগস্ট ২০২২
দুঃস্বপ্ন আমাদের জীবনে প্রায় ঘটে থাকে। যা মাঝে মাঝে ভংয়করও বটে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, আচমকাই দুঃস্বপ্নের দাপটে সাধের ঘুম ভাঙ্গে রাতে। এমন তো অনেকের সঙ্গেই ঘটে। কিন্তু, কেন দুঃস্বপ্ন দেখি আমরা? এ বিষয়ে কৌতূহল দীর্ঘ দিনের। তা নিয়ে অনেকের অনেক ধরণের মত রয়েছে। এবার সে তালিকায় নাম লিখিয়েছে আমেরিকার মনোবিদ এবং লেখিকা কারমেন হেরার।
দুঃস্বপ্ন দেখার আসল কারণ কী? এ বিষয়ে ‘কমিটেড: ফাইন্ডিং লভ অ্যান্ড লয়ালটি থ্রু দ্য সেভেন আর্কিওটাইপস’-এর লেখিকার দাবি, একটি-দু’টি নয়, এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে ছ’টি কারণ।
চলুন দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী-
দুঃস্বপ্নের কারণ জানানোর আগে স্বপ্নকে বিশ্লেষণ করেছেন হেরা।
একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ঘুমের মধ্যেও মস্তিষ্কের বেশ কিছু অংশ সজাগ থাকে। এবং মস্তিষ্কের থ্যালামাস, মেডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং পস্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স-সহ একাধিক জেগে থাকা অংশের বুননে গড়ে ওঠে স্বপ্ন।”
হেরার মতে, “কখনও কখনও মস্তিষ্কের এই অংশগুলো নিজেদের মধ্যে যে সঙ্কেত আদানপ্রদান করে, তা নেতিবাচক এবং বেশ বিচলিত করে দেওয়ার মতো হয়।’’
এর কারণও খোলসা করেছেন হেরা। হেরা আরও বলেন, “মানসিক আঘাত, মাদকসেবন অথবা অন্য কোনও কারণে দুঃস্বপ্নের জন্ম হয়। বস্তুত, গভীর ভাবে ঘুমিয়ে থাকার সময় চোখের দ্রুত নড়াচড়া (চিকিৎসাজগতে যা র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম নামে পরিচিত)-র পর্যায়ে দুঃস্বপ্নের তাড়না হয়।”
আমেরিকার মনোবিদের মতে, সম্পর্কের অসম্পূর্ণতাও দুঃস্বপ্নকে ডেকে আনে।
তিনি বলেন, “স্বপ্নের মধ্যে আমাদের অসম্পূর্ণ আবেগগুলি ধরা দেয়। আপনি যদি কোনও সম্পর্কে নিজেকে অপূর্ণ মনে করেন, তা সে যে কারণেই হোক না কেন, তার থেকে দুঃস্বপ্নের জন্ম হতে পারে।”
হেরার মতে, সম্পর্কে প্রতারিত হওয়া বা নিজেকে পরিত্যাজ্য মনে হলে অথবা সঙ্গীর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটির জেরে তৈরি হওয়া আবেগের থেকেও দুঃস্বপ্ন দেখা দিতে পারে। এ ধরনের হতাশাজনক অপূর্ণতা এবং ভয় এমন ভাবে মনে চেপে বসে যে সেগুলিই তখন কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হয়।”
দুঃস্বপ্নের জেরে সাধের ঘুমটি মাঠে মারা গেলে কারই বা ভাল লাগে? হেরার পরামর্শ, “দুঃস্বপ্ন অতিমাত্রায় বিরক্ত করতে থাকলে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞের মুখোমুখি হওয়াই ভালো।”
শুধু কি আবেগের অপূর্ণতা, সঠিক পদ্ধতিতে না ঘুমালেও দুঃস্বপ্ন হানা দিতে পারে বলে মনে করেন হেরা।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়মিত ঘুমের ধাত থাকলে তা আমাদের বিশ্রামে বেশ ব্যাঘাত করতে পারে। বার বার ঘুমের সময় পাল্টানোর জেরেও আমাদের মন উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেকে আবার অনিদ্রায় ভোগেন। এর জেরে স্বপ্নের চরিত্র বদলে গিয়ে তা দুঃস্বপ্নে বদলে যায়।”
অনিয়মিত ঘুমের পাশাপাশি আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন হেরা।
তার মতে, “বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, চিৎ হয়ে ঘুমালে তাতে অনিদ্রার উদ্রেক হতে পারে। এমনকি, এতে নাক ডাকার সমস্যা হয়, কখনও বা শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটে। এগুলোর পাশাপাশি তা দুঃস্বপ্নকেও ডেকে আনতে পারে।”
কে না জানে, পেটভরে খাওয়ার সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক বেশ গভীর! তবে এর সঙ্গে দুঃস্বপ্নের সম্পর্কের কথা শুনিয়েছেন হেরা।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই আমাদের খাবারদাবারের সঙ্গে স্বপ্নের সম্পর্ক গড়া হয়েছে।”
হেরার সতর্কবার্তা, খাওয়ার পর পরই ঘুমাতে গেলে তাতে হানা দিতে পারে দুঃস্বপ্ন।
তিনি জানান, অনেকেই এটা মানেন যে, রাতে খাওয়ার ঠিক পরেই ঘুমাতে গেলে দুঃস্বপ্ন দেখা দিতে পারে। এটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবেও সত্য। কারণ, খাওয়ার পর দেহের বিপাকক্রিয়া বেড়ে যায়। তাতে রাতে মস্তিষ্কের কাজকর্মও বৃদ্ধি পায়।
নিত্য দিনের নানা টানাপড়েনে মানসিক চাপ বাড়লেও তা সহজেই দুঃস্বপ্নকে টেনে আনতে পারে। এমনই মনে করেন হেরা। বিষয়টি সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
হেরার কথায়, মানসিক চাপ বাড়লে তা উদ্বেগের মাত্রাকেও বাড়িয়ে দেয়। তাতে অনেক সময় মনে হয় যেন খাদের কিনারে পৌঁছে গিয়েছেন। এর থেকে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা রাগে ফেটে পড়ার মতো মানসিক অবস্থা অথবা মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটতে পারে।
মানসিক চাপ থেকে জৈবিক ঘড়ির ছন্দও বিগড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন হেরা। তিনি জনান, জৈবিক ঘড়ির ছন্দ বিগড়ে গেলে তাতে ঘুমের বারোটা বাজতে দেরি হয় না। সেই সঙ্গে দুঃস্বপ্নের অবতারণাও ঘটে।’’
হেরার দাবি, “স্বপ্ন হোক বা দুঃস্বপ্ন— সমস্ত কিছুরই উদ্দেশ্য রয়েছে। দুঃস্বপ্নের উৎস কী এবং তা কোন পদ্ধতিতে কাজ করে, তা বুঝে নিতে পারলে আমরা নিরুপদ্রব ঘুমের সন্ধান পেতে পারি।”
বিজ্ঞানের পথ ধরে দুঃস্বপ্নের কারণ ব্যাখ্যা করলেও এ নিয়ে যে দৈবিক বা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির যোগের ভূরি ভূরি তত্ত্ব ছড়িয়ে রয়েছে, তাকে উড়িয়ে দিতে চান না হেরা।
তার কথায়, “আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, এমন তত্ত্বও রয়েছে যে, স্বপ্নের মাধ্যমে এই মহাবিশ্ব আপনার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। এর অর্থ এটা নয় যে দুঃস্বপ্ন দেখামাত্রই আপনার জীবনে ক্ষতিকর কিছু ঘটবে। তবে এমন হতে পারে, যে মানুষটিকে আপনি স্বপ্নে দেখেছেন তিনি কোনও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। অথবা তাঁর যত্ন নিতে হবে। ফলে আপনার প্রিয় মানুষটির ভাল মতো খেয়াল রাখুন।”
সূত্রঃ আনন্দবাজার অনলাইন
আরএমএ/এমএম