দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসলে এগিয়ে যাবে: সামন্ত লাল সেন
প্রকাশিত : ২৩:১০, ৪ এপ্রিল ২০১৮
আশির দশকে প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তখন আমেরিকায় প্লাস্টিক সার্জনরা ক্যাডিলাক গাড়ি চালাত। সেই তরুণ বয়সে তাই স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম, আমিও গাড়ি কিনব, অনেক টাকার মালিক হবো।
কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, অগ্নিদগ্ধ রোগীরা মেঝেতে পড়ে আছে অযত্নে আর অবহেলায়। কেউ তাদের দিকে তাকায় না, ওদের জন্যে তেমন কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থাও ছিল না। সবাই জানে এরা তো মারা যাবেই। তখন শতকরা ৯০ ভাগ পোড়া রোগীই মারা যেত বিনা চিকিৎসায়। এদের দেখে আমার জীবনের স্বপ্ন বদলে গেল। আমার জীবনের একমাত্র ব্রত হয়ে গেল এদেশে আগুনে পোড়া একজন রোগীও যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।
আর নিয়ত ভালো থাকলে ওপরওয়ালাও সাহায্য করেন। এই বিশ্বাস নিয়েই আমি পথ চলেছি। ৮ শয্যা দিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে এটি রূপ নিয়েছে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।
আমি আমার ছাত্র-সহকর্মীদের সবসময় বলি, আমি বহুবার বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমার কথা ছিল, এদেশ ছেড়ে আমি যাব না। এদেশের মানুষের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি তা অপূরণীয়। আমরা সবাই যদি দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসি তাহলে এ দেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে।
আমার মা আমাকে বলতেন, বাবা! আমি তো একদিন মারা যাবই। তুমি যদি গরীব মানুষের সেবা করো, তাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবে। এছাড়া একবার এক মসজিদের ইমাম আমাকে বললেন, বাবাজী, আপনি যদি মানুষের বাচ্চার হেফাজত করেন, আল্লাহ আপনার বাচ্চার হেফাজত করবেন। এ কথাগুলো আমি কোনোদিন ভুলব না। এগুলোই আমাকে মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা জুগিয়েছে।
কোয়ান্টামের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে তরুণদের উৎসাহিত করতে তিনি বলেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলে সেবাই উত্তম ইবাদত। আমার খুব ভালো লাগে এ কথাটা।
আমাদের ধর্মেও আছে-জীবে দয়া করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ইশ্বর। অর্থাৎ জীবকে যে ভালোবাসে, সে ভগবানকেও ভালোবাসে। সেই ব্রত নিয়েই আমি আমার জীবন শুরু করেছিলাম। এখানে উপস্থিত তরুণদের বলি, তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করো।
উল্লেখ গত ২ এপ্রিল ২০১৮ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মাসিক মুক্ত আলোচনার ৭৫ তম পর্বে বাংলাদেশ সকল বার্ন প্রজেক্টের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এসব কথা বলেন।
এমএইচ/টিকে
আরও পড়ুন