দেশে দেশে ছড়াচ্ছে এইচএমপিভি ভাইরাস, যা জানা দরকার
প্রকাশিত : ১৬:২৪, ৭ জানুয়ারি ২০২৫
করোনা মহামারির পর বিশ্বে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। চলতি জানুয়ারির শুরুতে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনে প্রথম এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এখন এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব মালয়েশিয়া ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এই ভাইরাস নিয়ে এখনও কোনো সতর্কতা জারি করেনি।
জানা গেছে, বর্তমানে চীনে যে এইচএমপিভি সংক্রমণ হয়েছে, তা চেনা ও ভালোভাবে জানা ভাইরাসের সংক্রমণ, যা গত কয়েকশ বছর ধরে মানুষকে সংক্রামিত করছে।
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিনডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগ বিশেষজ্ঞ জ্যাকলিন স্টিফেন্স বলেছেন, ''শীতের সময় এই সংক্রমণ খুবই সাধারণ ঘটনা। শিশুরা যে বেশি করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, সেটাও নতুন কোনো ঘটনা নয়। সাধারণত এই ভাইরাসে সংক্রমণের ফলেই শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হয়।''
ফ্লিনডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক বিশেষজ্ঞ জিন কার বলেছেন, ''করোনার তুলনায় চীনে এইচএমপিভি-র প্রাদুর্ভাব একেবারেই আলাদা ঘটনা। করোনা ভাইরাস একেবারেই নতুন ভাইরাস ছিল। মানুষের শরীরে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না।''
এইচএমপিভি হলো রেসপিরেটরি সিনসিয়া ভাইরাস(আরএসভি) পরিবারভুক্ত ভাইরাস। এর ফলে স্বল্পস্থায়ী সংক্রমণ হয়।
আরএসভির মতো এইচএমপিভিও শীতের সময় হয়, তা দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।
২০০১ সালে ২১টি ডাচ শিশুর সংক্রমণের পর গবেষকরা এইচএমপিভি-কে চিহ্নিত করেন। এই ভাইরাসকে অনেক সময়ই আরএসভি হিসাবে ভুল করা হয়। কারণ, দুইটি ক্ষেত্রে একই ধরনের রোগলক্ষণ থাকে।
রোমানিয়ার ইরাসমাস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির অ্য়ালবার্ট ওস্তাহাউস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''পাঁচ বছরের বেশি বয়সিদের শরীরে সাধারণত এইচএমপিভি-র অ্যান্টিবডি থাকে।'' তিনি ও তার সহকর্মীরা গবেষণা করে দেখেছেন, এইচএমপিভি মানুষের দেশে কয়েকশ বছর ধরে আছে।
করোনাভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার তুলনায় এইচএমপিভি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তার মানে এর মিউটেশন খুব তাড়াতাড়ি হয় না। যখন শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমে য়ায়, তখন এর সংক্রমণ বাড়ে।
অ্যালবার্ট বলেছেন, ''ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মিউটেশন খুব বেশি হয়। এইচএমপিভি তুলনায় স্থিতিশীল। আমরা আরএসভি ও এইচএমপিভি-কে ১০-১৫ বছর ধরে দেখছি। তাদের খুব সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন এই ভাইরাসের মধ্যে দেখা যায়নি।''
আরএসভি-র মতোই এইচএমপিভি-ও শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাব ও নিচের অংশে ছড়ায়। এর ফলে ঠান্ডা লাগা, কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকে।
অন্য ভাইরাসের মতো এইচএমপিভিও সংক্রামক। আক্রান্ত মানুষের হাঁচি, কাশি থেকে বাতাসে বাহিত হয়ে এই ভাইরাস অন্যদের সংক্রমিত করে। তাছাড়া স্পর্শ বা শারীরিক সংযোর কারণেও এই ভাইরাস অন্যের শরীরে যে পারে।
যে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ গুরুতর হতে পারে।
এমবি