ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

দেশে প্রথম রোবট দিয়ে পরানো হলো রিং

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ | আপডেট: ১৬:৪৬, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

রোবটের মাধ্যমে হার্টে রিং পরানো রোগীর সঙ্গে ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার

রোবটের মাধ্যমে হার্টে রিং পরানো রোগীর সঙ্গে ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার

হৃদরোগীদের হার্টের ধমনীতে সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে রিং (স্টেন্ট) পরানোর ক্ষেত্রে রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি হলো সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা। এত দিন রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির জন্য যেতে হতো ভারত, সিঙ্গাপুর এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে। এখন থেকে দেশেই এই চিকিৎসাসেবা মিলছে। গত রবিবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে রোবটের মাধ্যমে রিং পরানো।

হৃদরোগের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথমবারের মতো সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে চিকিৎসা খাতে রোবটিক প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি করতে রিংয়ের দামসহ সর্বোচ্চ খরচ হবে এক লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা রিং পরানোর খরচ ধরা হয়েছে। এই সেবা নিতে ভারতে আড়াই লাখ ও সিঙ্গাপুরে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়।

রবিবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে দুজন রোগীর হৃদযন্ত্রের প্রধান ধমনীতে রোবটের মাধ্যমে রিং পরানো হয়। তাঁরা হচ্ছেন সৌদিপ্রবাসী মোরশেদ আলম বুলবুল ও কুষ্টিয়ার আজম আলী। উভয়কে বিনা মূল্যে এই সেবা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এই রোবটিক অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার ও তাঁর বিশেষায়িত টিম।

এই চিকিৎসা পদ্ধতিটির উদ্বোধন করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল হাসান মিলন ও কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন।

ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার কালের কণ্ঠকে বলেন, রিং পরানো দুজন রোগীই সুস্থ আছেন। রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরালে তা অনেক সূক্ষ্ম ও নিখুঁত হয়। সময়ও কম লাগে। হার্টের ভেতরে কাজ করতে যত বেশি সময় লাগে ঝুঁকি তত বাড়ে।

এ জন্য সারা বিশ্বে এখন রোবটের মাধ্যমে রিং পরানো চিকিৎসকদের পছন্দের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

চিকিৎসকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের ১৬০টি দেশে রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ভারতে রয়েছে ছয়টি সেন্টার।

ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার জানান, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এখনো কার্ডিওলজিস্টরা ক্যাথল্যাবে রোগীর শরীরের কাছে থেকে হদযন্ত্রের রিং পরান। সর্বাধুনিক পদ্ধতি রোবটিক এনজিওপ্লাস্টিতে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা রোবট দিয়ে রোগীর চেয়ে দূরে থেকেই নিখুঁতভাবে রিং পরাতে পারেন।

রিং পরানোর রোবটের বর্ণনা দিয়ে ডা. কর্মকার বলেন, ‘এই রোবটের দুটি অংশ থাকে। একটি হলো রোবটের একটি হাত, যা ক্যাথল্যাবে থাকে। আরেকটি হচ্ছে কন্ট্রোল সেকশন, যেখান থেকে মূল কার্ডিওলজিস্ট পুরো কার্যক্রমটি দূর থেকে সম্পন্ন করে থাকেন।’

রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানোর তিন ধরনের সুবিধা আছে জানিয়ে ডা. কর্মকার বলেন, ‘প্রথম সুবিধা হলো জটিল প্রক্রিয়াটি খুব সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা যায়। যেমন—অনেক সময় হার্টের রিং নিখুঁতভাবে বসানোর জন্য হয়তো মাত্র এক মিলিমিটার সামনে অথবা পেছনে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। হাত দিয়ে করলে এই কাজটি শতভাগ নিখুঁতভাবে করা কঠিন হয়। কিন্তু রোবটের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে তা করা যায়।’

আরেকটি সুবিধা হলো হৃদরোগ চিকিৎসকদের নিজেরা সরাসরি এনজিওপ্লাস্টি করতে গেলে যে সময় লাগে, রোবটের মাধ্যমে করতে অনেক কম সময় লাগে। এতে অল্প সময়ে বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া যায়। প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, ‘হৃদযন্ত্রের ভেতরে ক্যাথেটার, তার, বেলুন, রিং ইত্যাদি যত কম সময় রাখা যায়, রোগীর জন্য তত নিরাপদ। রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রিং পরাতে সময় কম লাগে বলে জটিলতাও কম হয়।’

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি