ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

দৈনন্দিন জীবনে শুদ্ধাচার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫৭, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

সামাজিক মুখোশ নয়, অন্তর্গত শক্তিই হচ্ছে আপনার সত্যিকার ব্যক্তিত্ব। আর অন্তর্গত শক্তির উৎস হচ্ছে সঠিক জীবনদৃষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টির প্রকাশ ঘটে সুন্দর কথোপকথন, সদাচরণ আর রুচিসম্মত পোশাক ও প্রসাধনে।

শুদ্ধাচারের এ পর্বে সঠিক ব্যক্তিত্ব প্রকাশে দৈনন্দিন আচরণ কেমন হওয়া উচিত তার কিছু উদাহরণ দেয়া হলো। এর আলোকে আপনার আচরণকে পরিশীলিত করুন। চৌকস মানুষ  হিসেবে চারপাশের সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হোন।

সালাম ও কুশল বিনিময়ে

> কারো সাথে দেখা হলে আগে সালাম দিন। আন্তরিক হাসিতে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করুন।

> শুদ্ধভাবে স্পষ্ট উচ্চারণে বলুন : আসসালামু আলাইকুম/ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। সালামের জবাবে হাসিমুখে বলুন : ওয়া আলাইকুমুস্-সালাম/ আপনার ওপরেও শান্তি বর্ষিত হোক।

> সালামের জবাবে স্পষ্ট উত্তর না দেয়া বা মাথা দোলানো থেকে বিরত থাকুন।

> সৌজন্যমূলক হাসির জবাবে অন্তত স্মিত হাসুন।

> আন্তরিক হাত মেলানোর জবাবে হাত নির্জীব রাখবেন না। আবার অতি আন্তরিকতা বোঝাতে কারো হাতে চাপ দেবেন না বা হাত ধরে ঝাঁকাবেন না।

> আপনার হাত ভেজা, ঘর্মাক্ত ও অপরিচ্ছন্ন থাকলে হাত মেলানো এড়িয়ে স্মিত হেসে বলুন, ‘দুঃখিত, হাত ভেজা ... ’

> প্রথম পরিচয়েই রাজনৈতিক আলাপচারিতা ও সমসাময়িক পরিস্থিতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা থেকে বিরত থাকুন।

পোশাক-প্রসাধনে

> সবসময় পরিচ্ছন্ন, মার্জিত ও শালীন পোশাক পরিধান করুন।

> খুব আঁটসাঁট ও দৃষ্টিকটু নয়; বরং কাজে ও চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন−এমন পোশাক পরুন।

> বয়স বুঝে সময় ও অনুষ্ঠান-উপযোগী পোশাক নির্বাচন করুন।

> পোশাকে সুরুচির পরিচয় দিন। তথাকথিত আধুনিক হতে গিয়ে ছেলেরা মেয়েদের বা মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন।

> উৎসবে/ পার্বণে বা ধর্মীয় ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে সাজপোশাক নির্বাচনে সচেতন থাকুন।

> ‘এই পোশাকটি কোথা থেকে কিনেছেন’? এমন প্রশ্ন করার পর কেউ যদি উত্তর দেন−‘উপহার পেয়েছি’, তাহলে আর কথা বাড়াবেন না।

> ড্রেসিং রুমে বা আড়ালে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করুন।

> খালি গায়ে/ ঘুমের পোশাকে অন্যের সামনে আসবেন না। জামার বোতাম ঠিকভাবে লাগান।

> ‘এ পোশাকে তোমাকে মানাচ্ছে না’− এ ধরনের কথা বলে কাউকে অস্বস্তিতে ফেলবেন না।

> ব্যবহৃত পারফিউমের উগ্র গন্ধ, জুতোর হিল বা অলংকারের শব্দে যাতে অন্যের অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

> অনুমতি ছাড়া কারো পরিধেয় টাই, কলম, আইডি কার্ড ধরে দেখবেন না বা হাতে নেবেন না।

> পরিধেয় পোশাক ও সাজসজ্জা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে সংক্ষেপে প্রশংসা করুন।

> ‘ব্র্যান্ডের পোশাক পরতে হবে’−এই দাস-মনোভাব বর্জন করুন। পোশাকের গুণাগুণ, উপযোগিতা, রুচিশীলতা ও শালীনতাকে প্রাধান্য দিন।

> ঘরে পোশাক স্তূপ করে রাখবেন না। যে পোশাক আর পরবেন না, তা ব্যবহার-উপযোগী থাকলে যাদের প্রয়োজন তাদের দিয়ে দিন।

> সাজগোজের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখুন। স্থানকাল অনুসারে পোশাক-প্রসাধন ব্যবহার করুন।

> বাইরে থেকে ফিরে মুখমণ্ডল পরিষ্কার করুন। রাতে কখনো মেক-আপ না তুলে ঘুমাবেন না।

> মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী, মেক-আপ উপকরণ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

> ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে থাকে ব্লিচ ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল, যা ত্বকের স্বাভাবিক কমনীয়তা নষ্ট করে। কৃত্রিম মেহেদি পরিহার করুন। এ ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগসহ ত্বক স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চলাফেরায়

> হেলেদুলে বা কুঁজো হয়ে নয়, ঘাড় সোজা রেখে সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে সহজ স্বাভাবিকভাবে হাঁটুন।

> সঙ্গে কেউ থাকলে তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবেন না; আবার নিজেও খুব বেশি পিছিয়ে পড়বেন না। সঙ্গীর সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করুন।

> অপরিচিত কেউ যেচে কথা বলতে এলে উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

> দলবদ্ধভাবে কোথাও গেলে−বিশেষত নতুন স্থানে কখনোই দলছুট হবেন না। সঙ্গে অভিভাবক বা বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ থাকলে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার অনুমতি নিন।

> রাস্তায় পরিচিত কাউকে দেখেই আনন্দে চিৎকার করে উঠবেন না। চোখাচোখি হলে স্মিত হাসুন। পরিস্থিতি বুঝে কথা বলুন।

> অন্যের চলাচলে অসুবিধা হয়−এমনভাবে পথ আগলে দাঁড়াবেন না। ফুটপাতে/ ব্যস্ত চলাচলের পথে দু-তিন জন পাশাপাশি একত্রে/ হাত ধরে হাঁটবেন না।

> জুতো ঘষে বা শব্দ করে হাঁটবেন না। যথাসম্ভব নীরবে, সন্তর্পণে ও বিনীতভাবে চলাফেরা করুন।

> হঠাৎ করে অনিচ্ছাকৃত ধাক্কা লাগলে বা মুখোমুখি হয়ে গেলে ‘দুঃখিত’ বলে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করুন।

> ভিড়ের মধ্যে কনুই দিয়ে ঠেলা দিতে দিতে এগিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

> হাঁটতে হাঁটতে ফোনে কথা বলবেন না, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। জরুরি কল এলে একপাশে দাঁড়িয়ে কথা শেষ করে চলা শুরু করুন।

> ডোর ক্লোজার বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়−এমন দরজা দিয়ে ঢোকার সময় খেয়াল রাখুন পেছনে কেউ আছেন কিনা। সম্ভব হলে আপনি ঢুকে দরজা ধরে দাঁড়ান, যাতে পেছনের ব্যক্তিও স্বচ্ছন্দে ঢুকতে পারেন।

> আলাপরত দুজনের মাঝ দিয়ে যেতে হলে ‘মাফ করবেন/ এক্সকিউজ মি/ আমি একটু যেতে চাচ্ছি’ বলে মনোযোগ আকর্ষণ করুন।

> রাস্তা পারাপার/ হাঁটার সময় কানে হেডফোন/ ইয়ারফোন লাগিয়ে ফোনে কথা বলা, গান বা রেডিও শোনা থেকে বিরত থাকুন।

> অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে কৃত্রিম ও লোক দেখানো আচরণ বা অঙ্গভঙ্গি করবেন না।

> জ্বলন্ত সিগারেট কোথাও পড়ে আছে দেখলে তা নিভিয়ে দিন।

> খাওয়া শেষে কলা, বাদামের খোসা/ খালি প্যাকেট নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। কাছাকাছি ডাস্টবিন না থাকলে কাগজে মুড়িয়ে নিজের পকেটে/ ব্যাগে রাখুন। পরে ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।

> রাস্তায় চলতে চলতে থুতু বা কফ ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

> কবরস্থানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মৃত্যুর কথা স্মরণ করুন এবং মৃতদের জন্যে দোয়া করুন।

সচেতনভাবে বিরত থাকুন 

> চেহারা, গায়ের রং, গড়ন নিয়ে মন্তব্য করে কাউকে অস্বস্তিতে ফেলা।

> ভয় দেখানো বা চমকে দেয়ার উদ্দেশ্যে নানাবিধ শব্দ ও অঙ্গভঙ্গি করা বা গায়ে হাত দেয়া।

> কাউকে বোকা বানিয়ে বা অপ্রস্তুত করে ‘এপ্রিল ফুল’-এর মতো বিকৃত আনন্দে মেতে ওঠা।

> অনুমতি ছাড়া অন্যের পোশাক ও জুতো-স্যান্ডেল পরা। অন্যের টুথব্রাশ চিরুনি রুমাল গামছা ব্যবহার করা।

> উপহাস বা ব্যঙ্গ করে কাউকে উপনাম বা বিকৃত নামে ডাকা। নিম্নবিত্ত বা বয়সে ছোট কাউকে তাচ্ছিল্য বা তুচ্ছার্থে ‘তুই-তোকারি’ করা।

> কোনোকিছু ছুড়ে মেরে, শিস দিয়ে, তুড়ি বা তালি বাজিয়ে বা ‘এই যে’ বলে কারো দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা।

> খোঁচা দিয়ে, চিমটি কেটে, পায়ে পা লাগিয়ে, জামা টেনে ধরে কারো মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করা।

> ধমকে বা সজোরে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলা।

> দেয়ালে পা ঠেকিয়ে হেলান দেয়া/ কোমরে হাত দিয়ে বেঁকে দাঁড়ানো।

> কোনোকিছু দামি−এটা বোঝানোর জন্যে তা নাড়াচাড়া করা। নিজের পরিধেয়/ ব্যবহৃত কিছু দেখিয়ে অন্যকে তার মূল্য অনুমান করতে বলা।

> পোশাক ক্রোকারিজ ফার্নিচার মোবাইল অলংকার গাড়ি বাড়ি অর্থাৎ নিজের যে-কোনোকিছুর মূল্য, ব্র্যান্ড ও তার বৃত্তান্ত নিজ থেকেই অন্যকে বলা/ জাহির করা।

> কারো দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা।

> অকারণে কাউকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করা।

> রসিকতা করে অন্যের টুপি, মাফলার বা স্কার্ফ খুলে নেয়া।

> মতের অমিল হলে তর্ক জুড়ে দেয়া।

> গা ঘেঁষে লাইনে দাঁড়ানো। লাইনে পা মাড়িয়ে দেয়া, কনুই দিয়ে গুঁতো দেয়া, ধাক্কা দেয়া, গায়ে হাত দেয়া।

> পা দিয়ে কারো জুতো/ স্যান্ডেল সরানো।

> অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া শিশুদের ছবি তোলা।

> কোনো প্রতিমা/ মূর্তির দিকে আঙুল উঁচিয়ে দেখানো এবং এ নিয়ে হাসাহাসি বা নেতিবাচক মন্তব্য করা।

> কারো পোশাকে চা/ কফি পড়ে গেলে বা কেউ পিছলে পড়লে বা হোঁচট খেলে তাকে সাহায্য না করে তা নিয়ে মজা করা।

লেখাটি শহীদ আল বোখারী মহাজাতক-এর "শুদ্ধাচার" বই থেকে নেওয়া

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি