ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘দোদুল্যমান’ মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল

সেলিম জাহান

প্রকাশিত : ২১:২৬, ৪ নভেম্বর ২০২০

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, Freedom for Choice প্রভৃতি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ফলাফল এখন একটি দোদুল্যমান অবস্থায়। বর্তমানে ছ’টি অঙ্গরাজ্যে- আরিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, পেনসেলভানিয়া, উইসকনসিন ও নর্থ ক্যারোলাইনায় লড়াইটা এমনই হাড্ডাহাড্ডি যে, পাল্লা যে কোনও দিকে ঝুঁকতে পারে। গতকালের ভোটপ্রদান ও ভোটের ফলাফল দেখে আমার পাঁচটি কথা মনে হয়েছে।

প্রথমত: যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে আজ যে বিবিধ বিভাজন বিরাজমান, তা আরও গভীর হচ্ছে। এ বিভাজন শুধু লাল-নীল অঙ্গরাজ্যের নয়, এ বিভাজন বর্ণের, বিত্তের, অভিবাসনের, শিক্ষার, গ্রাম ও শহরের ইত্যাদি। এ বিভাজনকে আরে সুদৃঢ় করে কট্টরপন্থি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ক্ষমতার মুনাফা লুটে যাচ্ছে। বৈচিত্র্যের শক্তি নয়, বিভাজনের দূর্বলতাকেই তারা পুঁজি করছে।

দ্বিতীয়ত: যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অপশক্তি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝে একটি ‘শঙ্কার সংস্কৃতি’ প্রোথিত করতে চাইছে। সেটার মাধ্যমেই তারা দারিদ্র, কৃষ্ণাঙ্গ, অভিবাসী জনগেষ্ঠীকে দমাতে চাইছে। সহিংসতা হয়ে গেছে তাদের ভাষা, ভীতি প্রদর্শন তাদের সংস্কৃতি।

তৃতীয়ত: দেশটির রাজনৈতিক পন্ডিতেরা এ সত্যটি আবারও প্রমাণ করলেন যে, পন্ডিতেরাই সবকিছু পন্ড করেন। তাঁদের ঘোষিত জরিপ আর প্রাক্কলনের সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক এতোটাই বেশী যে, তাঁদেরকে আমার ‘আবহাওয়া পাঠকদের’ মতো মনে হয়।

চতুর্থত: যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের কাঠামোটি বিগত শতাব্দীর এবং এর আশু সংস্কার প্রয়োজন। ‘নির্বাচনী কলেজ ভোট’ বলে যে বস্তুটি রয়েছে, তা জনগনের আশা-আকাঙ্খাকে প্রতিফলিত করে না। তাই জনভোট বেশী পেয়েও বহু প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেননি। পুরো ব্যবস্থাটি আমাকে আইয়ুব খানের ‘বুনিয়াদী গণতন্ত্র’ কাঠামোর কথা মনে করিয়ে দেয়। যেখানে ৮০ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ভোটে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হতেন।

পঞ্চমত: এ বছরের নির্বাচনে আসলে জয়ী হয়েছে গণতন্ত্র। এতো বেশী সংখ্যায় মানুষ আগে কখনও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেয়নি। তার একটি কারণ অবশ্য করোনার কারণে আগাম ভোট ও ডাক-ভোটের ব্যবস্থা। এ উৎসাহ আগামীতে কতটা ধরে রাখা যাবে, সেটাও একটা প্রশ্ন।

শেষের কথা বলি। আজ সতীর্থ বন্ধু মহিউদ্দীন আহমেদ অবয়বপত্রে লিখেছেন, ‘আমার একটা উপলব্ধি হলো- জো বাইডেন আমেরিকার জন্য ভালো। কিন্তু পৃথিবীর জন্য ভালো হবে ডোনাল্ড ট্রাম্প’। জানি না তার কথাটা সঠিক কি না! তবে আমার ক্ষুদ্র উপলব্ধি হলো- ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প মানবতার জন্যে ভালো নয়’।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি