ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৯, ১৭ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ১৮:৪৩, ১৯ আগস্ট ২০১৭

দেশের আমদানি ব্যয় বাড়লেও রফতানি আয় না বাড়ার কারণে দেখা দিয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ বেশি।

এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি ছিল (৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার)। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয় বাড়লেও রফতানি আয় না বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া ও সেবা খাতের ঘাটতি বাড়ায় ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্য।

অর্থনীতিবিদদের মতে, উৎপাদনশীল খাতের বিনিয়োগে আমদানির এ প্রভাব পড়লে তা অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে এ অর্থ যদি পাচার হয়ে থাকে তাহলে এর ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। কেননা রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক কমে গেছে, যা বৈদেশিক লেনদেনে যে ভারসাম্য ছিল তা আশঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে চাপের মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৪০১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে চার হাজার ৩৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে আরও বলা হয়েছে, বিগত অর্থবছরে আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে চার হাজার ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ছিল তিন হাজার ৯৯০ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৫৯ কোটি ডলার।

অন্যদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৪০১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৩৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের রফতানি আয় বেড়েছে মাত্র ৫৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

গত বছর প্রবাসী আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় সরকারের চলতি হিসাব ফের ঋণাত্মক হয়েছে। ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরজুড়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরেও উদ্বৃত্ত ছিল (৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার)।

এ সময়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতনভাতা পরিশোধে সেবামূল্য ব্যয় বেশি হওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। গত দুই অর্থবছরে উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে ঋণাত্মক ধারা চলছে। যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচিত সময়ে সেবাখাতেও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। গত অর্থবছরে সেবাখাতে বিদেশিদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৬৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৩৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল (ঘাটতি) ২৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গত অর্থবছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মোট ২৯৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ১৭০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা আগের বছরে এসেছিল ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট এফডিআই বেড়েছে ৩২ দশমকি ৭৬ শতাংশ।

বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি