ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দ্যা ভিঞ্চির যে কাজগুলো আজও রহস্যময়

প্রকাশিত : ১৪:৩৭, ১৮ মে ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

রেনেসাঁ যুগের যে মানুষটি এঁকেছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত মোনালিসা, তাকে চিনি হয়তো আমরা সবাই। কিন্তু এই শিল্পীর জীবনের ব্যাপারে হয়তো জানেন না অনেকেই। আসলে বহুমুখী প্রতিভাধর লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অন্যান্য পরিচয়ও সুবিদিত- ভাস্কর, স্থপতি, সঙ্গীতজ্ঞ, সমরযন্ত্রশিল্পী এবং বিংশ শতাব্দীর বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য জনক।

ইতালির ফ্লোরেন্সের অদূরবর্তী ভিঞ্চি নগরের এক গ্রামে লিওনার্দোর জন্ম হয়েছিল ১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল। ১৫১৩ থেকে ১৫১৬ পর্যন্ত অধিকাংশ সময় তিনি রোমে দশম পোপ এর অধীনে কাটিয়েছিলেন। ১৫১৯ সালের ২ মে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এ বছর তার তার ৫০০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়।

ঘরোয়াভাবে লেখাপড়া করলেও কোনও রকমের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি দা ভিঞ্চি। প্রকৃতির প্রতি ভীষণ আগ্রহ থাকার কারণে তিনি বেশিরভাগ সময় বাইরেই কাটাতেন। ১৪৬৬ সালে লিওনার্দো ১৪ বছর বয়সে ভ্যারিচ্চিও-র কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন। ভ্যারিচ্চিও ছিলেন সে সময়ের একজন সফল চিত্রকর। এখানে কাজ করে লিওনার্দো হাতে কলমে প্রচুর কারিগরি জ্ঞানার্জন করেছিলেন। তার সুযোগ হয়েছিল কারুকার্য, রসায়ন, ধাতুবিদ্যা, ধাতু দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, প্লাস্টার কাস্টিং, চামড়া দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, গতিবিদ্যা এবং কাঠের কাজ ইত্যাদি শেখার।

পরে ১৪৭২ সালে তিনি চিত্রশিল্পীদের গিল্ডে ভর্তি হন এবং এই সময় থেকেই তার চিত্রকর জীবনের সূচনা হয়।

এর ১০ বছর পর তিনি মিলান গমন করেন এবং সেখানে অবস্থান কালে তার বিখ্যাত দেয়াল চিত্র দ্য লাস্ট সাপার অঙ্কন করেন। লিওনার্দো ১৪৮২ থেকে ১৪৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মিলানে কাজ করেছেন। আনুমানিক ১৫০০ সালে তিনি ফ্লোরেন্স ফিরে আসেন এবং সামরিক বিভাগে প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। এই সময়েই তিনি তার বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা অঙ্কন করেন।

‘মোনালিসা’ তৈরির সময় সাদা ক্যানভাসের উপরে বিভিন্ন স্তর তৈরির জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করেন লিওনার্দো। আর এতে তিনি এতটাই দক্ষ আর সফল ছিলেন যে পরবর্তীতে আর কেউই এই পদ্ধতিতে সমানভাবে সফল হয়নি।

বিভিন্ন অনুপাতের মিশ্রনের তৈলাক্ত স্তর ব্যবহার করে কাজটি করেন লিওনার্দো। এতে বিভিন্ন স্তরে আলাদা আলাদাভাবে রং মিশিয়ে তিনি ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন ‘মোনালিসা’ এর। শিল্পজগতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির এই কাজগুলো আজও সমানভাবে রহস্যময় এবং শ্রেষ্ঠ।

অনেক শিল্প-গবেষক রহস্যময় হাসির এই নারীকে ফ্লোরেন্টাইনের বণিক ফ্রান্সিসকো দ্য গিওকন্ডোর স্ত্রী লিসা গেরাদিনি বলে সনাক্ত করেছেন। শিল্পকর্মটি ফ্রান্সের ল্যুভ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

মোনালিসা ও দ্য লাস্ট সাপার ছাড়াও ভিত্রুভিয়ানো মানব, লেডি উইথ অ্যান এরমাইন ইত্যাদি তার উল্লেখ্যযোগ্য চিত্রকর্ম।

দ্যা ভিঞ্চির মৃত্যুর পর শতাব্দী ধরে নোট, আঁকা, পর্যবেক্ষণ এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত জার্নালগুলোর হাজার হাজার পৃষ্ঠাগুলো সামনে এসেছিল এবং সত্যিকারের ‘রেনেসাঁ মানুষের’ একটি পূর্ণাঙ্গ পরিমাপ প্রদান করেছে।

‘মিরর রাইটিং’ জিনিসটা প্রথম করেছিলেন দা ভিঞ্চি। তিনি তার সব নোট লিখে রাখতেন মিরর (আয়না) রাইটিংয়ে। কেন, কেউ জানে না। এমন নয় যে, এটা পড়া খুব কষ্ট; আয়নায় ধরলেই এই উল্টো লেখা সোজা হয়ে যেতো। তবুও এমনটা করতেন তিনি। আরেকটি তথ্য, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি কিন্তু ছিলেন বাঁ-হাতি।

তবে তিনি খুব মেধাবী হলেও, কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো আসলেই তিনি আবিষ্কার করেননি, অথচ তার নাম দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়। যেমন, ড্যান ব্রাউন তার ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’ বইতে ক্রিপ্টেক্স নামক একটি যন্ত্রের কথা বলেছেন। সেটি মোটেও লিওনার্দোর উদ্ভাবন নয়।

এবার আসা যাক মোনালিসার কথায়। নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা। একে নিয়ে বলা হয়-ছবির নারীর নাম লিসা ঘারারদিনি। তার স্বামী ফ্রাঞ্চেস্কো লিওকে দিয়ে তার এই ছবিটি আঁকিয়ে নেন। মোনা ইতালীয় ভাষায় একটি ভদ্র সম্ভাষণ, মা ডোনা (মাই লেডি) এর শর্ট ফর্ম। আর লিসা তো তার নাম। সহজভাবে বলতে গেলে, ছবিটার নাম, ম্যাডাম লিসা।

মোনালিসা সম্পর্কে বলা হয়, এটা নাকি লিওনার্দোর ছদ্ম সেলফ পোর্ট্রেইট; আবার এমন কথাও শোনা যায় যে, এটা নাকি তার মায়ের ছবি!

আসলে তার ৫ বছর বয়সে মা তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর তিনি বড় হয়ে অনেক খুঁজেছেন মাকে। তিনি কি পেয়েছিলেন তাকে? তার নোটগুলো নিয়ে গবেষণা করতে গেলে ৪ বার ক্যাটেরিনার নাম দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ একটি নোটে লিওনার্দো কেবল ‘ক্যাটেরিনা এসেছে’ এটুকুই লিখেছেন। ‘মা এসেছেন’। হতে কি পারে যে, এটা তার মা ছিল? দু’বার কেন ‘১৬ জুলাই’ লিখলেন?

১৪৮২ থেকে ১৫০০ সাল পর্যন্ত লিওনার্দো ছিলেন মিলানে। সুতরাং ১৪৯৩ সালের ওই তারিখে তিনি মিলানেই ছিলেন। অর্থাৎ মিলানেই তিনি এই ক্যাটেরিনা নামের নারীকে খুঁজে পান।

সর্বশেষ যে ক্যাটেরিনার উল্লেখ পাওয়া যায় তার নোটে, সেটা হলো ক্যাটেরিনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচের কাগজে। এই ক্যাটেরিনার শেষকৃত্য করতে কত খরচ করেছেন লিওনার্দো, সেটার হিসেব ছিল সেখানে।

লিওনার্দোর নিজের হাতে মিরর রাইটিং নোটে লেখা হিসাব অনুয়ায়ী, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি খরচ এখানে করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, এ নারীর ব্যাপারে লিও খুবই যত্ন করতেন। এ কারণেই ধারণা করা যায়, সম্ভবত তিনিই তার মা ছিলেন।

তবে রহস্যের আড়ালেই রয়ে গেছেন ইতালির রেনেসাঁর এই অগ্রপুরুষ। তার কোনও স্ত্রী কিংবা সন্তানও ছিল না, যে তার সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য দেবে।

যাইহোক, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রহস্য থেকে যাওয়াই ভাল। সব রহস্যের সমাধান হয়ে গেলে রহস্যের আর আকর্ষণ থাকবে কোথায়?

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ক্ষণজন্মা পুরুষ কম আছে। পাঁচশ বছর আগে তিনি রেখে গেছেন অগণিত আধুনিক চিন্তা যার কারণে মানুষ আজও তাকে স্মরণ করে।  


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি