ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনা সংকট

ধর্মীয় নির্দেশনা টিভিতে প্রচার প্রয়োজন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২০, ১৩ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৯:২৪, ১৩ এপ্রিল ২০২০

করোনায় ধর্মীয় নির্দেশনা

করোনায় ধর্মীয় নির্দেশনা

বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। উদার ধার্মিক হিসেবেই এখানকার মানুষ সমধিক পরিচিত। দৈনন্দিন জীবনে ধর্মচর্চার পাশাপাশি বিপদে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আল্লাহতে সমর্পন এখানকার মানুষদের স্বাভাবজাত বিষয়। এসব বিষয়ে নামাজ ও বিশেষ উপলক্ষে আলেম, মাওলানাদের কোরআন-হাদিস থেকে বয়ান বা ওয়াজ খুবই সমাদৃত। কিন্তু চলমান সংকটে সেগুলোর দেখা মিলছে না। মসজিদ বন্ধ বলে আলেমদের দেখাও মিলছে না তেমন। এ অবস্থায় শুক্রবারের জুম্মার নামাজ বা অন্য ধর্মীয় দিক নির্দেশনাগুলো অনলাইন বা টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হলে মানুষ ঘরে বসেই ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হতে পারবে বলেই মনে করেন আলেম সমাজ ও বিশিষ্টজনেরা। 

এ জন্য ইসলামী ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল হতে পারে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। তারা মনে করেন, জুম্মার নামাজের খুৎবা টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত হলে মানুষ ঘরে বসেই সেটা আমল করতে পারবে। আবার আসন্ন রমজানে তারাবীর নামাজও সেভাবে সরাসরি প্রচারিত হতে পারে। এছাড়া এ মহামারী থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশেষ দোয়ার নির্দেশনাও এভাবে প্রচারিত হলে ধর্মপ্রাণ মানুষ উপকৃত হবে। 

এ বিষয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতীব ও জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের দরকার সর্বাত্মক সতর্কতা ও সচেতনতা। সকলের জন্যই প্রয়োজন সতর্ক হওয়া ও নিয়ম-কানুন মেনে চলা। আমরা যারা ধর্মীয় অঙ্গনে কাজ করছি, তারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মুসল্লিদের সতর্ক করার কাজ করে যাচ্ছি। এমনকি এসময়ে মুসল্লিদের বাড়িতে থেকে নামাজ আদায়সহ বিশেষ প্রার্থনা করার জন্যও বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার যদি জুম্মার খুৎবা বা বাংলা বয়ান টেলিভিশনে প্রচারের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে মুস্ললিরা উপকৃত ও তৃপ্ত হবেন।’

সোমবার (১৩ এপ্রিল) একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘এ ধরনের রোগ-বালাই এক রকমের বিপদ-মুসীবত। এসব থেকে মুক্তির জন্য সতর্কতার পাশাপাশি আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে। একমাত্র আল্লাহই পারেন এই মহাবিপদের হাত থেকে সকলকে রক্ষা করতে। আল্লাহর কাছে রোগ থেকে পানাহ চাইতে হবে, দোয়া করতে হবে। সকলের উচিত আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা।’

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় জুম্মার দিনেও ধর্মপরায়ণ মুসল্লিদের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। মুসলমানদের সাপ্তাহিক এ ঈদের দিনেও ঘরে বসে ইবাদত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশন তথা সরকারের তরফ থেকে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ তথা মুসল্লিরা মসজিদ ও আলেমদের সংস্পর্শ না পেয়ে অনেকটা অতৃপ্ত। এ অবস্থায় সরকার যদি জুম্মার খুৎবা বা বাংলা বয়ান টেলিভিশনে প্রচারের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে মুস্ললিরা তৃপ্তবোধ করবেন।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় মসজিদের ভারপ্রাপ্ত খতীব বলেন, ‘বর্তমানে দুই-একটি বেসরকারি চ্যানেলে অবশ্য বায়তুল মোকাররমের খুৎবা সরাসরি দেখানো হচ্ছে। তবে আরও বড় পরিসরে তা প্রচার হলে সাধারণ মুসল্লিরা আরও উপকৃত হত। এই দুর্যোগ মুহূর্তে তারা ঘরে বসে কি করবে, কেমন ইবাদত করবে, কিভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে, কিভাবে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করবে সেসব জানতে পারতো এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে পারত। 

মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে যেমন এ সময়ে সতর্কতার সাথে ঘরে অবস্থান করতে হবে, তেমনি মহান আল্লাহর কাছে কায়-মনোবাক্যে বেশি বেশি করে সাহায্য চাইতে হবে। কেননা, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমরা কেউই এই বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্ত হতে পারবো না। তাই এ সময়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঘরে বসেই বেশি বেশি করে তওবা-এস্তেগফার করতে হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, মাফ চাইতে হবে, তাহাজ্জুদ পড়ে কান্নাকাটি করতে হবে। বেশি বেশি জিকির, কোরআন-হাদিস পড়তে হবে, বেশি বেশি আমল করতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহকে রাজী খুশি করতে হবে এবং সবরকম অনিষ্ঠ থেকে পানাহ চাইতে হবে। অজু-গোসল করে সর্বদা পাক সাফ থাকতে হবে। 

তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহই পারেন আমাদেরকে মুক্তি দিতে। তিনিই একমাত্র মুক্তিদাতা। তিনিই একমাত্র নিরাময়কারী। তিনিই একমাত্র সমস্যা সমাধানকারী। তাই কেবল তার কাছেই আমাদের ধর্ণা দিতে হবে। তারই ইবাদত করতে হবে। এই বিপদের সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সেজন্য তার কাছেই আমাদের আত্মসমর্পন করতে হবে। আমাদের জান-মাল তার পথেই সোপর্দ করতে হবে। তাকে রাজী খুশি করার জন্য বেশি বেশি করে দান-সদকা করতে হবে। অসহায়-গরীব, দুঃখীকে সাহায্য করতে হবে। অন্নহীনের মুখে অন্ন তুলে দিতে হবে। তাহলেই মহান আল্লাহ খুশি হবেন, আমরা তার অনুগ্রহ লাভে সক্ষম হবো। 

এছাড়া এসময়ে আলেম সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক না ছড়িয়ে, পরস্পরের মধ্যে তর্ক ও কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিত মোকাবেলা করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে জনগণকে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য সৎ পরামর্শ ও সময়োপযোগী আমলের তাগিদ দিতেও আলেম সমাজের প্রতি আহ্বান জানান মাওলান মিজানুর রহমান। 

আসন্ন রমজানে তারাবীহ প্রসঙ্গে বায়তুল মোকাররমের এই জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম বলেন, ইসলামী ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ দুই-একদিনের মধ্যে আলোচনায় বসবেন, সিদ্ধান্ত আসবে। তাই এটা নিয়ে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, জুম্মার খুৎবা সম্প্রচার ও তারাবীর বিষয়টা সমর্থন করে শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড মুফতী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, বিষয়টা নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসালামী ফাউন্ডেশন সমন্বয় করে কাজ করছে। তারাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিবেন। 

তিনি বলেন, বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি চলছে যেখানে সবাইকে ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না। ঘরে অবস্থান করেই শত্রুর মোকাবেলা করছে। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বলেন, আপনার ঘরেই একটি গর্তে যদি সাপ থাকে তাহলে কি আপনি ঘর ছেড়ে বাইরে গিয়ে অবস্থান করবেন, নাকি ঘরেই থাকবেন সতর্কতার সাথে? আপনাকে ঘরেই থাকতে হবে চরম সতর্কতা অবলম্বন করে এবং সাপের মোকাবেলা করতে হবে।

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই আলেম বলেন, বর্তমান এই মহামারী পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকেই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। বাকিটা মহান আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি চাইলে তো করোনা নয় অন্য কোনও উপায়েও আমাদের মৃত্যু দিতে পারেন। তবুও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। তিনি ছাড়া আর কেউই নেই আমাদের রক্ষাকর্তা। সেইসাথে এই সময়ে ঘরে বসে বেশি বেশি আমল করতে হবে, নামাজ, রোজা, জিকির, কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। পানাহ চাইতে হবে। চোখের পানি ফেলতে হবে। 

তবে এমন পরিস্থিতিতেও কিছু মানুষ লকডাউন না মেনে, কোয়ারেন্টাইন না মেনে অযথাই বাইরে বের হয়ে আসছে। এতে বাড়ছে ঝুঁকি, বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা, আরও ঘনীভূত হচ্ছে চলমান দুর্যোগ। এ বিষয়ে কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে এই মুফতি বলেন, আসলে আমরা নিজেরা সতর্ক ও সচেতন না হলে পুলিশ-সেনা দিয়ে পিটিয়ে তো আমাদের সতর্ক করা যাবে না। মানুষকে আরও সতর্ক হতে হবে, কেননা এই মুহূর্তে সতর্কতার বিকল্প কিছুই নেই। সেইসাথে সবাইকে প্রত্যেকের জন্য দোয়া করতে হবে, সাহায্য চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। নিশ্চয়ই তিনিই একমাত্র মুক্তিদাতা। তাই ঘরে থাকতে হবে এবং ঘরে বসেই নামাজ-রোজা ও অন্যান্য ইবাদত আমল করতে হবে। 

বিষয়টিতে একমত পোষণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, বৈশ্বিক এই সংকটে কারও একসঙ্গে চলাফেরা করা যাবে না। সবার ভালোর জন্যই ঘরে থাকতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলতে হবে, ঘরেই থাকতে হবে। 

এমন পরিস্থিতে দেশের কর্তৃপক্ষ যেমন- রাষ্ট্রপতিও দেশের সকল জনগণকে নিয়ে হাত তুলে মোনাজাত করতে পারেন। আর সেটা রাষ্ট্রীয় টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করে দেশের আপামর জনগণকে একসূত্রে যোগ করতে পারেন। এছাড়া ইসালামী ফাউন্ডেশন, জাতীয় মসজিদ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মতো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারই এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটটা মানুষের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়। তাই এ বিষয়ে প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে, আর আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি