ধর্ষিতা রোহিঙ্গা নারীদের ছেড়ে গেছে স্বামীরা
প্রকাশিত : ১৯:৪৭, ২৬ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৩১, ২৭ জুলাই ২০১৭
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর `নির্মূল অভিযানের` সময় যেসব রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হন তাদের স্বামীরা তাদের ছেড়ে গেছে। সেনাবাহিনীর চলা এ ‘নির্মুল অভিযানে’ ধর্ষণ থেকে বাদ পড়েনি গর্ভবতী নারীরাও।
সৈন্যদের অভিযান থেকে বাঁচতে পুরুষেরা ওই সময় পালিয়ে গিয়েছিলেন। ফেলে গিয়েছিলেন শিশু, নারী আর বৃদ্ধদের। এসময় সৈন্যদের দ্বারা গণর্ধষণের শিকার হয়েছিলেন এটা জানার পর এসব নারীদের স্বামীরা তাদের ছেড়ে চলে যান। বাকি নারীরা ভবিষ্যত হয়রানির আশঙ্কায় ধর্ষণের কথা জানাতে চাননি অন্যদের।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য মতে, ওই অভিযান এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান। মাসের পর মাস চলা অভিযানের সময় বহু মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।
গণধর্ষণের শিকার এমন একজন নারী আয়মার বাগন। রোহিঙ্গা মুসলিম আয়মার বাগন যখন তার স্বামীকে জানান যে সন্তান প্রসবের কয়েকদিন আগে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাকে গণর্ধষণ করে, তখন তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে অন্যের কাছ থেকে চেয়ে জীবনধারণ করছেন আয়মার।
তিনি মিয়ানমারের বহু রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে একজন, যারা রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর `নির্মূল অভিযানের` সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হন।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিনিধি সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গিয়ে সরকারি লোকজনের অজ্ঞাতসারে একদল রোহিঙ্গা মহিলার সাথে কথা বলেন। যারা সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেসব নারীরা তাদের কাহিনী বর্ণনা করেন ওই সংবাদদাতার কাছে।
আয়মার, কায়ার গং টং নামে একটি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, সন্তান প্রসবের শেষ পর্যায়ের আগে আমাকে ধর্ষণ করা হয়। আমার তখন নয় মাস চলছিল। তারা জানতো আমি গর্ভবতী, কিন্তু তাতেও থামেনি তারা।
২৯ বছরের আয়মার বলেন, এটা ঘটনা ঘটার জন্য আমাকে অভিযুক্ত করে আমার স্বামী। এখন একারণে সে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে আরেক গ্রামে গিয়ে থাকছে।
ধর্ষণের শিকার অপর নারী হাসিন্না বায়গন। দুই সন্তানের মাতা হাসিন্নার বয়স ২০ বছর। তিনি জানান, তাকেও পরিত্যাগ করার হুমকি দিয়েছে তার স্বামী। কারণ গত ডিসেম্বরে তিনজন সৈন্য তাকে ধর্ষণ করেছিল।
সৈন্যদের ধর্ষণ করার এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার।
তবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭৪ হাজার রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ তদন্তকারী এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছে যেসব অভিযোগ জানিয়েছে, সেগুলোর সাথে এ ঘটনাগুলোর মিল রয়েছে।
কায়ার গং টংয়ের রোহিঙ্গারা জানান, তাদের গ্রামে পনেরোটির মত গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনটি ধর্ষণের ব্যাপারে মামলা করলেও কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। কিছু মহিলা সম্মানহানির ভয়ে অভিযোগ জানায়নি।
অবশ্য, মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জাতিগত সংঘাতগুলোতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
সূত্র: বিবিসি।
আর/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন