ধানমন্ডি থেকে টেকনাফ-তেঁতুলিয়া, উচ্ছেদ হলো ফ্যাসিস্ট নিদর্শন
প্রকাশিত : ২০:১৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
![](https://www.ekushey-tv.com/media/imgAll/2020June/15-2502061413.jpg)
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ছয়মাস তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ভার্চুয়াল ভাবে বক্তব্য দিয়েছেন বলে খবর শোনা যায়। অনেক সময় তার অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এবার সরাসরি বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষন দিবেন বলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে জানানো হয়।
গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় শেখ হাসিনা দেশের ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিবেন খবর প্রকাশ হওয়ার পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানের ভিডিও ছবি প্রচারের কর্মসূচি দেয়া হয়।
পরবর্তীতে জনপ্রিয় অনলাইন একটিভিস্ট, লেখক, ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পেইজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, থাকবে না ফ্যাসিবাদের আতুরঘর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার,থাকবে না। তার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়ে পোস্ট দেন আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন। তারা ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’
বুধবার রাত সাড়ে দশটায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে ভাঙচুর-আগুনের পর বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক এবং সারাদেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, শুধু ধানমন্ডির বাড়ি নয়, বুধবার রাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনেও। এছাড়া ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ভোলা ও পিরোজপুরে শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য-ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামফলক।
ঢাকা : শেখ মুজিবের বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপ
ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। সেই উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে (বঙ্গবন্ধু জাদুঘর) ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে করা হয় অগ্নিসংযোগ। পরে একটি ক্রেন, একটি এক্সকাভেটর ও দুটি বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি।
কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা বাড়িটি যেন এক মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিন তলাবিশিষ্ট বাড়িটির ক্ষুদ্র একটি অংশ এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটির আশেপাশে থাকা বাকি স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, ধসে পড়া ছাদ ও রেলিংয়ের ভাঙা অংশ থেকে বেরিয়ে আসা রড সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কেউ আবার হাতুড়ি পিটিয়ে ধসে পড়া ছাদ ভাঙার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ এখানে-সেখানে পড়ে থাকা লোহার রড ও ইস্পাতের অংশ কুড়িয়ে নিচ্ছেন।
শেখ মুজিবের বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপ, পুড়ল হাসিনার সুধাসদন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বুধবার রাত ৮টার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জড়ো হন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ছাত্র-জনতার ভিড়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতা গেট ভেঙে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের তিন তলাবিশিষ্ট বাড়িটির ভেতরে ঢুকে শুরু করে ভাঙচুর। কেউ কেউ লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে অংশ নেন। কেউ কেউ আবার জানালার গ্রিল, কাঠের ফ্রেম ও ফটকের অংশবিশেষ ভেঙে নিয়ে যান।
এ সময় পুরো এলাকা বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত থাকে। ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই কর’- ইত্যাদি স্লোগান শোনা যায়।
ভেতরে যখন ভাঙচুর চলছে তখন ভবনটির বাইরে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। তাদের কেউ কেউ বাড়ির সামনের পরিস্থিতি দেখছিলেন, অনেকে মোবাইলে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে রাখছিলেন।
সুধাসদনে আগুন
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ভবনটিতে যখন ভাঙচুর চলছিল ঠিক তখন আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডির ৫-এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে কয়েকজন তরুণ এসে তালাবন্ধ সুধাসদনে আগুন লাগিয়ে দেয়। যদিও ৫ অগাস্ট সুধাসদনে এক দফা হামলা হয়। এরপর সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তালা মেরে যান। বুধবার রাতে সেই তালা ভেঙে আগুন লাগানো হয়।
কয়েক ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বললেও দমকল বাহিনীকে সেখানে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে অবস্থান নেন।
গণভবনে অবস্থানকালে এই বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসতেন শেখ হাসিনা। তার পুরো আমল জুড়ে বাড়িটির নিরাপত্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন থাকত।
কিশোরগঞ্জ: আ.লীগের অফিসকে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ অফিসকে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ অফিসের পরিত্যক্ত ভবনটিতে অগ্নিসংযোগ করে এ ঘোষণা দেয় তারা। পরে রাত ১১টার দিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। দীর্ঘ ছয় মাস পর শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পরিত্যক্ত ভবনের দেয়ালে 'পাবলিক টয়লেট' লিখে দেয়।
উত্তেজিত ছাত্র-জনতার উপস্থিতি ও ভাঙচুরের কারণে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও আশপাশের বিপনীবিতানগুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে সড়কে যান চলাচলও সীমিত হয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ: ম্যুরাল ও বঙ্গবন্ধু কর্নার ভাঙলেন আইনজীবীরা
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ এবং জেলা আদালতের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের ম্যুরালটি প্রথমে ভাঙা হয়। এরপর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের ম্যুরালটিও ভাঙা হয়। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসন ভবনের নিচ তলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কর্নারেও ভাঙচুর করে বিএনপির লোকজন।
রংপুর: কারমাইকেল কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর
রংপুরে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা ম্যুরালে লেখা মুছে দিয়েছেন।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর কলেজ রোড লালবাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ জনতার পাশাপাশি অংশ নেন বিভিন্ন ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা।
তারা মূল ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর করেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কারমাইকেল কলেজের ভাস্কর্য বেদির একটি ছবি পোস্ট করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার ভাস্কর্য অক্ষুণ্ন রেখে ফ্যাসিবাদের কবর দেয়া হলো...।’
বেরোবিতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে স্থাপনার নামবদল
এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে স্থাপনার নাম মুছে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম মুছে দিয়ে বিজয় ২৪ হল নামকরণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত 'বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল' নাম মুছে দিয়ে 'মুক্তমঞ্চ' নাম করেন শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে, রাত ১০টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম ফলন মুছে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা হলটিকে বিজয় ২৪ বলে ঘোষণা দেন।
এক রাতেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় শেখ মুজিবের ৩ ম্যুরাল
রংপুরে এক রাতেই বুলডোজার দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্র-জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা নাম ফলকসহ ম্যুরালে লেখা শেখ মুজিবের বাণী মুছে দিয়েছে।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর কলেজ রোড লালবাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হয়ে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা মূল ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর করে এবং স্লোগান দিতে থাকে। পরে রাত পৌনে ১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
এর আগে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভেঙে ক্ষতবিক্ষত করে শহীদ আবু সাঈদের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার সাঁটানো হয়। স্থানটির নামকরণ করা হয় স্বাধীনতা চত্বর।
খুলনা: ‘শেখ বাড়ি’ ভাঙার পর আগুন
খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ‘শেখ বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্র-জনতা। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে বাড়ির ভেতরের অংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। রিকশা-ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহনে করে ওই বাড়ির ইট ও রড খুলে নিয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যায়।
এর আগে নগরীর ২৩ শেরেবাংলা রোডে অবস্থিত শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের ‘শেখ বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে দুটি বুলডোজার নিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে বাড়ির ভেতরের অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
বাড়িটিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ জুয়েল, শেখ সোহেল ও শেখ রুবেল বসবাস করতেন।
সর্বশেষ গত ৪ ও ৫ আগস্ট দফায় দফায় ‘শেখ বাড়ি’ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যুরাল ভাঙচুর
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা।
বুধবার মধ্যরাতে বুলডোজার দিয়ে এটি ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া নগরীর দোলখোলা মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতা দেলোর বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
খুবি সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতা রাতভর বিক্ষোভ মিছিল করেন। মধ্যরাত পর্যন্ত ভাঙার কাজ চলে।
এছাড়া বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু হলের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে জুতা নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা মূল ফটকের দিকে যাওয়ার আগে কিছু বহিরাগতকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তারা একটি ভেকু (বুলডোজার) নিয়ে এসেছিল। তবে, শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভেকু ব্যবহার করে কালজয়ী মুজিব ম্যুরালটি ভাঙার চেষ্টা চালায়। তবে, তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ম্যুরাল ভাঙার কাজ স্থগিত আছে।
কুষ্টিয়া: এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হলো সাবেক এমপি হানিফের বাড়ি
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে বাড়ির গেট ও বাড়ির দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বাড়িটির সামনে আসে এবং মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ হাজারো ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলার সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বৈরাচারীরা রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে। তারা মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই বাংলায় তাদের ঠাঁয় নেই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম চলছে চলবেই।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশত্যাগের খবরে গত ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক এমপি হানিফের বিলাসবহুল আলিশান বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরায়ও ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে জেলা শহরের খুলনা রোড মোড়ে জড়ো হয়ে তারা প্রতিবাদ জানান। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।
বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ম্যুরালটির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান। তারা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা খুলনা রোড মোড়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটির অপসারণ শুরু করেন। এ ছাড়া জেলা পরিষদ চত্বর এবং সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
যশোর: শেখ মুজিবের ম্যুরাল-ভাস্কর্যসহ ৮ নামফলক ভাঙচুর
যশোর জেলা পরিষদ, সদর উপজেলা পরিষদ, যশোর পৌরসভায় নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও মনিহার এলাকায় বিজয় স্তম্ভের প্রাচীরসহ অন্তত ৮টি নামফলক ভাঙচুর করেছে ছাত্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
বুধবার রাত ১০টার দিকে প্রথমে কয়েকজন ছাত্ররা এসে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলে। ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে করে ২৫-৩০ জন যুবক সেখানে আসে। এরপর তাদের হাতে থাকা লোহার পাইপ, হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে।
এরপর তারা জেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভেঙে ফেলে। পরে তারা যায় পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে উদ্বোধক হিসেবে থাকা শেখ হাসিনার নামফলক ভাঙচুর করে।
এসময় তারা যশোর পৌরসভা চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্ধেক ভাঙা ভাস্কর্যটিও পুরোপুরি ভেঙে ফেলে দেয়। ভেঙে ফেলা হয় যশোর ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অফিসের উদ্বোধনী নামফলকও। পরে একে একে তারা শহরের অন্তত ৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা শেখ হাসিনার নামফলক ও মুক্তিযুদ্ধের ‘বিজয় স্তম্ভে’ থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও নামফলক ভেঙে দেয়।
চুয়াডাঙ্গা: শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভাঙচুর
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সদর উপজেলা চত্বরে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এছাড়া বুলডোজার দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্র-জনতা প্রথমে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে যায়। সেখানে স্থাপিত শেখ মুজিব ও ফজিলাতুন্নেচ্ছার মুর্যাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট স্থাপনা হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্র-জনতা। পরে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় পুরো স্থাপনা।
এরপর তারা মিছিল নিয়ে শহরের পৌরসভার মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখানেও শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ভবনের ভেতরে ঢুকে শেখ হাসিনার ছবিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের ছবি ভাঙচুর করা হয়। পরে তারা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর ও জেলা পরিষদ চত্বরে যান। সেখানেও শেখ মুজিবের ম্যুরালে ভাঙচুর চলে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর
সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এবং কোতোয়ালি থানার জামালখান এলাকায় এসব ঘটনা ঘটেছে।
এদিন রাতে চমেক হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র-জনতা। এ সময় মিছিল থেকে হাসপাতাল এলাকার একটি ভবনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া নগরের জামালখান এলাকায় একটি মিছিল থেকে সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের একাধিক ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
কুমিল্লা: সাবেক এমপি বাহারের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
সারাদেশে বুলডোজার কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নগরীর মুন্সেফে অবস্থিত বাহারের তিনতলা বাড়িতে হামলে পড়েন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ সময় বাহারের বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা। তবে বুলডোজার বা অন্য কোনো মেশিন না থাকলেও হাতে থাকা শাবল, লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে অকটেন ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন বাহারের বাড়িটিতে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও ওই বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছিল।
এছাড়া বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরীর রামঘাট এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা মহানগর ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। বিক্ষুব্ধরা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থাকা ইটের গাঁথুনি ভেঙে ফেলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কলেজের প্রধান ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে দক্ষিণ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে ভাঙা হয়।
নোয়াখালী : ‘কাউয়া কাউয়া’ স্লোগানে ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বড় রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িতে হামলা চালান তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার নিজস্ব ফেসবুক পেজ থেকে এই হামলার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে লিখা হয়, ‘নোয়াখালীর বিপ্লবীরা, বুলডোজার নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। মার্চ টু কাউয়া কাদেরের বাড়ি! আজ বেলা ১১টা।’
সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা কেউ বাড়ির ছাদে, কেউ বাড়ির ভেতরে, আবার কেউ বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। তারা ‘নারায়ে তাকবির, কাউয়া কাউয়া’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় তারা বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র, ছাদের রেলিংয়ে ও সামনে থাকা পোড়া একটা গাড়িতে আগুন দেন।
নাটোর: সাবেক এমপি শিমুলের বাড়িতে আগুন দিলো ছাত্র-জনতা
নাটোর সদর আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবন জান্নাতি প্যালেসে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা শহরের কান্দিভিটুয়াস্থ শিমুলের বাসভবনে আগুন দেয়।
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মাইক নিয়ে মিছিল করতে করতে সাবেক এমপি শিমুলের বাড়িতে যায় তারা। সেখানে আগেই পুড়ে থাকা একটি গাড়িতে ও বারান্দায় আগুন জ্বালিয়ে মাইকে গান দিয়ে নাচানাচি করেন তারা।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেই আলোচিত জান্নাতি প্যালেসে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এর পরদিন বাড়িটি থেকে আগুনে পোড়া চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বরিশাল: শেখ হাসিনার ভাইয়ের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর কালীবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনের সামনে বুলডোজার নিয়ে আসে ছাত্র-জনতা। রাত সোয়া ১টার দিকে বুলডোজার চালিয়ে ভাঙা শুরু করে তারা।
প্রথমে ভবনের গেটে সেনাবাহিনী ব্যারিকেড দিয়ে জনতাকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। যদিও সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে বুলডোজার নিয়ে ছাত্র-জনতা সেরনিয়াবাত ভবন কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে। এ সময় সমবেত জনতাকে আওয়ামী বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
বরিশালের কালীবাড়ির এই ভবনটি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পরিষদের মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বোন জামাতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে নিহত হন। এরপর থেকে বাড়িটিতে থাকতেন তার ছেলে ও শেখ হাসিনার ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তবে হাসানাতের বড় ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর তিনিই থাকতেন সেরনিয়াবাত ভবনে। ৫ আগস্ট সাদিক আব্দুল্লাহ পালিয়ে যান। ওইদিন উত্তেজিত জনতা বাড়িটিতে আগুন দিলে সেখানে আটকা পরে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রসহ তিনজন নিহত হন।
আমুর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জনতা
ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর বরিশালের বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাত ২টার দিকে ভবনটি ভাঙা শুরু করে ছাত্র-জনতা। তার আগে দেড়টার দিকে বুলডোজার ও মিছিল নিয়ে ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১২টার দিকে কালীবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর নগরীর জীবনানন্দ দাশ সড়কে অবস্থিত আমির হোসেন আমুর বাসভবনের সামনে আসেন ছাত্র-জনতা। পরে তারা ভাঙা শুরু করেন।
এর আগে সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন ভাঙার সময় সেনাবাহিনী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমির হোসেন আমুর ভবন ভাঙার সময় তেমন বাধার মুখে পড়তে হয়নি ছাত্র-জনতার।
আমির হোসেন আমুর বাড়ি ঝালকাঠি পৌর শহরে হলেও তিনি বরিশালের এই ভবনে থাকতেন। এখানে বসেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।
ভোলা: তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে আগুন
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগে বাড়িটিতে ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ জনতা।
বুধবার রাত পৌনে ১টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর রোডে অবস্থিত তোফায়েল আহমেদের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাড়িটিতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোলাতে এসে প্রিয় কুটির নামের এই বাড়িতে বসবাস করতেন তোফায়েল আহমেদ। বাড়িটিতে বসেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তিনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এখানে আর কেউ আসেননি। বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
পিরোজপুর: আ. লীগ সভাপতি আউয়ালের বাড়িতে আগুন
গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ভাষণকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র-জনতা।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টা থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ জানান তারা। রাত ১২টার দিকে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার ভাই পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেকের বাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার পর থেকে বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল ও বিক্ষোভ করে। রাত ১২টার দিকে একদল ছাত্র-জনতা পিরোজপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে শহরের পাড়ের হাট সড়কের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তার ভাই পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের বাড়ি গিয়ে ভাঙচুর করেন এবং আগুন লাগিয়ে দেয়।
পরে রাত ১টার দিকে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেকের মালিকানাধীন একটি ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। এ সময়ে তাদের আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
পটুয়াখালী: মিছিল নিয়ে এক ম্যুরাল থেকে আরেক ম্যুরাল, ভেঙে চুরমার
পটুয়াখালীতে জেলা পরিষদের সামনে ও র্যাব ক্যাম্প-সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি পৃথক ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থী ও জনতা।
বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধ্যরাতে হঠাৎ করেই জেলা পরিষদের সামনে ভিড় করতে থাকে। এরপর সবাই একত্রিত হয়ে পরিষদের সামনে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে র্যাব ক্যাম্প এলাকার দিকে এগিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে র্যাব ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত ম্যুরালটিতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
সিলেট: বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবের ২ ম্যুরাল
সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরালের স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্রজনতা।
বুধবার দিবাগত রাতে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ম্যুরাল দুটির স্থাপনা সম্পূর্ণরুপে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন ছাত্র-জনতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলার মুখপাত্র মালেকা খাতুন সারা বলেন, সিলেটে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙে দিয়েছে।
পাবনা: ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা
পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেওয়া হয়।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতব্যাপী এসব ঘটনা ঘটে।
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলকও মুছে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ঈশ্বরদী আলহাজ্ব মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে নির্মিত বিদ্বেষ ছড়ানো ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এর আগে রাত ৯টার দিকে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের শহীদ চত্বরে শেষ হয়। পরে সেখানে বড় পর্দায় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
এসএস//
আরও পড়ুন