ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

ধূমপান রোধে নিউজিল্যান্ডকে অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:০৭, ১৬ জুলাই ২০২৪

তামাকের ক্ষতিহ্রাস (টিএইচআর) কৌশলের মাধ্যমে ধূমপান রোধে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে নিউজিল্যান্ড। ২০২৫ সালের মধ্যেই ধূমপানের হার পাঁচ শতাংশ বা তার চেয়েও কমিয়ে আনার পথে এগোচ্ছে দেশটি। ধূমপান রোধে ধোঁয়াবিহীন নিকোটিন পণ্যকে সমন্বিত করার মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড যেভাবে সফলতা পেয়েছে, তা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

“কুইটিং স্ট্রং: নিউজিল্যান্ড’স স্মোকিং সিসেশন সাকসেস স্টোরি” শীর্ষক স্মোক ফ্রি সুইডেনের রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘স্মোক ফ্রি সুইডেন’ একটি ধূমপান বিরোধী আন্দোলন, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক ‘হেলথ ডিপ্লোম্যাটস’ দ্বারা পরিচালিত। 

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধূমপান রোধে সুইডেনকে অনুসরণ করেছে নিউজিল্যান্ড। কারণ তামাকের ক্ষতিহ্রাস কৌশল গ্রহণ করে সুইডেন ইতোমধ্যেই ইউরোপের প্রথম ধূমপানমুক্ত দেশ হিসেবে ধূমপানের হার পাঁচ শতাংশের চেয়ে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। 

ধূমপানের হার কমানোর ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের অগ্রগতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে ক্ষতিহ্রাস কৌশল সংক্রান্ত আইনী ব্যবস্থা ও নীতি প্রণয়ন। সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালের স্মোক-ফ্রি এনভায়রনমেন্টস অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে জনসম্মুখে ধূমপান নিষিদ্ধ করে দেশটি। এছাড়াও বার্ষিক ভিত্তিতে তামাকের ওপর কর বৃদ্ধি করা হয় এ আইনে, যা এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করে। 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র মতো আন্তর্জাতিক কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিউজিল্যান্ডে ধূমপানের প্রবণতা হ্রাসে ব্যাপক অবদান রেখেছে।

তামাকের ক্ষতিহ্রাস কৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে ভেপিংকে সমন্বিত করেছে নিউজিল্যান্ড। দেশটি ২০০৯ সালে ভেপ পণ্যের খুচরা বিক্রেতাদের অনুমোদন দেয় এবং ২০১৯ সালে এ সংক্রান্ত বিধি বিধান প্রণয়ন করে। 'ভেপ টু কুইট' ক্যাম্পেইনের মতো সরকার-সমর্থিত উদ্যোগ এবং ভেপিং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ভেপিংকে ধূমপানের চেয়ে কম ক্ষতিকর বিকল্প হিসাবে প্রচারে অবদান রেখেছে। এ ধরণের জনস্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন ধূমপান রোধে ভেপিংয়ের ভূমিকা তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করে।

নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কম ক্ষতির বিকল্প পণ্য যাতে সীমিত দামে ও সহজে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ও ভোক্তা অধিকার কর্মীদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রমাণনির্ভর ক্ষতিহ্রাস কৌশলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, যা নিউজিল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে বৈষম্যহীন অগ্রগতি এনেছে।

রিপোর্টের প্রধান লেখক ড. মারেওয়া গ্লোভার বলেন, “নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, তামাকের ক্ষতিহ্রাস বিকল্প পণ্য সহজে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হলে ধূমপান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। নিকোটিনের বিরুদ্ধে আদর্শিক বিরোধিতা নয়, বরং সুইডেনের মতো কার্যকরী সরকারি উদ্যোগ ও জনসমর্থনের মাধ্যমেই নিউজিল্যান্ডকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে।“

স্মোক ফ্রি সুইডেন আন্দোলনের নেতা ডক্টর ডেলন হিউম্যান, নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেছেন, "নিউজিল্যান্ড যেভাবে এত দ্রুত ধূমপানের হার হ্রাস করতে পেরেছে, তা থেকেই প্রমাণ হলো যে ধূমপান রোধে আমাদের পদ্ধতিটি কেবল কাজই করে না বরং দুর্দান্তভাবে কাজ করে। আমরা এই অসাধারণ ফলাফল পেয়ে আনন্দিত এবং বিশ্বব্যাপী এ ধরণের ক্ষতি হ্রাস কৌশলের পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাবো।"

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন যে, ধূমপানের হার কমাতে, তথা দেশের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি উন্নত করতে বাংলাদেশেরও উচিত নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের অনুসরণ করা। একই সঙ্গে সে অনুযায়ী একটি টেকসই ক্ষতিহ্রাস কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি