অস্ট্রেলিয়ার দাবানল
ধ্বংসস্তূপ ভেদ করে জেগেছে নতুন প্রাণ
প্রকাশিত : ১৩:০২, ১৩ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৩:১৪, ১৩ জানুয়ারি ২০২০
দাবানলে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন প্রাণের দেখা মিলেছে- সংগৃহীত
কয়েক মাস ধরে পুড়ে ছারখার হয়েছে প্রান্তরের পর প্রান্তর। দিগন্ত ছাড়িয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে যেন শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে মানুষ, প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার প্রাণী। বাঁচার তাগিদে যেন জীবন হাতে নিয়ে ছুটেছে সবাই। নজিরবিহীন দাবানলে এমনই অবস্থায় উপনীত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। কোন কোন অঞ্চলে এখন বনাঞ্চল বলতে অবশিষ্ট কিছুই নেই। প্রায় সাড়ে ছয় মিলিয়ন হেক্টর ভূমি পুড়েছে। এক হেক্টর মোটামুটি একটা ফুটবল খেলার মাঠের মতো। এখনও পুড়ছে বনাঞ্চল। কিন্তু এরই মধ্যে কিছু এলাকায় ছাই ভেদ করে জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ। অল্প অল্প করে গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে ঘাস ও গাছের চারা। এমনকি পুড়ে যাওয়া গাছ থেকেও নতুন পতা গজিয়েছে।
দাবানলে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন প্রাণের দেখা মিলেছে- সংগৃহীত
আলোকচিত্র শিল্পী মারি লোয়ে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঞ্চলের কাছে সমুদ্র তীরবর্তী কুলনারা এলাকায় গিয়ে তুলে এনেছেন তার ছবি। এসব এলাকায় মাটির উপর জমে থাকা আগুনের ছাইয়ের উপর হেঁটে হেঁটে সবুজ ঘাস এবং পুড়ে যাওয়া গাছের গুড়িতে কেবল গজিয়ে ওঠা গোলাপি রঙের কুঁড়ি দেখতে পেয়েছেন। ৭১ বছর বয়সী এই আলোকচিত্রি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার তোলা ছবি পোষ্ট করার পর তা হাজার হাজার বার শেয়ার হয়েছে। ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের মাঝেই মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে এই খবর।
দাবানলে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন প্রাণের দেখা মিলেছে- সংগৃহীত
শখের বসে ছবি তোলেন অবসরে যাওয়া একজন সাবেক যানবাহন প্রকৌশলী। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন আগুনে ছারখার হয়ে যাওয়া প্রকৃতির ছবি তুলতে। কুলনারার সড়ক ধরে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ধুরাগ জাতীয় উদ্যানে থেমেছিলেন।
মারি লোয়ে বলেন, এক ধরনের অতিপ্রাকৃত নীরবতার মধ্যে দিয়ে পুড়ে যাওয়া গাছের গুঁড়িগুলোর পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন আমার পায়ের প্রতিটি ধাপের সাথে সাথে মাটি থেকে বাতাসে ছাই উড়ে যাচ্ছিল। ভয়াবহ আগুনই পারে এমন বিধ্বংসী ছাপ রেখে যেতে।
নিউ সাউথ ওয়েলশের উপকূলের কুলনুরায় বাড়ির কাছে দাবানল কতোটা ক্ষতি করেছে তা দেখতে গিয়ে পথিমধ্যে এই আশা জাগানিয়া ছবিগুলো সেলফোনে তোলেন মারে লো। দাবানলের কারণে ১৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর এলাকার পার্কটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে এ এলাকায় দাবানল হানা দেয়। সেখানে এখন ছাইয়ের ভেতর থেকে গজাতে শুরু করেছে চারা।
প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরব্যাপী এই ঢুরাগ জাতীয় উদ্যানে রয়েছে এমন কিছু প্রজাতির গাছপালা যা শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই জন্মায়।
দাবানলে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন প্রাণের দেখা মিলেছে- সংগৃহীত
এমনভাবে পুড়ে যাওয়ার পরও কীভাবে নতুন কুঁড়ি গজাচ্ছে? লোর ছবিগুলো নেটিজেনদেরও ধন্দে ফেলেছে। তবে এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফায়ার ইকোলজি বিশেষজ্ঞ ড. কিমবারলে সিম্পসন। তার কথায়, এই পুনর্জন্ম খুবই স্বাভাবিক। এই উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোর কয়েক লাখ বছর ধরে আগুনে পোড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে এরকম পরিস্থিতিতে প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে তারা প্রয়োজনীয় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। দুই প্রক্রিয়ায় গাছগুলোর পুনর্জন্ম হয়:
প্রথমত, দাবানলেও কুঁড়ি টিকে থাকে এমন প্রজাতির উদ্ভিদ। লোর ছবিতে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইউক্যালিপটাসের বেশিরভাগ প্রজাতিসহ অস্ট্রেলীয় অনেক প্রজাতির গাছে থাকে এপিকর্মিক্স বাড বা সুপ্ত কুঁড়ি। এসব কুঁড়ি গাছের পুরু বা মোটা বাকলের নিচে বেশ গভীরে থাকে। ফলে দাবানলের সময় আগুনের তীব্র তাপ থেকে নিরাপদ থাকে। একইভাবে অনেক গুল্ম এবং ঘাস মাটির অনেক গভীরে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। ফলে তারা স্বাভাবিক পরিবেশ পেলে দ্রুত গজাতে পারে।
দাবানলে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন প্রাণের দেখা মিলেছে- সংগৃহীত
দ্বিতীয়ত, কিছু উদ্ভিদ প্রজাতির বীজ তাপ-প্রতিরোধী। ফলে প্রচণ্ড তাপেও অক্ষত থাকা বীজ থেকে পরে চারা গজায়। ডা. সিম্পসন বলেন, দাবানলের পর সাধারণত ছোট চারার জন্য খুবই উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কারণ ছাই থেকে প্রচুর পরিমাণে আলো এবং পুষ্টির নিঃসরণ ঘটে। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের পর মাটি থেকে দ্রুত চারা গজানোর ঘটনা খুব স্বাভাবিক। তবে লোর ছবিতে এ তত্ত্বের সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এ ধরনের বীজ থেকে চারা গজাতে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। কিন্তু কুলনারাতে বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়নি।
সূত্র : বিবিসি
এমএস/
এমএস/