নওগাঁয় কমছে ধান-চালের দাম
প্রকাশিত : ১২:৩২, ২০ জানুয়ারি ২০২৪
খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা নওগাঁয় ধান চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত তিনদিন ধরে জেলায় অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর ধান-চালের মূল্য নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হঠাৎ করে জেলার হাট-বাজার মোকামগুলোতে ধান চালের দাম বৃদ্ধি হতে শুরু করে। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ধান চালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নির্দেশনা পাবার পর স্থানীয় প্রশাসনও নড়েচড়ে ওঠে।
এর একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধভাবে ধান-চাল মজুতদারদের সন্ধানে মাঠে নামে প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাইস মিলের গুদাম, ধান-চালের ব্যবসায়ীদের মোকামসহ অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাই ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এসময় ঐসব প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ধানচাল মজুদ রাখার দায়ে ১৫ ব্যবসায়ীকে ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রম্যমাণ আদালত।
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে অবৈধ মজুমদারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করায় নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ৬০ থেকে ২০০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে কমেছে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। তবে খুচরা বাজারে এখনও আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে।
গুদামে অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযানের ভয়ে চালকল মালিক ও ধান আড়তদাররা স্থানীয় বাজার থেকে ধান কেনা কমিয়ে দেওয়ায় ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। এদিকে হঠাৎ করে ধানের দাম প্রতি মণে ৬০ তেকে ৭০ টাকা কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষকেরা।
এদিকে ধান চালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ধান চালের মজুদ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালকলের পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা ও ধান-চাল ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ক্যাপাসিটি অনুযায়ী যে পরিমাণ ধান-চাল মজুত রাখতে হয় তা সব সময় ঠিক থাকে না। বাজারের প্রবাহের কারণে অনেক সময় গুদামে নির্দেশকৃত ধারণক্ষমতার চেয়ে ধান-চাল বেশি মজুত হয়ে যায়। আবার অনেক সময় নির্দেশকৃত ধারণক্ষমতার চেয়ে মজুত কম থাকে। মৌসুমে বেশি ধান-চাল মজুত করে বছরের অন্য সময় ধান-চালের ব্যবসাটা চালু রাখে ব্যবসায়ীরা।
কৃষিপণ্য বিপণন আইন-২০১৮ (সংশোধিত) অনুযায়ী, অটোমেটিক, হাসকিং ও মেজর চালকলের মালিকেরা তাদের পাক্ষিক (১৫ দিন) ছাঁটাই ক্ষমতার ৩ গুন ধান ও ২ গুন চাল ৩০ দিনের জন্য মজুত করতে পারবেন। পাইকারি ও খুচরা ধান-চাল বিক্রেতারা লাইসেন্স ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টন থেকে সর্বনিম্ন ১৫ টন পর্যন্ত ধান ও চাল ৩০ দিনের মজুত রাখতে পারবেন।
নওগাঁর অন্যতম বড় ধানের মোকাম রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাট। ওই হাটে সপ্তাহে ৩ দিন ধান কেনাবেচা হয়ে থাকে। শুক্রবার ওই বাজারের আড়তদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে প্রতি মণ মোটা জাতের স্বর্ণা-৫ ও স্বর্ণা-৫১ (হাইব্রিড স্বর্ণা) ধান মান ভেদে ১২০০ থেকে ১২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন দিন আগেও এসব ধান বিক্রি হয়েছে ১২৬০ থেকে ১২৭০ টাকা মণ দরে।
বোরো মৌসুমের সরু জাতের জিরা ও কাটারি ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩২০ থেকে ১৩৩০ টাকায়। তিন দিন আগে প্রতি মণ জিরা ও কাটারি ধানের দাম ছিল ১৪৫০ থেকে ১৪৬০ টাকা।
জেলা সবচেয়ে বেশি সরু জাতের সুগন্ধী ধান চাষ হয় মহাদেবপুর উপজেলা। মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজীহাটে। ওই হাটের আড়তদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন দিনের ব্যবধানে চিনিগুড়া জাতের সুগন্ধী ধানের দাম প্রতি মণে কমেছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিমণ চিনিগুড়া ধানের বর্তমান বাজারদর ২৩০০ থেকে ২৩৫০ টাকা। তিন দিন আগে দাম ছিল ২৫০০ টাকা।
এদিকে, নওগাঁর সবচেয়ে বড় চালের মোকাম নওগাঁর আলুপট্টি মোকাম ও মহাদেবপুর উপজেলা সদরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা ও সরু জাতের চালের দাম ৫০ থেকে ৬০ পর্যন্ত কমেছে। আর আতপ চালের দাম বস্তায় কমেছে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
নওগাঁর আলুপট্টি চাল মোকামের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ‘মজুতবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে মোকামে চাল কেনা-বেচা প্রায় নেই বলে চলে। আগে যেখানে একেকটা আড়ত থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ট্রাক চাল বিক্রি হতো। এখন সেখানে এক ট্রাকও বিক্রি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী কম দামে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ গুদামে চালের মজুত পেলে যে কোনো মূহূর্তে জরিমানা গুনতে হতে পারে।’
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোঃ গোলাম মওলা বলেন, ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার থেকে জেলার বিভিন্ন ধান-চালের প্রতিষ্ঠানে মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযান থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। ধান-চালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
এএইচ
আরও পড়ুন