ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নওয়াজ শরিফকে সরানোর নেপথ্যে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৯, ২৯ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১০:৩৯, ২৯ জুলাই ২০১৭

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির মামলায় পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত অযোগ্য ঘোষণার পর শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ স্বভাবতই হতাশ ক্ষুব্ধ। মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই আরও একজন সরকারপ্রধানের পদত্যাগের ঘটনা পাকিস্তানজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। নওয়াজ শরিফকে সরানোর নেপথ্যে কে বা কারা- প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।

পাকিস্তানের অতিমাত্রায় স্বাধীন বিচার বিভাগ কি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করল? নাকি এর পেছনে কোনো প্রভাব কাজ করেছে? এ প্রশ্নগুলো ঘুরেফিরে আসছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে।

নওয়াজ সমর্থকদের একটি বড় অংশ মনে করে, নওয়াজকে সরানোর নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন জেনারেলরা। কারণ পাকিস্তানে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব চিরায়ত। পাকিস্তানে কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হোক, এটি কখনোই চায়নি দেশটির সেনাবাহিনী। তাই আগের ১৭ সরকারপ্রধানের মতোই মেয়াদ শেষ না করেই পদত্যাগের মতো বিষাদের পরিণতি মেনে নিতে হল নওয়াজকে।

নওয়াজ সমর্থকরা মনে করেন, সেনা প্রভাবিত পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে না দেয়ার জেনারেলদের দীর্ঘদিনের প্রত্যয়ের অংশ হিসেবেই নওয়াজকে এ পরিণতি বরণ করতে হল। সুপ্রিমকোর্ট নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করলেও নেপথ্যে শক্তি জুগিয়েছেন জেনারেলরা।

দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের পর সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ শুক্রবার সর্বসম্মত এক রায়ে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেন। নওয়াজের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকেও দায়িত্বে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

নওয়াজের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, এ রায় নওয়াজকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র। ২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ। এর আগের দুইবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি তিনি।

এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান নওয়াজ। প্রথমবার ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালেও দুর্নীতির দায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় নওয়াজকে। এবারও মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার মাত্র এক বছর আগে নওয়াজকে সরিয়ে দেয়া হল।

বিবিসি লিখেছে, নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল। তার আগের ১৭ জন প্রধানমন্ত্রীর কেউই তাদের পুরো মেয়াদ কখনও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।

তবে পাকিস্তানের অনেকেই মনে করছেন, নওয়াজ শরিফকে দিয়েই দুর্নীতির চক্র ভাঙার কাজ শুরু করলেন দেশটির উচ্চ আদালত। আবার কারও কারও ধারণা, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যে প্রক্রিয়ায় যুগের পর যুগ বেসামরিক প্রশাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে, এটা তারই একটি অংশ। দুর্নীতির চক্র ভাঙার বদলে এ রায় আসলে একদল নতুন লোকের রাজনৈতিক উচ্চাশা পূরণের পথ খুলল, যেমনটা অতীতেও হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রভাবেই সুপ্রিমকোর্ট নওয়াজের অবৈধ ঘোষণার চিত্রনাট্য লিখেছে। জেনারেলরাই এর নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে।

পাকিস্তান মুসলিম লীগের সমর্থকদের কেউ কেউ মনে করেন, নওয়াজের এ পরিণতির পেছনে দেশটির কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদও জড়িত। এর মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান।

তিনি রায়ের পর বলেছেন, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণায় পাকিস্তানে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে তা শুরু হল।

ইমরানের সমালোচনাও হচ্ছে। পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মির এক টুইটে লেখেন, এ রায় পিটিআইয়ের জন্য নতুন শুরু। তবে তাদের খুব বেশি উদযাপন করা ঠিক নয়। কারণ শিগগিরই আবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। তবে নওয়াজ সমর্থকরা এ রায়ে হতাশ হলেও আগামী বছরের নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

//এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি