ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নওয়াজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৫, ২৯ জুলাই ২০১৭

পানামা পেপারস কেলেংকারির মামলায় পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত অযোগ্য ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নওয়াজ শরীফ। আর এর পর থেকেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন।
 
সর্বোচ্চ আদালতে অযোগ্য ঘোষিত হওয়া নওয়াজ আবারও পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। রায়ের ওপর ভিত্তি করে নওয়াজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ আইনজীবীরাও যেন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।
 নওয়াজের ভাগ্য আসলে কী ঘটতে চলেছে, তা নিয়ে পাকিস্তানের সিনিয়র আইনজীবীরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ আবার বলছেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের আগে প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে আড়ালেই ছিল।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি তারিক মেহমুদ বলেন, সংবিধানের ৬২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে তিনি সাময়িকভাবে, নাকি স্থায়ীভাবে অযোগ্য হবেন, তা স্পষ্ট নয়।
তবে বেশির ভাগ আইনজীবীর মতে, সুপ্রিম কোর্টের অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রে নওয়াজের পুনরায় আসার সম্ভাবনা নেই। কেননা রায়ে নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ না থাকায় আজীবনের জন্যই নওয়াজ অযোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নওয়াজ ও তার মেয়ে মরিয়ম শরিফের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শঙ্কায় পড়লেও দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে এই পরিবারের প্রভাব একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

কারণ, নওয়াজের ছোট ভাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিষয়টি বাস্তবে রূপ নিলে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পর্দার আড়ালে থেকে পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন নওয়াজই।
 
নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে দেওয়া পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে রায় বিস্মিত করেছে দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি আনোয়ার জহির জামালিকে। দেশটির সংবিধানের আর্টিকেল ৬২ ও ৬৩ এর ভিত্তিতে একজন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আজীবনের কীভাবে অযোগ্য হতে পারেন তা বোধগম্যই হচ্ছে না তার। তার মতে, সংবিধানের এই অনুচ্ছেদগুলোর আওতায় জীবনের কোনো একটা সময়ে অযোগ্য ঘোষিত হওয়া কোনো ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে নিজেকে সংশোধন করে আবার যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন।
 

দেশটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রাহিল কামরান শেখ এক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। সংবিধানের ৬৩ অনুচ্ছেদের আওতায় আদালত অবমাননার দায়ে গিলানিকেও অযোগ্য ঘোষণা করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। তবে ২০১২ সালের ১৯ জুন দেওয়া সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে গিলানিকে সুনির্দিষ্টভাবে পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।
 
এ প্রসঙ্গে রাহিল কামরান শেখ বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে নওয়াজ শরিফের ক্ষেত্রে তার অযোগ্যতার নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি।
 
এদিকে পাকিস্তান বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আহসান ভুনের মতে, নওয়াজ শরিফ আজীবনের জন্যই অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। এই মতের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি ২০১৩ সালে সংবিধানের ৬৩ অনুচ্ছেদের আওতায় আবদুল গফুর লাহেরির মামলাটির রায়ের কথা উল্লেখ করেন।
 
আহসান ভুনের মতে, এমন কিছু অযোগ্যতা রয়েছে যা অস্থায়ী এবং ৬৩ অনুচ্ছেদের আওতায় অযোগ্য ঘোষিত হওয়া কোনো ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আবারও যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। তবে সংবিধানের ৬২ অনুচ্ছেদের আওতায় কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে তা স্থায়ীভাবেই হয়।
 
তিনি বলেন, ৬২ অনুচ্ছেদে এমন কোনো সময়সীমার উল্লেখ নেই যে সময়সীমার পর এই অনুচ্ছেদের আওতায় অযোগ্য ঘোষিত হওয়া কোনো ব্যক্তি পুনরায় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
 
পাকিস্তানের সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল তারিক খোখারও বলছেন, নওয়াজ শরিফের অযোগ্যতা সারা জীবনের জন্যই। অন্তত এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এটাই বাস্তবতা।
 
তবে বিষয়টি এখনও পুরোপুরি মীমাংসিত নয় দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তানের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, সংবিধানের আর্টিকেল ৬২(১)(এফ)-এর আওতায় অযোগ্যতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নওয়াজ শরিফের বাকি মেয়াদের জন্য নাকি আজীবনের জন্য সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে। ওই আবেদনটির নিষ্পত্তি হলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
দেশটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ৬২ অনুচ্ছেদে অযোগ্য ঘোষিত হলেও নির্দিষ্ট সময় পরে যোগ্যতা ফিরে পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল; ১৯৭৩ সালে এটা কার্যকর হয়। পরে ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হক ক্ষমতা দখল করে ৬২ অনুচ্ছেদে সংশোধনী এনে সেটি অস্পষ্ট করেন। ফলে এই অনুচ্ছেদে কেউ অযোগ্য ঘোষিত হলে তা স্থায়ী, না সাময়িক, সেটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
তবে নওয়াজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলুক আর না-ই মিলুক, তার ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলে পরোক্ষভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রেই থাকবেন নওয়াজ। আর এমনটা হওয়ারই এখন সম্ভাবনা বেশি। কেননা নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট দেশটির জাতীয় পরিষদে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ। ৩৪২টি আসনের মধ্যে এই জোটের দখলে রয়েছে ২০৯টি আসন। এ হিসেবে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অনায়াসেই ক্ষমতায় থাকতে পারবে এই জোট। আর দলের নেতৃত্ব এখনও নওয়াজ শরিফের হাতে থাকায় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কর্তৃত্বও রয়েছে তার হাতেই। আর উপমহাদেশের পরিবারকেন্দ্রীক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নওয়াজ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ভাইকেই বেছে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
 
কাজেই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পার করে আসা নওয়াজ শরিফকে রাজনৈতিক অঙ্গনে একেবারে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়ার মতো সময় এখনও আসেনি বলেই মনে করছেন অনেকে। সূত্র: ডন ও দ্য নিউজ।

//এআর



Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি