ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

নখে স্বাস্থ্যবার্তা, নখের চিকিৎসা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০২, ৯ মে ২০২০ | আপডেট: ০৩:০৩, ৯ মে ২০২০

Ekushey Television Ltd.

আপনি কি জানেন নখ আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক কিছুই বলে দিতে পারে? আপনার নখ ভাল করে খেয়াল করে দেখুন তো এ রকম সাদা অর্ধচন্দ্র দেখতে পান কিনা? সবচেয়ে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাবেন বুড়ো আঙুলের নখে। আর এই অর্ধচন্দ্রই আমাদের নখ ভাল রাখার জন্য সবচেয়ে জরুরি। এর পোশাকি নাম লুনুলা।

এই লুনুলা যদি কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে আপনার নখের বৃদ্ধিই চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই লুনুলা দেখতে সাদা লাগলেও আসলে এর রং মাংসের মতো। কারণ লুনুলা নখেরই অংশ মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। এই অংশের উপরই বসে থাকে নখ। তাই উন্মুক্ত থাকলে লুনুলা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অংশ।

নখের ঠিক নীচে থাকা চামড়ার একেবারে উপরের এই অংশ রক্তনালীকে ঢেকে রাখে। যদি লুনুলার আবরণ না থাকতো তা হলে অংশে ক্রমাগত যন্ত্রণা হতো। যদি নখ সম্পূর্ণ তুলে ফেলা হয় তা হলেও কিন্তু থেকে যাবে লুনুলা।

প্রত্যেকের নখের নীচেই থাকে লুনুলা। কারও হাতে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়, আবার কারও হাতে বোঝা যায় না।

এ বার জেনে নিন এই লুনুলা আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কী বলে। সাধারণত লুনুলা যদি খুব ছোট হয় তা হলে সেই ব্যক্তি রক্তাল্পতা বা অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। আবার খুব বেশি হজমের সমস্যা হলেও ছোট হতে পারে লুনুলা। যাদের লুনুলা ছোট হয় তারা অনেক বেশি ক্লান্ত বোধ করেন।

যদি লুনুলা নীলচে হয় তা হলে আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। লালচে হলে আপনার হার্টের সমস্যা থাকতে পারে।

আইভরি রঙের লুনুলা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে নখের প্রায় এক পঞ্চমাংশ জুড়ে থাকে লুনুলা। যদি দেখেন আপনার লুনুলা ছোট হয়ে আসছে ও রং গাঢ় হচ্ছে তা হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

নখের কোণা উঠা সমস্যার সমাধান
নখের কোণা উঠা একটা সমস্যা এখন প্রায়ই দেখা যায়। নখের কোণা উঠলে অঙ্গুলগুলো যেমন বিশ্রী দেখা যায় তেমনই স্বাস্থ্যের জন্যও বিরুপ প্রভাব পড়ে। আমাদের নখের নিচের মাংস খুবই স্পর্শকাতর। তাই একটু সামান্য সমস্যাতেই প্রচণ্ড ব্যথা ও ঘা হয়। হুট করেই নখের কোণায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলেন। একটু খেয়াল করতেই দেখলেন যে বেকায়দা ভাবে নখ বৃদ্ধি পেয়ে মাংসের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছ। আর এরকম অবস্থায় নখ কাটা অসম্ভব কেননা তাতে মাংস কাটা পড়বে। চলুন তাহলে জেনে নেই নখের কোণা উঠা সমস্যা প্রতিরোধ করার সহজ উপায়।
এক. হাত বা পা উষ্ণ লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন মিনিট দশেক। যতটা গরম সহ্য করতে পারেন, ততটা গরম পানি নেবেন।
দুই. কাজ শুরুর আগে মেনিকিউর সেট গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিন।
তিন. তারপর হাত-পা ভালো করে মুছে নিন। মুছে নেয়ার পর যত্নসহকারে নখ কাটুন। বেড়ে ওঠা বাড়তি নখ ও তার আশেপাশে যতটা সম্ভব কেটে ফেলুন।
চার. এবার রয়ে যাওয়া বাড়তি নখ চিমটার সাহায্যে সামান্য উঁচু করে ধরুন এবং আরেকটি চিমটার সাহায্যে সামান্য একটু তুলো নখের নিচে গুঁজে দিন। খুব সাবধানে কাজটি করুন। এই কাজটি আপনার নখে ব্যথা হতে দেবে না।
পাঁচ. যতদিন নখে বড় না হচ্ছে আর আপনি কেটে যন্ত্রণাদায়ক বাড়তি কোণা বাদ দিতে না পারছেন, ততদিন পর্যন্ত এভাবেই তুলো দিয়ে রাখুন। দিনে দুই-একবার জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে তুলো বদলে দেবেন।
ছয়. যদি ইতিমধ্যেই ইনফেকশন হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান। এই পদ্ধতি অবলম্বন করবেন না।
সাত.  হাত-পা সর্বদা পরিষ্কার রাখুন এবংএরকম পরিস্থিতিতে মোজা পরিধান করবেন না।

কুনি নখের যন্ত্রণা সারানোর উপায়
পায়ের নখে ফাংগাসের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। আর কুনি নখের যন্ত্রণাও কিন্তু কম নয়। ধুলোবালির সাথে কাদা নখের কোণায় ঢুকে গিয়ে জমে থাকে। তারপর সেখানেই জন্ম নেয় নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া।
যা থেকে নখের কোণায় তৈরি হয় পুঁজ, ফুলে লাল হয়ে যায়। আর সেইসাথে যন্ত্রণা তো আছেই। অনেকে একে কুনি নখও বলে থাকেন।
এ সময় নখের রঙ হলদেটে হয়ে দেখতে বিশ্রী লাগে। তবে তিনটি সহজ ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
জেনে নিন সেগুলো-
হলুদ : কয়েক টুকরো কাঁচা হলুদ কেটে নিয়ে অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলে দিয়ে ফোটান। এবার এক টেবিল চামচ হলুদের সাথে তেল ও তিন টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে নিন।

এই মিশ্রণ দিনে তিনবার আক্রান্ত জায়গায় লাগান। মনে রাখবেন, হলুদ খুব ভালো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।
বেকিং সোডা : হাল্কা গরম পানি বেকিং সোডা মিশিয়ে সেই পেস্টটি আক্রান্ত নখের উপর লাগান।
শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। বেকিং সোডার অ্যাল্কালাইন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
ভিক্স : সর্দি, মাথাব্যথায় ভীষণ ব্যবহৃত এ মলমটি সহজে ফাংগাস তাড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায়। দিনে দুইবার আক্রান্ত নখে ভিক্স লাগান। এরপর সেই নখে গজ দিয়ে একটি ব্যান্ডেজ করে রাখতে পারেন।

নখ মজবুত রাখতে ৫ খাবার
সুস্থ জীবন ধারণের জন্য উচ্চ পুষ্টিমূল্য সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন। শরীরের যত্ন নেওয়ার সময় আমরা প্রায়ই আমাদের নখের যত্ন নিতে ভুলে যাই। একথা অস্বীকার করা সম্ভব নয় যে আমাদের নখ দেখে আমাদের শরীরের অবস্থা বোঝা সম্ভব হয়। নখ ভালো রাখার জন্য যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি নখের যত্নের জন্য উপকারী। এখানে ৫টা খাবারের উল্লেখ করা হলো যেগুলো আমাদের নখ মজবুত করতে সাহায্য করে।

মাছ-
সুস্থ মজবুত নখের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্যগ্রহণ প্রয়োজন। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ আমাদের দেহের জন্য অন্ত্যন্ত জরুরি। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, প্রোটিন এবং সালফারের উৎকৃষ্ট উৎস। মাছ নখ মজমুত এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে।

ডিম-
ডিম ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ট উৎস। প্রোটিন ছাড়াও ডিমে ভিটামিন বি12, বায়োটিন এবং আয়রন থাকে যা নখকে পুরু করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম যোগ করুন আর ফলাফল দেখুন!

সবুজ কড়াইশুটি-
এগুলো দেখতে ছোট হলেও এর পুষ্টিগুণ প্রচুর। সবুজ করাইশুটিতে প্রোটিন, বেটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি থাকে। এগুলো নখের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ওটস-
ওটসে কপার, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি থাকে যা আমাদের শরীরের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। আর নখের যত্ন নিতে গেলে আমাদের শরীরের যত্ন নেওয়াও প্রয়োজন।

সবুজ শাকসবজি-
ক্যালশিয়াম, আয়রন, অ্যান্টিওক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি পুষ্টির পাওয়ার হাউজ। পালংশাক, ব্রকলি ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করলে আপনার নখ খুব সুন্দর এবং মজবুত হবে।

সুতরাং, আপনি যদি দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস ছেড়ে নখ বড় করার কথা ভেবে থাকেন তবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এইসমস্ত খাবার যোগ করুন আর নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যান!

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।  দ্য হেলথ সাইট।  এনডিটিভি।
এস ইউ এ
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি