নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বৈশাখের প্রস্তুতি
প্রকাশিত : ১৯:০২, ১২ এপ্রিল ২০১৯
দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই বাঙালি বরণ করে নেবে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬। বৈশাখের প্রথম দিনটিকে ঘিরে হালখাতা, পান্তা ইলিশ, গান-বাদ্য আর উৎসব আমেজে মেতে ওঠা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য।
সমাজের সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে বৈশাখ এক নতুন চেতনা নিয়ে আসে। পুরনো সকল গ্লানি দুঃখ পেছনে ফেলে নতুনকে বরণ করে নিতেই বছর শেষে আবার আসছে সেই বৈশাখ। সারাদেশের ন্যায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে বৈশাখের প্রস্তুতি।
দিনটিকে উদযাপনের লক্ষ্যে আয়োজনের দায়িত্ব পড়েছে চারুকলা বিভাগের উপর। নানা রকম ঐতিহ্যমুখী নিদর্শন গড়তে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। তাদের নানা দিক-নির্দেশনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন চারুকলার শিক্ষকরা।
এবারের বৈশাখের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন ধরণের প্রতিকৃতি। সঙ্গীতের মূর্ছনা এবং নানা আড্ডার মধ্য দিয়েই পুরোদমে চলছে কাজ। ক্ষণে ক্ষণে চলছে তুমুল আড্ডাও। এছাড়া বৈশাখের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দীর্ঘ পনের দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে চারুকলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা তৈরি করা বিভিন্ন স্ট্রাকচারগুলো। যেগুলো ঐতিহ্যগতভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে।
দিন-রাত নিরলস পরিশ্রমে বাঁশের চটা বেঁধে বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন বিশাল আকৃতির পেঁচা, ঘোড়া, টেপা পুতুল,ময়ূরপঙ্খী নাও, পালকী, শখের হাঁড়ি, বিভিন্ন মুখোশ, ডালা, পাখা, পটচিত্র কাগুজে বাঘসহ দারুণ সব মোটিভের কাঠামো। এগুলোর গায়ে রঙিন কাগজ বসিয়ে এতে আনন্দের সঞ্চার করবেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছরের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান একটি মোটিফ থাকবে। এবারের প্রধান মোটিফ হবে ‘ময়ূরপঙ্খী নাও’।
ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি পেয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্বঐতিহ্যের অংশ এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সারাদেশে ও বিশ্বদরবারে জানান দিতে এবার নানান আয়োজন গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এবারকার বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নগরবাসী বর্মন ও সদস্য সচিব করা হয়েছে কল্যানাংশু নাহা।
বৈশাখী আয়োজন ও এর বার্তা নিয়ে কল্যানাংশু নাহা জানান,‘সকল অশুভ চিন্তার নিপাত যাক এরই অন্তঃস্থলগত মনমানসিকতাকে ধারণ করে। বিবেক এবার জাগ্রত হোক প্রতিটি বাঙালির। আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। অসাম্প্রদায়িক ও অহিংস,সহনশীল,নারীবান্ধব,ও সুবিবেচক সমাজ গঠনে এটি একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়াক বিশ্বের বুকে। বাঙালি জাগুক তার পুরোনো ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক আবহের বাংলার প্রতিচ্ছবিতে। জয় হোক চিরায়ত বাঙালিয়ানার।’
পহেলা বৈশাখ-১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষ্যে দু’দিন ব্যাপি আয়োজনের প্রথম দিনে চৈত্র সংক্রান্তিতে থাকছে চারুকলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপঙ্কর বৈরাগীর সার্বিক নির্দেশায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিনিত নৃত্যপালা, টিপিএস বিভাগের প্রভাষক মাজহরুল হোসেন তোকদার (বাঁধন তোকদার) এর নির্দেশনায় শিক্ষকদের অভিনীত যাত্রাপালা ‘বাঙালি’ এবং ফানুশ উৎসব।
দ্বিতীয় দিনের প্রধান আয়োজনে বৈশাখকে কেন্দ্র করে ‘চৈত্র সংক্রান্তির’ দিন থেকে বৈশাখের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপি চলবে বৈশাখী মেলা,পান্তাভাত খাওয়া, গ্রামীণ বিভিন্ন খেলা, যেমন খুশি তেমন সাজো। এছাড়া ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকানগুলোতে স্থানীয়রা হালখাতাও খুলে থাকে। সারাদিনভর আয়োজনের মধ্যভাগের সাংস্কৃতিক আয়োজনেও থাকছে বৈচিত্র্য।
বৈশাখ উদযাপন কমিটির সাংস্কৃতিক আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সঙ্গীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক সরকার জানান, এবার একেবারেই ভিন্নভাবে বৈশাখের আয়োজন রাখা হয়েছে সাংস্কৃতিক পর্বে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পরিবেশনা রাখা হয়েছে বৈশাখী আয়োজনে নতুনত্ব দেবার জন্য। সেজন্য চলছে নিয়মিত পরিচর্যা ও অনুশীলন।
এছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল্ জাবির এর নির্দেশনায় যাত্রাপালা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।
বৈশাখ বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে এসেছে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর সম্ভাবনার বারতা নিয়ে। এভাবেই বাঙ্গালীর মননে লালিত হয়ে আসছে,আসবে বৈশাখ। তাইতো বাঙ্গালী মন নেচে গেয়ে বলে উঠে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’
কেআই/
আরও পড়ুন