ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নতুন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর বর্ণাঢ্য জীবন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৫৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ২৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। নতুন এই আইজিপির বর্ণাঢ্য জীবন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর জন্ম চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের মান্দারী গ্রামে। নিজ জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে তিনি পিএইচডি অর্জন করে। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল, ‘বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা’।

ড. জাবেদ পাটোয়ারী ষষ্ঠ বিসিএসে (১৯৮৪) পুলিশ ক্যাডারে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি সচিব পদমর্যাদায় অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হিসেবে পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান হিসেবে কর্মরত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারা জীবনের ওপর লেখা বই ‘কারাগারের রোজনামচা’র বিভিন্ন ‘নথিপত্র’ সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশ বাহিনীতে একজন মেধাবী ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। প্রচারবিমুখ ও মৃদুভাষী এ কর্মকর্তা সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন চাকরি করে আসছেন। এসবির প্রধান হিসেবে বর্তমান পদে একটানা ৯ বছর কর্মরত আছেন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এসবির রেকর্ড রুমে বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে ৬৬ হাজার ক্লাসিফাইড গোয়েন্দা তথ্য সংরক্ষিত আছে। জাবেদ পাটোয়ারী এসবির শীর্ষ পদে আসার পর গুরুত্বপূর্ণ এই দলিলাদি বিশেষভাবে সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা দেশের গণ্ডির বাইরে যুক্তরাজ্যের লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘অপরাধ বিচার এবং পুলিশ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘অপরাধ বিচার শিক্ষা’ বিষয়ে কৃতিত্বের সনদ অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের পুলিশ স্টাফ কলেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ন্যাশনাল একাডেমি থেকে উচ্চতর পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সাফল্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘যুক্তরাজ্য-দক্ষিণ এশিয়া নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণমূলক প্রোগ্রাম’ও সম্পন্ন করেছেন তিনি।

দীর্ঘ ৩২ বছরের গৌরবোজ্জ্বল কর্মজীবনে ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি বিশেষ শাখার অ্যাডিশনাল আইজি (গ্রেড-১), সিআইডির অ্যাডিশনাল আইজি, পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল আইজি, রাজশাহী ও খুলনার পুলিশ কমিশনার, সিআইডির ডিআইজি, নোয়াখালী ও রংপুরে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট, পুলিশ স্টাফ কলেজের পরিচালক, ঢাকার নগর বিশেষ শাখার এসএস, ডিএমপির এডিসি, আইজিপির স্টাফ অফিসার, সিলেটে অ্যাডিশনাল এসপি, রাষ্ট্রপতির লিয়াজোঁ অফিসার (পুলিশ) এবং নেত্রকোণার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাবেদ পাটোয়ারী কাজ করেছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও। সুদানে সহকারী পুলিশ কমিশনার (অ্যাক্টিং), কসোভোতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা ইউনিটের প্রশাসন প্রধান, সিয়েরালিওনে ইউএন সুরক্ষা ফোর্সের অপারেশন প্রধান ও ক্রোয়েশিয়াতে স্টেশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১০ ও ২০১১ সালে জাবেদ পাটোয়ারী দুইবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পুলিশ পদক বিপিএমে ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি দুবার আইজিপি ব্যাজ লাভ করেন। তিনি বিশেষ শাখায় স্ব-উদ্যোগ ও চেষ্টায় বিভিন্ন নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতিসহ সব বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন। তিনি রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমি, ঢাকা পুলিশ স্টাফ কলেজ, ঢাকা ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুল, ঢাকা স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স স্পেশাল ব্রাঞ্চ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ে একজন রিসোর্স পারসন হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করেন।

ড. জাবেদ পাটোয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ‘ভিক্টিমোলোজি অ্যান্ড রেস্টোরেটিভ জাস্টিস’ বিষয়ে এবং মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ’-এর একজন ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি।

পারিবারিক জীবনে ড. জাবেদ পাটোয়ারী তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম হাবিবা হোসেন। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।

এসি/ টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি