নতুন ইপিসি পেতে প্রয়োজন টেলিটকের জোর আবেদন
প্রকাশিত : ২১:১৫, ২১ মার্চ ২০২৫

টেলিটকের ফোরজি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে টেলিটক। টেলিটক কি পুরাতন তিন কোম্পানির মধ্যে থেকেই একজনকে নির্বাচন করবে, না কি তাদের সকলের মধ্যে নতুন করে আবার দরপত্র আহবান করবে, না কি আগের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানদের মধ্যে দরপত্র আহবান করবে এই বিষয়গুলো নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজছে টেলিটক।
তাই বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)-এর পরামর্শ চেয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয় টেলিটক। এর প্রেক্ষিতে গত ২ মার্চ টেলিটককে চিঠির মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানিয়েছে বিপিপিএ। বিপিপিএ পরিচালক (উপসচিব) সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে বলা হয় এরূপ অবস্থায় সকল দরপত্র বাতিলের নিয়ম পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালায় উল্লেখিত আছে। এর সাথে আরও বিষদ নীতিমালাও দেয়া আছে। সেই অনুযায়ী টেলিটক অগ্রসর হতে পারে। পাশাপাশি যেহেতু এটি জি টু জি’এর আওতাভুক্ত তাই এই বিষয়ে ইআরডির মতামত গ্রহণ করতে পারে ।
এই প্রক্ষাপটে বিদ্যমান অযোগ্য ইপিসি কোম্পানিগুলোকে বাদ দিয়ে উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন আরও নতুন ইপিসি কোম্পানির তালিকার জন্য টেলিটক ইআরডি-কে সরাসরি আবেদন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি কোম্পানি দরপত্রের নিয়ম ভেঙ্গেছে। যার ফলে এই তিন কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন কোম্পানিদের মধ্যে দরপত্র আহবান করা যৌক্তিক। তাদের মতে, কারসাজির নেতৃত্ব দেয়া সিএমইসি যদি আবারও দরপত্র আহবানের সুযোগ পায় তাহলে সংকট ঘনীভূত হবে। সঠিক সিদ্ধান্তই টেলিটককে এই সংকট থেকে বাঁচাতে পারে।
উল্লেখ্য, চায়না মেশিনারীজ পূর্বেও এশিয়াতে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে চীন সরকারের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। ২০১৩ সালে বিটিসিএলের ইন্সটোলেশন অফ এনজিএন বেসড, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ (এনটিএন) কাজ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছিল (সিএমইসি) কিন্তু সেই মূহুর্তে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে দুর্নীতির কারণে চীন সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এলে বিটিসিএলও প্রায় ১৮২ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি ভেস্তে যায়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি জানিয়েছে, ‘‘নতুন করে টেলিটক দরপত্র আহবান করবে কি না সেটা টেলিটকের এখতিয়ার। এই বিষয়ে টেলিটক যদি পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে নতুন ইপিসি কোম্পানির নাম চেয়ে আবেদন করে তাহলে আমরা চীনা দূতাবাসের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব”।
সরাসরি নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম চেয়ে আবেদন করবে কি না এই বিষয়ে টেলিটক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী বলেন, “বিপিপিএ’র পরামর্শ অনুযায়ি এখন ইআরডিকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারি নিয়ম অনুসরন করছি। এ নিয়ে ইআরডির যে পরিপত্র আছে সেটা পালন করা হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে ইআরডি সিদ্ধান্ত দেবে।”
বিগত অনেকগুলো বছরে বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে। গত চার বছরে চীন দুই দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ বাংলাদেশকে দিয়েছে।
দুই দেশের প্রকল্পে উম্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশ বা অন্য দ্বিপাক্ষিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে অর্থদাতা দেশ অনেক সময় কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ করে দেয়ার প্রচলন আমরা দেখতে পাই, তবে একই প্রতিষ্ঠান বা সিন্ডিকেট বারবার সামনে আসলে, প্রকল্পের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের উপর চাপ থাকে, এমনটাই দেখে আসছি বরাবর। এর চেয়ে আমি বেশি কিছু বলতে পারবো না, প্রকল্প না দেখে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের, ডিরেক্টর জেনারেল মোঃ রেজাউল কবিরকে এই পুরো বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, “এই বিষয়ে কোন দাপ্তরিক তথ্য আমাদের কাছে এখনও আসেনি।”
উল্লেখ্য, টেলিটকের ফোরজি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে চীন যোগান দিচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে নয়শ কোটি টাকা । জি টু জি প্রকল্প অনুযায়ী, এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-কে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারিত করে দেয় চীন। কিন্তু দরপত্রে অংশ গ্রহণের নিয়ম ভাঙার কারণে তাদের সকলকেই কারিগরি মূল্যায়নে অযোগ্য হিসেবে বাতিল করা হয়। এদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেটের গুঞ্জন উঠেছে।
/আআ/
আরও পড়ুন