নতুন করে প্লাবিত রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা
প্রকাশিত : ১১:৪২, ২৩ আগস্ট ২০২৪
কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কয়েকটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতিসহ জেলার রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কয়েকটি স্পটে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে।
জেলার বাঘাইছড়ি,কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে লংগদু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, এতে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে শত-শত পরিবার।
জেলার কাউখালী উপজেলার ইছামতি ও কাউখালী খালের পানি বেড়ে ডুবে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি ঘর। উপজেলার রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের ঠান্ডাছড়ি এলাকায় মুল সড়কের কিছু অংশে উঠে পড়েছে বন্যার পানি। এতে যানবাহন চলাচল কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে।
তাছাড়া রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন মহালছড়ি এলাকায় সড়কে পানি থাকায় রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আন্তঃজেলা যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলাধীন সাপছড়ি ইউনিয়ন, মানিকছড়িসহ কয়েকটি পাহাড়ী এলাকায় পানি বেড়ে মানুষের ঘরবাড়ীতে ঢুকে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিভিন্ন ফসলী জমি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা : বাঘাইছড়ি উপজেলাতেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভা প্রশাসক শিরিন আক্তার বাসসকে জানান, অব্যাহত পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিতে ‘উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে । উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলার লংগদু উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া কাচালং নদীর শাখা নদীসহ পাহাড়ী ঢলের কারনে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে উপজেলার কয়েকশত পরিবার। অনেকেই তাদের পরিবার নিয়ে পাহাড়ের উচু স্থানে অবস্থান নিয়েছে, বন্যার কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
স্থানীয়রা জানান, পানিবৃদ্ধির কারনে উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের ৬/৭ নং ওয়ার্ডের লেমুছড়িসহ তৎসংলগ্ন বেশকিছু এলাকার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের আবাদী জমি।
লংগদু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন মাহমুদ বাসসকে জানান, মাইনী নদী ও কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিসহ পাহাড়ী ঢলে উপজেলার বেশ কিছু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সবধরনের সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সার্বক্ষনিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে, প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র।
পাহাড়ধসের ঝুঁকি এড়াতে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ যৌথ সমন্বয় টিমের নেতৃত্বে রাঙ্গামাটি শহরের শিমুলতলী, রূপনগরসহ বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শনসহ মাইকিং করে স্থানীয়দেন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
জেলার সার্বিক দুর্যোগ ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বাসসকে জানান, জেলার বাঘাইছড়ি,কাউখালী,লংগদুসহ কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটলেও কোথাও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। রাঙ্গামাটি সদরে পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার শহর এলাকায় ৭৫টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ রাঙ্গামাটি জেলা উপজেলায় সর্বমোট ২৬৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রযেছে বলে জানান তিনি।
বর্তমান দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরী সমন্বয়সভা করা হয়েছে এবং জেলার সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা রাখা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন ইয়ুথ সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কাজ করছে।
সূত্র: বাসস
এসবি/
আরও পড়ুন