নতুন ছাত্র সংগঠন থেকে পদত্যাগ করলেন রিফাত রশীদ
প্রকাশিত : ২০:৫১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সদ্য ঘোষিত নতুন ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে পদত্যাগ করেছেন যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে নাম আসা রিফাত রশীদ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে রিফাত রশীদ লিখেছেন, “অনুমতি ব্যতীত কমিটিতে নাম রাখায়” পদত্যাগ করেছেন তিনি।
ওই পোস্টে রিফাত আরও লিখেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই কমিটিতে আমার নাম ঘোষণা করার আগে আমার থেকে কনফার্মেশন নেয়া হয়নি। দফায় দফায় আলোচনা হয়েছিলো কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলত অনুমতি ব্যতীত আমার নাম কমিটিতে রাখায় আমি এই পদ থেকে সরে এসেছি।”
পাঠকদের জন্য রিফাত রশীদের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল-
“গতকালকের ঘটনা স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। তার আগেই জানিয়ে রাখি, নতুন ছাত্রসংগঠন "গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ" এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই কমিটিতে আমার নাম ঘোষণা করার আগে আমার থেকে কনফার্মেশন নেয়া হয়নি। দফায় দফায় আলোচনা হয়েছিলো কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলত অনুমতি ব্যতীত আমার নাম কমিটিতে রাখায় আমি এই পদ থেকে সরে এসেছি।
"গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ" একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগ হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুরো সাংগঠনিক সেট আপ, লিডারশীপ থেকে শুরু করে বৈছাআ এর পেজকেও নতুন ছাত্র সংগঠন এর প্রোমোশনে কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু বৈছাআকে একটি সংগঠন আকারে যারা এতোদিন টেনে নিয়ে গেছে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি, তাদের অংশগ্রহণ ছিলো না খুব একটা ছাত্র সংগঠন গঠনের ক্ষেত্রে। বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সহ সবার কালেক্টিভ একটি ক্ষোভ সেখানে উপস্থিত ছিলো। সবার প্রশ্ন ছিলো, "যদি স্বতন্ত্র উদ্যোগ হয় তাহলে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' সেট আপকে কেনো ব্যবহার করা হচ্ছে ছাত্র সংগঠন নির্মানের ক্ষেত্রে? এই প্রশ্নটাই বারবার করা হয়েছে।
পলিসি ছিলো ছাত্র সংগঠন নির্মানে ঢাবি ক্যাম্পাসকে যারা সংগঠিত করেছে এবং বৈষম্যবিরোধীকে যারা সংগঠিত করেছে তাদের মাঝে টপ ৮ টা পোস্ট এর লিডারশীপ এ সমন্বয় করা হবে। পলিসি মেকিং যে পলিট ব্যুরো তৈরি হবে তারা হবে ঢাবি ও কেন্দ্রের অর্গানোগ্রাম। এক্ষেত্রে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, ঢাবি ব্যতীত অন্যান্য পাবলিক ইউনিভার্সিটি, সাত কলেজ সহ অন্য কারোই অংশগ্রহণ ছিলো না। এইজন্যই একটা কালেক্টিভ ক্ষোভ জন্ম নেয় সবার মাঝে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রেজেনটেটিভরা ইন্টার্নালি ও এক্সটার্নালি অভিযোগও জানায়, সাত কলেজ থেকে আসা বৈছাআ নির্বাহী সদস্য মইনুল-সিনথিয়া থেকে শুরু করে সাত কলেজের প্রায় সব লিডারশীপই নতুন ছাত্র সংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পজিট করার জন্য যেই সার্চ কমিটি ছিলো সেইটা প্রাইভেটকে রিপ্রেজেন্ট করে না বলে প্রাইভেট এর শিক্ষার্থীরা বারবার অভিযোগ এনেছে। সাত কলেজ অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট তিন গ্রুপই নিজেদের টপ চার/ছয় পোস্টের একটায় নিজেদের রিপ্রেজেন্ন্টেটিভ চেয়েছিলো। ফলত একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। নতুন ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রে বৈছাআ টপ চার এ দু'জন লিডারশীপ চেয়েছিলো, এবং টপ ৬ এ চারজন চেয়েছিলো। টপ চার পোস্টের দুই পোস্টে জাহিদ আহসান ও আমি, এবং বাকি দুই পোস্টে তৌহিদ সিয়াম ও নাঈম আবেদীনকে চেয়েছিলো। টপ পোস্ট বাদ দিয়ে সাত কলেজ, প্রাইভেট, অন্যান্য পাবলিক সহ বাকিদের ক্ষেত্রে কতোজন প্রতিনিধি থাকবে এইটা নিয়ে বার্গেইন চলছিলো। বৈছাআ থেকে আমার এবং নাঈম আবেদীনকে পজিট না করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের জন্ম নেয়। গতকাল ভোরে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ২০ জনকে নেয়ার কমিটমেন্ট দেয়া হলেও মূল তালিকায় ১০ জনকে রাখা হয়েছিলো, বাকিদের ইনক্লুড করা হয়নাই। এইটা প্রাইভেট এর শিক্ষার্থীদেরকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
একটা সত্যি সবাই স্বীকার করে নেয়, বৈছাআ তে অনেক বেশি লিডার রয়েছে কিন্তু সংগঠক এর সংখ্যা খুবই কম। বিশেষত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেই নতুন পলিটিক্যাল জেনারেশন তৈরি হয়েছে তাদেরকে ক্যাশ করা ও ক্যারি করানোর একটা গুরুদায়িত্ব আমাদের কাধে এসেছিলো। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ছিলো সবচেয়ে বেশি স্ক্যাটার্ড কারণ এই আন্দোলনে তাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিলো না, তারা স্বতস্ফুর্তভাবেই নেমেছিলো। সেইসাথে ঢাকার অলি-গলিতে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। এখানেও অনেক অনেক বেশি লিডারশীপ তৈরি হয়েছে যারা হারিয়ে গেলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। ফলত ঢাকা ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সংগঠিত করা বৈছাআ এর টপ প্রায়োরিটি ছিলো। অতীতে সাংগঠনিক দক্ষতা ও আন্দোলনের লিডারশীপ এর জায়গা থেকে আমাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো এবং আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে সংগঠিত করার। আপনি আমার দেয়া ঢাকা মহানগর এর থানা কমিটিগুলোর টপ পোস্টে দেখবেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ও নারীদের রিপ্রেজেন্টেশন অনেক বেশি। সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিও সকলের মতামতের ভিত্তিতে কাউন্সিল এর মাধ্যমেই নির্বাচিত করা হয়েছে।
আমি প্রাইভেট এর আর্বান মিডল ক্লাসকে পলিটিক্যাল করে তুলতে চেয়েছিলাম। আমার অনেকগুলো রাজনৈতিক স্বপ্ন আছে। "কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই" এই প্রশ্নে আমার যেই ৫-৬ টা এম্বিশন আছে, তার মাঝে একটা ড্রিম হইলো ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী বানাইতে চাই, ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করতে চাই, ঢাকাকে ডিসেন্ট্রিলাইজেশন প্রসেসের মধ্য দিয়ে নিতে চাই। ঢাকায় জন্মেছি, ঢাকায় বড় হয়েছি, ঢাকা আমার সবচেয়ে প্রিয় শহর, এই শহরের প্রতি আমার দায়। এইজন্যই ঢাকা মহানগরকে সংগঠিত করতে চেয়েছি আমি।
আরেকটা জিনিস আমরা সবসময়ই নিশ্চিত ছিলাম।গণঅভ্যুত্থান হওয়ার প্রধান শর্ত হলো সারাদেশের রাজপথগুলো আর্বান মিডল ক্লাস যারা ন্যাচারালি পলিটিক্স থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে তাদের দখলে থাকতে হবে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা মোটাদাগে ওই আর্বান মিডল ক্লাসকে রিপ্রেজেন্ট করে। তাই অভ্যুত্থান এর মধ্য দিয়ে যারা লিডার হয়ে উঠেছে তাদের পলিটিক্যালি ক্যাশ করতে পারলে এই আর্বান মিডল ক্লাসকে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী আকারে উত্থান ঘটাইতে পারবো। গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক এই বোঝাপড়া আমার বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম, পাঠচক্র এবং মাঠে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফলে তৈরি হইসে। ঢাকাকে যদি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আর্বান মিডল ক্লাস নেতৃত্ব দেয় তাহলেই রাজনীতিতে একটা র্যাডিকাল চেঞ্জ ঘটাতে পারবো। এইটা আমার জীবনের আরেকটা ড্রিম।
অভ্যুত্থানের পর সবাই যখন টকশো করে বেড়িয়েছে, থানা-ডিসি অফিস-সচিবালয়ে ঘুরেছে, বিভিন্ন পলিটিকাল স্ফেয়ারে-এম্বাসিতে গিয়েছে, বিদেশে ডেলিগেট হয়ে স্পিচ দিয়ে বেড়িয়েছে, আমি তখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে গিয়েছি, ঢাকার অলিগলিতে গিয়েছি। এইটা আমার রাজনৈতিক এম্বিশনেরই অংশ। অভ্যুত্থানের পর আমি এই এম্বিশনের পথেই হেটেছি। এইটা আমার চয়েজ ছিলো।
অভ্যুত্থানের পরিচিত ফেইস হওয়ার পরেও এই গ্রুপটার সাথে অনেক বেশি সময় কাটানো ও তাদেরকে পলিটিক্যালি পজিট করার ফলে এদের একটা বড় অংশ চেয়েছে তাদের রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে আমি থাকি নতুন ছাত্র সংগঠনের টপ পোস্টে। নইলে তাদের স্বার্থের কথা অতীতে যেমন কেউ বলে নাই এখনো বলবে না এমন একটা আলাপ ওদের মাঝে চাওর ছিলো। এইটুকুই আরকি।
নতুন ছাত্র সংগঠন এ প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিলো আমি সদস্য সচিব হবো। এরপর আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে মুখ্য সংগঠক, পরবর্তীতে সেখান থেকেও সরিয়ে মুখপাত্র করার প্রস্তাবনা করে। সবশেষে সেখান থেকেও মাইনাস করে আমাকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব পদে আসার প্রস্তাব করে। মুখপাত্র পোস্ট পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমি কালেক্টিভ স্বার্থের কথা ভেবে মেনে নিয়েছি। যখন যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয় তখন আমি স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেই, এই ছাত্র সংগঠনে আমি থাকবো না। এইটা জানিয়ে দেয়ার পর আর কোনো মিটিং, সংগঠন গঠনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি এবং লিটারেচার টিমের কোনো কাজের সাথেই যুক্ত ছিলাম না। আমি পুরোপুরি এই সংগঠন গঠনের সমস্ত প্রসেস থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। প্রাইভেট ও মহানগর থেকে সার্চ কমিটিতে রিপ্রেজেনটেটিভ দিয়ে গিয়েছিলাম।তাদেরকে পজিট করানো আমার দায়িত্ব ছিলো, আমি সেই দায়িত্ব পালন করে সরে গিয়েছি।
আমাকে যখন প্রতিদিন নতুন প্রস্তাবনায় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে এইটা ক্ষোভ জন্ম দেয় সেই সকল গ্রুপের মাঝে যারা আমার হাত ধরে প্রথমবার রাজনীতিতে এসেছে। তারা চাইছিলো আমি আমার সদস্য সচিব পদ আঁকড়ে ধরে রাখি, কিন্তু আমি জানিয়ে দেই সংগঠন এর স্বার্থে আমাকে যদি সংগঠন থেকে সরেও যেতে হয় আমি সেইটাই করবো। আমি আসলে সেটাই করেছিলাম। জ্বরে অসুস্থ ছিলাম, বের হইনি, সারাদিন ঘরে বসে সিনেমা দেখেছি। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি কালেক্টিভ স্বার্থের কথা চিন্তা করে। (অনেকেই আমাকে মাইনাস করার পেছনে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা বলে, অনেকগুলো প্রমাণিত সত্য আকারেও এসেছে।আমি এইগুলো পাবলিক স্ফেয়ারে আনার জন্য আগ্রহী নই।)
বাকের-কাদের ভাই গতকাল সকাল পর্যন্ত আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি যুগ্ম-আহ্বায়ক বা যুগ্ম সদস্য সচিব পদে আসবো না বলে সাফ জানিয়ে দেই। সেইসাথে জানাই যে, প্রাইভেট এর শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যপক ক্ষোভ বিদ্যমান আছে। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হৃদি আপুকে নিয়ে তাদের একটা এলিগেশন রয়েছে (সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পেজ থেকে তারা এই নিয়ে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভও জানায়)। আমি এই কনসার্ন দেই যে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষাথীরা ক্ষুব্ধ, বৈছাআ এর অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাও ক্ষুব্ধ। প্রাইভেট এর পোলাপান পাল্টাপাল্টি প্রেস কনফারেন্স করতে পারে। আপনারা তাদের দাবীগুলো নিয়ে ভাবেন, তাদের সাথে বসে ডিসিশন নেন।
আমি নতুন ছাত্র সংগঠনে থাকবো না এইটা গতকাল সকালে ক্লোজ সার্কেলে জানিয়ে দেই। আমার সাথে প্রাইভেট, সাত কলেজ, রাবি-চবি সহ অনেকগুলো গ্রুপ যোগাযোগ করে যে তারাও বেশ ক্ষুব্ধ এই প্রসেসে। আমি সবাইকে বলি বার্গেইন টুলস হিসেবে আপনারা আপনাদের প্রস্তাবিত নাম উইথড্র করতে পারেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে। আপনারা এইটা করলে আপনাদের সাথে আলোচনা টেবিলে বসা হবে কারণ পলিসি আকারেই ছিলো আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জনসম্মুখে ঘোষণা করবো। এইটা আলাপ শেষে আমি ঘুমিয়ে পরি। ঘুম থেকে উঠি তিনটার পর। ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি অনেকগুলো কল এসেছে ফোনে। কলব্যাক করে শুনি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অনেক স্টুডেন্টরা সংগঠিত হয়ে তাদের স্টেক নিশ্চিত এর জন্য মধুতে অবস্থান নিয়েছে। সেইসাথে মহানগর এর অনেকেই স্ব-প্রনোদিত হয়ে নিজেদের সংগঠিত করেছে যাতে আমার অবস্থান কেন্দ্রীয় কমিটির টপ চার পদের একটিতে রাখা হয়। ঢাকার অনেক ছেলেমেয়েই এসেছিলো তাদের ছাত্র সংগঠন এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে। সব মিলিয়ে এখানে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদেরই উপস্থিতি ছিলো। মূলত দুপুরে মধুতে গিয়েই তারা সবাই জানতে পারে আমি মধুতে আসি নাই এবং ছাত্র সংগঠনেও আসছি না। অলরেডি বাজারেও এইটা চাওড় হয়ে গিয়েছিলো আমাকে মাইনাস করা হয়েছে। ফলে সেখানের কেউ কেউ আমার নামেও স্লোগান দেয়া শুরু করে। মোদ্দাকথা এইখানে সুসংগঠিত কিছুই ঘটে নাই। আমাকে ওই মব থেকে একজন কল দিয়ে বলছিলো, সিচুয়েশন উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে, হাতাহাতি হতে পারে। আমি তাকে স্পষ্ট করে বলেছিলাম, সিচুয়েশন যদি উত্তপ্ত হয়ে উঠে তাহলে প্রয়োজনে মার খেয়ে আসবা তাও নিজেদের মাঝে মারামারি করবা না।
আমি পোস্ট-পদবির জন্য গ্যাঞ্জাম করি না এইটা আমার ক্লোজ সার্কেলের সবাই জানেন। আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি সংগঠন। পদ-পদবী আমাকে লিডার হওয়া থেকে কোনোদিন আটকায় নাই। আমি ছাত্র অধিকার পরিষদে সদস্য ছিলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিতেও সেই সদস্য ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমার হাতে গড়া সংগঠন।কোটা আন্দোলন ঘোষণা করেছিলাম আমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট সিআর+হল রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়ে গোটা ক্যাম্পাসও আমার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে আমি প্রমিনেন্ট ছিলাম এইটা মোটাদাগে সবাই স্বীকারও করে।
ঢাকাকে সংগঠিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো আসিফ ভাই আর আমাকে। সাত কলেজ, জগন্নাথ থেকে শুরু করে অনেক জায়গাতেই আমি অন্যতম সংগঠক ছিলাম। "কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না" গ্রুপটাও আমারই খোলা, আমিই দায়িত্ব নিয়ে একদম ফার্স্ট দিনে এই গ্রুপটাকে মেইনস্ট্রিম বানিয়েছিলাম যেখানে আরও অনেকগুলো গ্রুপই তৈরি করেছিলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডাররা। পরবর্তীতে সমন্বয়ক কমিটি বানানো হলে আমাকে সমন্বয়ক বানানো হয় নাই, আমি হলাম সহ-সমন্বয়ক। অথচ কোটা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানের যাত্রায় আমি লিডারশীপ ও স্ট্র্যাটেজি মেকিং এ সবসময়ই শুরুর একজনই ছিলাম। ২ তারিখ রাতে নেয়া আমাদের যেই স্ট্যান্ড অভ্যুত্থানকে রক্ষা করেছে বলে সবাই বলে সেই স্ট্যান্ডটাও প্রথমে আমার নেয়া। আমাকে সহ সমন্বয়ক বানানো হইলো শুরুতে অথচ শেষদিকে পুরো ১৫৮ জন সমন্বয়কের লিস্টটা আমার হাতেই হয়েছে। এমন অনেক উদাহরণ আছে আমার লাইফে। পদ পদবী আমাকে কোনোদিন নেতা হওয়া থেকে আটকায় নাই। মূলত ডিগনিটির প্রশ্নে মিল না খাওয়ার জন্যই ছাত্র সংগঠন থেকে আমার সরে আসা।
আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একদম টিএসসির ছেলে বলতে ক্যাম্পাসে যা বোঝায় আমি সেইটাই। হাসিনার পতনের আগে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ঢাবিতে চান্স পাওয়ার মুহূর্তটা। গতকাল যারা ছাত্র সংগঠন এর ঘোষণা দিয়েছে তারা আমার ভাইব্রাদার। আমি এই মানুষদের জন্য ক্যাম্পাসে মার খেয়েছি, মার দিয়েছি। রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য এই মানুষদের বিরুদ্ধে মব জড়ো করে হামলা করবো এমন ভাবনা কস্মিনকালেও আমি কল্পনা করতে পারি না।
ঢাবি বলি আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বলি,যারা আহত হয়েছেন তারা আমার ভাইব্রাদার। আমি এই ঘটনার সুস্পষ্ট তদন্ত চাই। যারা জড়িত তাদের উপর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দকে। সেইসাথে যারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমি হামলার নির্দেশ দাতা তাদেরকে বলবো সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসুন। ঘটনার সাথে-সাথেই যখন ঢাবিতে আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যপক ক্ষোভ তৈরি হইসে তখনই আমি ঢাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মুখোমুখি হতে চেয়েছিলাম। কাদের-বাকের ভাইকে কল দিয়ে তাদের রিচ করতে পারি নাই। পরে জাহিদ ভাইকে কল দিয়ে জানাই আমি ঢাবির শিক্ষার্থীদেরকে ফেইস করবো। তিনি বলেছেন, সিচুয়েশন পজিটিভ না। আগে আমরা সবাই মিলে অর্গানোগ্রাম ফোরামে আলোচনা করে নেই আমি,তারপর আসো। সেই আলাপ শেষ করতে করতে রাত প্রায় শেষ হয়ে যায়। তাই গতকাল আর শিক্ষার্থীদেরকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ হয়নি।
ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তি ব্যতীত কেউই আমার শত্রু না, আমি তাদের কাউকেই শত্রুজ্ঞান করি না আমি। গতকালকের ঘটনায়ও আমি কাউকে বন্ধুজ্ঞান বা শত্রুজ্ঞান করছি না। ঢাবির শিক্ষার্থীরাও আমার ভাই,আমার বোন।প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও আমার স্ট্যান্ড সেইম। আমি সবাইকে ওউন করতে চাই। যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত, আমি ঘটনার সুস্পষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। সেইসাথে একটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গতকালের হামলার নির্দেশদাতা বলে আমাকে যেই দাবী করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গতকালের এই ঘটনার পরেই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দেয় যে তারা তাদের স্টেক বুঝে নিতেই সেখানে গিয়েছে। রাতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠক এর সাথে মিটিং এ বসে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। সেখানেও তারা পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করে এবং ব্যপারটা স্পষ্ট করে। তারা সেখানে স্পষ্ট করেই বলে যে, মধুতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শুধুমাত্র তাদের স্টেক নিশ্চিত করার জন্যই গিয়েছিলো। সেখানে আমার নাম ধরে স্লোগান দেয়ার যেই ব্যপারটা সেটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা এবং আমি মধুতে আসিনি এইটা শোনার পর কয়েকজনের ইন্সট্যান্ট রিয়্যাকশন। আশা করি আমি আমার অবস্থান স্পষ্টভাবেই ব্যাখ্যা করতে পেরেছি।”
এএইচ
আরও পড়ুন