নতুন ব্যাংকগুলো সিএসআরে অস্বাভাবিক ব্যয় করছে
প্রকাশিত : ২২:০২, ১০ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২২:০৯, ১০ আগস্ট ২০১৭
সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে (সিএসআর) অস্বাভাবিক অর্থ ব্যয় করেছে নতুন ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আগের বছরের নীট মুনাফার ২০৫ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘অ্যান ইভালুয়েশন অব দ্য পারফরমেন্স অব নিউ কর্মাশিয়াল ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদসহ ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা এ সময় বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, নতুন ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে দুই-তিনটির অবস্থা খুবই নাজুক। তবে এখনই বলার সময় আসেনি যে নতুন এ ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই দুর্বল বা ভালো। যে দুই তিনটি ব্যাংকে বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। সার্বিকভাবে তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এখনও অনেক কম। তাই এসব ব্যাংকের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যেখানে ৬০ শতাংশ খেলাপি ঋণ থাকা স্বত্বেও বেসিক ব্যাংক এখনও বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সেখানে নতুন ব্যাংকের খেলাপি ১ শতাংশেরও কম।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন ব্যাংকের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে খারাপ করলে লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ঋণ খেলাপিদের রাজনৈতিকভাবে বয়কটের দাবি জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও মেঘনা ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন।
এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মেহমুদ হুসাইন বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর পারফরমেন্স মূল্যায়নের জন্য ৪ বছর যথেষ্ট নয়। আমাদের জন্মই হয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। তাই পুরোনো বা অন্য প্রজন্মের ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে হবে না।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, নতুন ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার বিষয়ে অনেক বেশি এগ্রেসিভ। এভাবে ঋণ দিলে বেকায়দায় পড়বে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা ব্যাংকিং বোঝেন কম। আবার অনেক পরিচালক বেনামী ঋণ নিচ্ছে। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছে।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. সোহেল মোস্তফাসহ চার সদস্যের একটি টিম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ী নীট মুনাফার ১০ শতাংশ অর্থ সিএসআরে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু ২০১৬ সালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ২০৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করেছে। যা খুবই অস্বাভাবিক।
এছাড়া ২০১৫ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক ৯৯ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ৯২ শতাংশ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ৩৫ শতাংশ ব্যয় করেছে।
২০১৪ সালে এনবিআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ৪৯ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩৭ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।
আরকে/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন