ইটিভি অনলাইনকে নাট্যকার সকাল
নাট্যকারের গল্প চুরি করলে কষ্ট লাগে
প্রকাশিত : ১৭:৫৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:০৪, ৩১ অক্টোবর ২০১৭
আহসান হাবিব সকাল। একজন তরুণ নাট্যকার। প্রথম জীবনে ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে তার ধ্যান-জ্ঞান নাটক, সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখা নিয়ে। ইতিমধ্যে তার লেখা বেশ কিছু নাটক প্রশংসিত হয়েছে। সকালের স্বপ্ন ও ইচ্ছা একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। সেই স্বপ্নের কথা শুনতে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন কথা বলেছে নাট্যকারের সঙ্গে।
ইটিভি অনলাইন : কেমন আছেন?
আহসান হাবিব সকাল : জি অনেক ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
ইটিভি অনলাইন : আমিও ভালো আছি। সকাল ভাই, আজ আমরা আড্ডা দিবো। আড্ডার মধ্যে গল্প হবে নাটক ও নাট্যকারের কথা নিয়ে।
আহসান হাবিব সকাল : ঠিক আছে। সমস্যা নাই।
ইটিভি অনলাইন : নাটক লেখাটাকে কি আপনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন?
আহসান হাবিব সকাল : জি। আমি আগে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বর্তমানে আমি আমার ধ্যান জ্ঞান সব কিছুই লেখার মধ্যে নিয়ে এসেছি। নাটক লিখছি। সিনেমার স্ক্রিপ লিখছি। ধারাবাহিক, সিরিয়াল নিয়েও কাজ করছি।
ইটিভি অনলাইন : পৃথিবীতে তো অনেক পেশা রয়েছে। পূর্বেও অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সব কিছু বাদ দিয়ে কেনো এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হলেন?
আহসান হাবিব সকাল : আসলে লেখা লেখি বিষয়টা আমার অনেক আগে থেকেই। মাথার মধ্যে প্রতিনিয়ত গল্প ঘুরপাক খায়। লিখতামও নিয়মিত। এক সময় মিডিয়ার প্রতি আগ্রহ হয়। ভেবে দেখলাম আমার গল্পগুলোকে তো দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তখন থেকেই মিডিয়ার জন্য লিখতে শুরু করি। লেখা-লেখি আসলে স্রষ্টা প্রদত্তই বলতে পারেন।
ইটিভি অনলাইন : আপনার লেখালেখির শুরুটা কবে থেকে?
আহসান হাবিব সকাল : আমার শুরুটা হয়েছিল সিনেমার স্ক্রিপ্ট দিয়ে। ২০০৪ সালের কথা। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক মান্না ভাইয়ের সর্বশেষ ছবি ‘লীলা মন্থন’এর স্ক্রিপ্ট আমার লেখা। দুর্ভাগ্য যে এখনও‘লীলা মন্থন’ আটকে আছে সেন্সরবোর্ডে। এছাড়া আরও বেশকিছু সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছি। যেগুলোর নাম আপাতত বলতে চাচ্ছি না।
ইটিভি অনলাইন : ‘লীলা মন্থন’ নিয়ে কিছু বলুন।
আহসান হাবিব সকাল : মৃত্যুর ৩ বছর আগেই এই ছবির কাজ শেষ করেছিলেন মান্না ভাই। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন যৌথভাবে জাহিদ হোসেন ও খোরশেদ আলম খসরু। মান্না ভাই বেঁচে থাকতেই ছবির অধিকাংশ কাজ শেষ হয়। এর পর পোস্ট প্রোডাকশনের কিছু কাজ শেষ করে ছবিটি জমা দেওয়া হয় সেন্সরবোর্ডে। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেন্সরবোর্ডের ছাড়পত্র না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে চলচ্চিত্রটির ভবিষ্যৎ।
ইটিভি অনলাইন : সিনেমার গল্প কি নিয়ে?
আহসান হাবিব সকাল : মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে ছবিটি তৈরি। ছবিতে আমরা চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের বাস্তবচিত্র তুলে ধরতে। এটি যৌনকর্মীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কাহিনী নিয়ে নির্মিত। যৌনকর্মীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সেই গল্প নিয়ে নির্মাণ করা হয় সিনেমাটি।
ইটিভি অনলাইন : কেন আটকে আছে সিনেমাটি?
আহসান হাবিব সকাল : বোর্ড ছবিটি দেখে বলেছিল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে একটি অনুমতিপত্র নিতে হবে। আমরা প্রথমে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুজন প্রতিনিধিকে দেখাই। ছবিটি সম্পর্কে তাঁরা মৌখিকভাবে অনাপত্তি জানান। এর পর ছবিটি সেন্সরবোর্ডে জমা দিলে তাঁরা অনাপত্তির বিষয়টি লিখিত চান। লিখিত অনুমতি আনতে গেলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান অনাপত্তিপত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমরা আবার সেন্সরবোর্ডের কাছে আবেদন করি। তাঁরা আমাদের বলেন যৌনপল্লীর দৃশ্যগুলো বাদ দিয়ে আবার জমা দিতে।
আমাদের গল্পের মূল বিষয়টিই এই যৌনপল্লীকে ঘিরে। যৌনকর্মীরা কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, সেটাই আমাদের ছবির গল্প। যে অংশ কেটে বাদ দিতে বলা হচ্ছে, সেটি বাদ দিলে ছবির কিছুই থাকে না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য সকলেই হাতে অস্ত্র নিয়েছিল। বাংলাদেশে এমন অনেক যৌনপল্লী আছে, যেখানে যৌনকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। মূলত এসব ঝামেলার কারণেই আটকে আছে সিনেমাটি।
ইটিভি অনলাইন : এখন পর্যন্ত কতগুলো নাটক লিখেছেন? কয়টা নাটক অনইয়ার হয়েছে?
আহসান হাবিব সকাল : এ পর্যন্ত আমার ৩৮টি নাটক টেলিভিশনে অনইয়ার হয়েছে। ৫টি জমা আছে।
ইটিভি অনলাইন : নতুন কি কি কাজ করছেন?
আহসান হাবিব সকাল : বেশ কয়েকটি নাটক অপেক্ষমান আছে। যেগুলো একক নাটক। তবে নতুন করে একটি ধারাবাহিক ‘ক্রাইম ফিকশন’ লিখছি। এটা ধারাবাহিক ভাবে যাবে। কিছু সত্য ঘটনা অবলম্বনে স্ক্রিপ সাজানো হচ্ছে। আর আমিও কিছু গোয়েন্দা কাহিনীর মত করে নিজে গল্প তৈরি করছি। মোট কথা এটা নিয়ে আমি অনেক আশাবাদি। দর্শক ভিন্ন কিছু দেখতে পাবে।
ইটিভি অনলাইন : এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে?
আহসান হাবিব সকাল : একটা ভালো প্রশ্ন করেছেন। আসলে আমরা যারা তরুণ নাট্যকার তাদের বেলায় বিড়ম্বনার শেষ নেই। সব থেকে দু:খ লাগে তখন, যখন আমার কাছ থেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটকে আমার নামই রাখা হয় না। নির্মাতারা আমাদের কাছে নাটক চায়। আমরাও একটা সুন্দর গল্প মাথার মধ্যে রেখে স্ক্রিপ লিখি। অনেক সময় দেখা যায় সেই গল্প নির্দেশক পারিবর্তন করেন। করাই যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে মূল নাট্যকারে নাম কেটে ফেলা কতটুকু যৌক্তিক তা জানা নেই।
সম্প্রতি আমার একটা নাটক অনইয়ারে গেছে একটি বেসরকারি চ্যানেলে। নির্মাতা আমাকে জানায়নি কবে কখন এটি অনইয়ারে যাচ্ছে। কিন্তু আমার চোখে পড়েছে নাটকটি। দেখলাম আমার লেখা নাটক কিন্তু নাট্যকার হিসেবে আমার নাম দেওয়া হয়নি। এই যে নাট্যকারের গল্প চুরি করে নির্মাতারা এটা অনেক বড় অপরাধ। আমি সবার কথা বলছি না। কিছু অসৎ লোক রয়েছে যারা এমনটা করে। তরুণদের ক্ষেত্রে এই প্রতারণাগুলো বেশি করা হয়।
ইটিভি অনলাইন : সকাল ভাই আপনার জন্য শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
আহসান হাবিব সকাল : আপনাকেও ধন্যবাদ। ইটিভির সকল দর্শক ও পাঠকদের জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো। দর্শকদের কাছে একটাই চাওয়া বাংলাদেশের নাটক দেখুন। ইউটিউব থেকে নাটক না দেখে টিভির পর্দায় দেখুন।
এসএ/এআর