ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

নান্দনিক রূপে গজনী অবকাশ কেন্দ্র

মো. শরিফুর রহমান, শেরপুর

প্রকাশিত : ১১:০৪, ২২ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ১৩:১২, ২২ মার্চ ২০২২

দেশের প্রান্তিক জেলা শেরপুরে নান্দনিক রূপে সেজেছে গজনী অবকাশ কেন্দ্র। জেলার বিস্তীর্ণ সমতল ভূমির সৌন্দর্য পিপাসু বাঙালিরা প্রায়ই অবসর সময়ে ছুটে যান গারো পাহাড়ে গড়ে ওঠা এ পর্যটন স্পটে। 

নতুন করে অবকাশে নির্মিত হয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ, জিপলাইনিং ও ক্যাবলকার। যেখানে ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে পাহাড়ের এক টিলা থেকে অপর টিলায় যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন পর্যটকেরা। ক্যাবলকারে চড়েও উপভোগ করতে পারছেন দুই পাহাড়ের মধ্যকার অনাবিল সৌন্দর্য। অবকাশ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময় শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু স্থাপনা ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে পর্যটকদের হাঁটা-চলা করার জন্য পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরি সুদীর্ঘ ওয়াক ওয়ে। উঁচু পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। শিশু দর্শনার্থীদের জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক, গজনী এক্সপ্রেস ট্রেন, শিশুকর্ণার, দুলনা নৌকা, সুপার চেয়ার, অত্যাধুনিক দোলনা ও নাগর দোলা। 

আবহমান কাল থেকে বসবাসকারী শেরপুরের আদিবাসী ও বাঙালি জনগোষ্ঠী সাম্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। উভয় সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা এবং সাংস্কৃতিক ভাবধারায় বৈচিত্র্যপূর্ণ সাদৃশ্য রয়েছে। আর এই সাদৃশ্য থেকেই পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মৈত্রী ও ঐক্যের ধারা বহমান। 

স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও ছুটে আসেন অগণিত প্রকৃতিপ্রেমি। শেরপুর জেলা প্রশাসন গজনী পিকনিক স্পট তৈরির ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে আসছিল। সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৯৩ সালে নির্মিত হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্র। বর্তমানে এটি আরো নান্দনিক রূপে তৈরি করা হয়েছে। 

মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের মতো গজনী অবকাশ কের্ন্দ্রটিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বিগত নভেম্বর-ডিসেম্বরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের পদচারণা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় পর্যটকদের আরো বেশি করে আকৃষ্ট করতে শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গজনী অবকাশ কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

২০১৬ সালে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা চিড়িয়াখানাটিতে বর্তমানে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে মেছোবাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, হনুমান, বানর, শিয়াল, গন্ধগোকুল, সজারু, কচ্ছপ, অজগরসাপ, শকুন, চিল, বাজ পাখিসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক প্রজাতির পশু-পাখি। 

গজনী অবকাশে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে পাহাড়ের বুক চিড়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ, ছোট-বড় মাঝারি টিলা আর সবুজ বন-বিটপী। আরও রয়েছে পদ্মসিঁড়ি, লেকভিউ পেন্টাগন, ৮০ বর্গফুট উচ্চতা সম্পন্ন ওয়াচ টাওয়ার, গারো মা ভিলেজ, স্মৃতিসৌধ, নিকুঞ্জ বন ও আলোকের ঝর্ণাধারা, মৎস্যকন্যা (জলপরী), বিশালাকার জিরাফের প্রতিকৃতি, ডাইনোসর-হাতির প্রতিকৃতি, ড্রাগন টানেলসহ আরো অনেক কিছু। 

তাছাড়া গজনী অবকাশ কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ ক্রিসেন্ট লেক, লেকের ওপর রঙধনু ব্রিজ এবং বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিফলক। আরো স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর। আগত দর্শনার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে জাদুঘরে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস ও স্থিরচিত্র। তার পাশেই স্থাপন করা হয়েছে আদিবাসী জাদুঘর। যেখানে বিলুপ্ত প্রায় আদিবাসীদের জীবন মানের নানান ইতিহাস-ঐতিহ্যও ফটোগ্রাফ দর্শনার্থীদের কৌতুহল মেটাবে। 

রাত্রি যাপনের জন্য গজনীতে ছোট ছোট কটেজ এবং রাংটিয়া এলাকায় পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য একটি মোটেল নির্মাণ কাজের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় আগামী এক বছরের মধ্যে এর সিংহভাগ কাজ শেষ হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রশীদ জানান, শুধুমাত্র শীত মৌসুমের ৩ থেকে ৪ মাস পর্যটকরা এই গজনী অবকাশ কেন্দ্রে ভীড় জমায়। বাকী সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না। তাই পর্যটকদের আকর্ষণ সৃষ্টি করাতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ১০ জন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে ৪২টি ক্লোজ সার্টিক ক্যামেরা। তাছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য গজনী পর্যটন কেন্দ্রে ওয়াটার পার্ক, সুইমিংপুল, টগি ওয়ার্ল্ডের ন্যায় শিশুদের জন্য স্পেশাল বিনোদনের ব্যবস্থা, ফুড কোর্ট, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য কালচারাল সেন্টার, ফিশিং ও কায়াকিংয়ের ব্যবস্থাসহ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ আগামী অর্থবছরে সমাপ্ত হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি