ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নাফ নদীতে আরও ১৭ রোহিঙ্গার লাশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১২, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:৪৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সেনাবাহিনীর নির্যাতন আর হত্যার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় নাফ নদীতে নৌকা ডুবে নিহত আরও ১৭ রোহিঙ্গা শরনার্থীর লাশ ভেসে উঠেছে। আজ সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা এলাকার নাফ নদী থেকে ১৬ জন এবং শাহপরীর দ্বীপ থেকে একজন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে দুদিনে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে। এদের অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে নদী ও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে মিয়ানমারকে বারবার বলে এলেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা নিধনের নিন্দা জানিয়েছে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বারবার বলে আসছে।


প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে নৌডুবির ঘটনায় এ দফায় এখন পর্যন্ত মোট ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এর মধ্যে গত বুধবার টেকনাফ থেকে চারজন, গতকাল বৃহস্পতিবার ১৯ জন এবং আজ সর্বশেষ ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। বৃহস্পতিবারের নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল নারী ও শিশু।


টেকনাফ থানার ওসি জানান, হামলার শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে ছোট ছোট একাধিক নৌকায় করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এ সময় প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়টি নৌকা বা কতজন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।   


প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে ‘সন্ত্রাসী হামলা’র ঘটনা ঘটে। এরপর রাখাইনের রোহিঙ্গা শরনার্থিদের নিধন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রায় একশজন নিহত হন। এর মধ্যে ১২ নিরাপত্তাকর্মী ও বাকিদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতার কার্যালয়।


এরপর থেকেই হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমার থেকে নদী, সমুদ্র ও স্থলপথে বাংলাদেশে আসা শুরু করে। যদিও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্ত দিয়ে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।


এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে।


জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।


সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এক পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।


এর আগে ২০১২ সালের জুনেও মিয়ানমারে সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। ওই সময় সরকার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নেয়। যার ফলে ওই সময়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা পুশব্যাক করা হয়।

//এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি