ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

নার্সিং পেশায় বিনিয়োগ জরুরি

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন  

প্রকাশিত : ১২:১৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

সেবা পরম ধর্ম। কথাটা আমরা সকলেই শুনে আসছি ছোট বেলা থেকে। এই সেবা কথাটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নার্স।

একটি বহুল প্রচলিত শব্দ নার্স, যাদের স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

রোগীর প্রত্যাহ সেবার প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি কাজ নার্সরা করেন। এ বছর স্বাস্থ্য দিবসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার  প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়,  ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ লাখ নার্সের দরকার হবে। বর্তমানে বিশ্বে মোট স্বাস্থকর্মীর অর্ধেক নার্স। তবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবায় নার্সের সংখ্যা নগন্য। প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ১ দশমিক ৭৫ জন নার্স কাজ করেন। বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখ লাখ নার্সের প্রয়োজন।

করোনা একদিকে যেমন আমাদের স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে দিয়েছে তেমনি এ খাতে একটা বড় রকমের প্রবৃদ্ধির সুযোগও তৈরি করেছে। করোনার ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে ডাক্তারদের বাইরে যে বিশাল একটি জনবল সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের প্রতি আমরা যথাযথ গুরুত্ব দেইনি। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাক্তার-নার্স-হেলথ টেকনিশিয়ানের অনুপাত ১:৩:৫ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশে ১:০.৫:০.২৫।

নার্স, হেলথ টিকনিশিয়ান ও মেডিকেল এটেনডেন্ট জাতীয় স্বাস্থ্যকর্মীর অপ্রতুলতার পাশাপাশি তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বীকৃতি, আর্থিক অবস্থা এবং সামাজিক মর্যাদার অবস্থাও খুব খারাপ। অথচ একজন রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়ের একশ ভাগের এক ভাগ সময় মাত্র ডাক্তারের সেবা প্রয়োজন হয়, বাকি সময় প্রয়োজন হয় নার্স ও মেডিকেল এটেনডেন্টের সেবা।

করোনার ফলে স্বাস্থ্যখাতে বিশাল প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ভারতে বাংলাদেশিরা ৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করেছে। এই রোগীরা এখন দেশেই চিকিৎসা নিবেন। ফলে এত টাকা দেশে থেকে যাবে, যা ব্যয় হবে নতুন হাসপাতাল তৈরি ও কর্ম সংস্থানে। বর্ধিত রোগীকে দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য আমাদের অল্পদিনে প্রচুর সংখ্যক নার্স ও মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট তৈরি করতে হবে।

দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেক নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। দেশের বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে তবে মানসম্মত নার্স তৈরি হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে হাসপাতালগুলোতে ভুয়া নার্সের সংখ্যা বেশি। আমরা অনেকে জানিনা নার্সদের প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি প্রয়োজন এক্ষেত্রে আমরা যারা সেবা গ্রহীতা আছি তাদের দায়িত্ব রয়েছে। আপনি জানবেন আপনার নার্স কি নার্সিং কাউন্সিল নিবন্ধন আছে কিনা? 

জেনে রাখা ভাল নার্সিং সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের নিবন্ধন লাগে নচেৎ সেবা দিতে পারবেন না। এ সংক্রান্ত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি আইন ২০১৬ পাশ হয়েছে সংসদে। এতে তিন মাসের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নিবন্ধিত নার্স ও মিডওয়াইফ যাচাই করুন এই লিংকে-
http://bncdb.bnmc.gov.bd/admin/lic_num_src এখন সময় এসেছে নার্সিং পেশায় বিনিয়োগ করার। আমরা দক্ষ নার্স তৈরি করতে পারলে দেশে গুণগত সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং অবৈধ নার্সিং প্রাকটিস বন্ধ হবে।
লেখক- নার্স ও পুষ্টিবীদ
syedahmedtanshiruddin@gmail.com
এআই/এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি