ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নায়ক ফেরদৌসকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ, ভিসা বাতিল

প্রকাশিত : ২২:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ভোটের প্রচার করে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের চিত্রতারকা ফেরদৌস আহমেদ। একজন বিদেশি নাগরিক কীভাবে ভারতে এসে ভোটের প্রচার করতে পারেন, সেই প্রশ্ন তুলে এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ পেশ করেছে রাজ্যে বিরোধী দল বিজেপি।

রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী দাবি করেছেন, ফেরদৌস এসে তার হয়ে প্রচার করেছেন বলে তিনি কিছু জানেন না- এ বিষয়ে তার নাকি খোঁজ নেওয়ারও সময় নেই। ফেরদৌস নিজেও গোটা বিতর্ক নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি।

তবে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কলকাতায় তাদের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস বা বিদেশি নাগরিকদের আঞ্চলিক নথিভুক্তকরণ কেন্দ্রর কাছ থেকে বাংলাদেশি চিত্রতারকা ফেরদৌসের ব্যাপারে একটি রিপোর্ট তলব করেছে।

ফেরদৌস একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার মাধ্যমে তিনি তার ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন কি না, ওই রিপোর্টে সেটাই জানতে চাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ সংসদীয় আসনটি বাংলাদেশ সংলগ্ন, ওই কেন্দ্রে অর্ধেকেরও বেশি ভোটার মুসলিম।

সেই রায়গঞ্জ কেন্দ্রের হেমতাবাদ, ইসলামপুর, করণদীঘির রাস্তায় জনপ্রিয় বাংলাদেশি চিত্রতারকা ফেরদৌস রোড শো করছেন এবং তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে ভোটও চাইছেন, সেইসব ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবিতে টালিগঞ্জের অন্য তারকাদের সঙ্গে জিপে ও নির্বাচনি মঞ্চেও দেখা গেছে ফেরদৌসকে। আর এসব ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়তেই বিজেপি তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এদিন রায়গঞ্জে জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে থেকে ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ও পশ্চিমবঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক দেবশ্রী চৌধুরী বলছিলেন, "এই কাজটা যে ভারতের সংবিধান-বিরোধী, আমরা সেটাই নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি।" "একজন বিদেশি নাগরিক কোন ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকে এখানে ভোটের প্রচার করছেন, আমরা আমাদের অভিযোগে সেই প্রশ্নটাই রেখেছি।"

রায়গঞ্জ আসনের বিশাল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ``তোষণ করতেই`` ফেরদৌসকে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে বিজেপির অভিযোগ। চৌধুরী আরও বলছিলেন, "পশ্চিমবঙ্গের ২৭ শতাংশ মুসলিম ভোট তোষণ করেই তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় টিঁকে আছে। রায়গঞ্জেও মুসলিম ভোট পোলারাইজ করার চেষ্টাতেই ওই চিত্রতারকাকে এখানে আনা হয়েছিল।"

"গোটা ভারত আজ পশ্চিমবঙ্গকে ঘৃণার চোখে দেখছে, যে সেখানে ভোট হচ্ছে - আর অন্য রাষ্ট্র থেকে একজন বিদেশি তারকাকে এনে সম্পূর্ণ জাতিগত কারণে, সাম্প্রদায়িক কারণে তাকে সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে!" ফেরদৌসের প্রচারের ঘটনা সামনে আসার পর তৃণমূল নেতৃত্বও বেশ বিব্রত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

রাজ্য স্তরের নেতারা এ বিষয়ে কেউ মুখই খুলতে চাইছেন না, আর রায়গঞ্জ আসনের তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল ``ফেরদৌস`` শব্দটা শোনামাত্র বলে উঠছেন এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই।

আগরওয়াল বলেন, দেখুন বিষয়টা আমার নলেজেই নেই। আমার কিছুই জানা নেই, আমি আমার মতো প্রচার করে যাচ্ছি - এ বিষয়টা সত্যিই আমার নলেজে নেই!` বিশ্বাস করুন, আমার হাতে এখন এসব দেখার মতো একটা মিনিটও সময় নেই। আমি সাংগঠনিক ছেলে, আমি আমার সংগঠন দিয়েই চিরকাল ভোটের প্রচারটা করি। আর সেটা নিজেই করি!"

তার মানে বলতে চাইছেন, বাইরের তারকাদের আপনার প্রচারে কোনও কাজেই লাগে না? "একদমই কাজে লাগে না। কোনও দিনই লাগেনি, আর যথারীতি এবারেও লাগছে না", বলছেন কানাইয়ালাল আগরওয়াল।

তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া কিছু কিছু ছবিতে ফেরদৌসকে যে তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গেও দেখা গেছে - তা আগরওয়াল এখন সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন।

তৃণমূলের নির্বাচনি জনসভায় বাংলাদেশি তারকা ফেরদৌসের উপস্থিত থাকার ছবি ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মঙ্গলবার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার আগে ফেরদৌস নিজেও সংবাদমাধ্যমকে পুরোপুরি এড়িয়ে গেছেন।


নির্বাচন কমিশন এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিতে পারে বা এতে তৃণমূলের কোনও শাস্তি হতে পারে কি না, তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে।

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে যেমন বলছিলেন তার কর্মজীবনে তিনি কখনও এরকম কোনও ঘটনা দেখেননি, যেখানে বিদেশিরা এসে ভারতে ভোটের প্রচার করছে বা তা নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়ছে। নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি বা মডেল কোড অব কন্ডাক্টেও এ বিষয়ে সরাসরি কিছু উল্লেখ নেই।

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কমিশনের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, তারা বিষয়টিকে দিল্লিতেই রেফার করছেন - এবং এ বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনই সেটা নেবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি