যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা
নিঃসঙ্গদের মৃত্যুঝুঁকি ৫০ ভাগ বেশি
প্রকাশিত : ১৮:২৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:০৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
একাকিত্বের অনুভূতি আমাদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে দুর্বল করে দেয়। ব্যস্ততা, সময়ের অভাব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির মধ্যে ক্রমশই একা হয়ে পড়ছে মানুষ। কোথাও বাড়তে থাকা ডিভোর্স রেটের কারণে সিঙ্গলহুড, কখনও সময়ের সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা বন্ধুত্ব, পারিবারিক সম্পর্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব। যার প্রভাব আমাদের জীবনে মুটিয়ে যাওয়া থেকেও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে সতর্ক করছেন গবেষকরা।
স্বাস্থ্যের উপর সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও নিঃসঙ্গতার প্রভাব নিয়ে ২১৮টি গবেষণার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা জানাচ্ছেন, যাদের সোশ্যাল কানেকশন বা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কম, যাদের বন্ধুহীনতার সমস্যা রয়েছে, তাদের অল্পবয়সে মৃত্যুর সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। যেখানে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা এই সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
ব্রিংহ্যাম ইয়ঙ্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও এই বিষয়ের মুখ্য গবেষক জুলিয়ান হল্ট-লানস্টাড বলেন, যোগাযোগ, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব রাখা মানুষের বেঁচে থাকার সাধারণ প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে। যা শুধু বেঁচে থাকা নয়, ভাল থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি। একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতার কারণে অল্পবয়সী, এমনকী শিশুদের মধ্যেও অপরাধ প্রবণতা, নিজেকে আঘাত করা, এমনকী আত্মহননের প্রবণতাও দেখা যায়। এই সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর। অথচ প্রতি দিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ প্রায় সারা বিশ্বেই বেড়ে চলেছে নিঃসঙ্গতায় ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা।
একাকিত্বের অনুভূতি আমাদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে দুর্বল করে দেয়। যারা নিঃসঙ্গ জীবন কাটান তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি অসুস্থতায় ভোগেন। মোট ৫০টি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘেঁটে করা গ্রানসেটের এই সমীক্ষা বলছে, এই মুহূর্তে ব্রিটেনের তিন চতুর্থাংশ বয়স্ক মানুষ একাকিত্বের সমস্যায় ভুগছেন। এবং তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই নিজেদের সমস্যা নিয়ে কখনও কারও সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করেননি।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়, এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই জানিয়েছেন পরিবার, বন্ধুরা তাঁদের একাকিত্বের কথা জানলে বিশ্বাসই করতে পারবে না। রিসেন্ট অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ব্রিটেন ইউরোপের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ দেশ। ক্যাম্পেন টু এন্ড লোনলিনেস অনুযায়ী, একাকিত্বের কারণে অসুস্থতা মোকাবিলায় প্রতি বছর ব্রিটেনে ২ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ হয়।
ব্রিটেনের মতোই এই সমস্যা বিশ্বের অন্যান্য বহু দেশেই ক্রমবর্ধমান বলে সতর্ক করেছেন হল্ট লানস্টাড। এখন থেকেই স্কুলের পাঠক্রমের সঙ্গেই একাকিত্ব মোকাবিলা ও সোশ্যাল স্কিল বাড়ানোর পাঠ দেওয়া হলে তা ভবিষ্যতে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারা যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সূত্র : আনন্দবাজার।
//এআর