নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের বাড়িতে শোকের মাতম, দিশেহারা মা-বাবা
প্রকাশিত : ১৬:৫৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয়ে লাগা ভয়াবহ আগুন নেভাতে এসে ট্রাকচাপায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মী শাহানুজ্জামান নয়ন। এ ঘটনা জানাজানি হলে নিহত নয়নের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর আটপুনিয়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
মা নারগিস বেগম সন্তানের শোকে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
বড় বোন সীমা আখতার জানান, নয়নের চাকরির বয়স মাত্র ২ বছর। মূল কর্মস্থল ছিল সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস অফিসে। তবে ডেপুটিটেশনে কর্মরত ছিলেন ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে। সেখানে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ টীমের সাথে কর্মরত ছিলেন।
বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ে আগুন লাগার খবর পেয়ে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে নয়নও ঘটনাস্থলে আসেন। দায়িত্বপালন করাকালে একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এ খবরটি ভোর ৫টার দিকে বাবা আখতারুজ্জামানকে মোবাইল ফোনে ঢাকা থেকে জানানো হয় বলে জানান বোন সীমা। তিনি অভিযোগ করেন, সচিবালয়ের মতো স্থানে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে দেয়ার প্রশাসনের কোন তদারকি ছিলনা। ওই সড়কটি বন্ধ করাও হয়নি। ফলে দায়িত্বপালন কালে ওই সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছে তার ভাই।
এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেছেন তিনি।
বাবা আখতারুজ্জামান একই অভিযোগ করে বলেন, তার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এই অভিযোগ মা নারগিস বেগম সহ স্বজন ও এলাকাবাসিরও।
নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম জানান, নয়ন পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিলো। তার বেতনের টাকায় তাদের সংসার চলতো। জমিজমা বিক্রি করে চাকরি নিয়েছিল, তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার নিঃস হয়ে গেলো।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করতে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করেছে। এখন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ কিভাবে শোধ করবে, সংসারে কিভাবে চলবে বলে তিনি কাঁদতে থাকেন।
নিহত নয়নের ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েছিলেন এখনও রেজাল্ট হয়নি। মাকে নয়ন বলতো, আমি ডিগ্রি পাস করলে আমার পদোন্নতি হবে তখন সংসারে অভাব থাকবেনা। কিন্তু আজ সব স্বপ্নই কেঁড়ে নিল ঘাতক ট্রাক।
এএইচ
আরও পড়ুন