ন্যায্যতা নেই দুই সিটির প্রস্তাবিত বাজেটে: বিআইপি
প্রকাশিত : ২০:০৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত বাজেটকে অস্পষ্ট বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। তাদের মতে, ঘোষিত বাজেটে আয়ের ক্ষেত্রগুলো সবার জানা থাকলেও ব্যয়ের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে, ঘোষিত বাজেট উন্নয়নের তুলনায় অপর্যাপ্ত বলেও মনে করে বিআইপি।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিআইপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলা হয়।
বক্তারা বলেন, এ বাজেট শুধু খাতভিত্তিক একমাত্রিক বাজেট। এটি প্রণয়নের প্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক জনপ্রতিনিধিত্বশীল নয়। বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক বিবরণের সঙ্গে সঙ্গে এলাকাভিত্তিক বন্টনের ন্যায্যতা অনুপস্থিত। গত বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখানে সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের আশানুরূপ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ বাজেটে স্থান, কাল, পাত্রের অভাব রয়েছে।
বিআইপি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাজেট অনুষ্ঠানে জবাবদিহিতা থাকতে হবে, যেটা পৌরসভাগুলোতে দেখা যায়। সেখানে একটা বাজেট প্রস্তাবের আগে অনেকবার আলোচনা হয়, সবার অংশগ্রহণ খাকে। কিন্তু, ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রস্তাবিত বাজেট পেশের দিন এক সাংবাদিকের সঙ্গে কাউন্সিলরদের অসৌজন্যমূলক আচরণ দেখা গেছে, যা উদ্বেগের বিষয়।
তিনি প্রামান্যচিত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান এলাকার মিউনিসিপালিটির ওয়ার্ডের চাহিদাভিত্তিক উন্নয়ন বরাদ্দের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা যদি ডারবানের এ মডেল গ্রহণ করতে পারি তবে উন্নয়ন ঘটানো সহজতর হবে। ডারবানে প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা আলাদা ম্যাম আছে। ম্যাপ দেখলেই সহজেই বোঝা যায় সেখানে কি কি বিষয়ে কতটুকু উন্নয়ন দরকার। আর কতটুকু বরাদ্দ সেখানে হবে তাও স্পষ্ট থাকে। ফলে এলাকাভিত্তিক প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়।
বিআইপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আক্তার মাহমুদ বলেন, সক্ষমতা ছাড়া বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব না। বাজেটের আকার বাড়লেই উন্নয়ন হচ্ছে-এ কথা বলা যাবে না। কারণ, বাজেটের আকারের সঙ্গে এর উন্নয়ন নির্ভরশীল নয়। বাজেট হতে হবে জনবান্ধব, জনকল্যাণমূলক, যেখানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, মেয়রে আকাঙ্ক্ষা প্রাধান্য পাবে না।
বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড, গোলাম মর্তুজা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের ক্ষেত্রগুলো কী কী, সেগুলো সবাই জানি। কিন্তু, এখানে ব্যয়ের কোন কোন ক্ষেত্র আছে, কোন ক্ষেত্রে কী পরিমাণ বরাদ্দ যাবে- সেটা উল্লেখ নেই। এ হিসেবে বলা যায়, দুই সিটির প্রস্তাবিত বাজেট ‘অস্পষ্ট বাজেট’।
এর আগে, গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে আগের বছরের স্থিতি রয়েছে ২০২ কোটি টাকা, রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৯৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, অন্য খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বাজেটে সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ঘোষিত বাজেটে মোট পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অন্য খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। নতুন বাজেটের মূল ব্যয়ের প্রধান খাত তথা মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বছর শেষে ১০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা তহবিলের স্থিতি রাখার কথাও বলা হয়েছে।
আর, গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এবারের বাজেট ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে থেকে ১ হাজার ২৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি। নতুন বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেশি। রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকাসহ অন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিআইপির সভাপতি ড. এ কে এম আবুল কালাম, উপদেষ্টা ড. গোলাম রহমান প্রমুখ।
আরকে//
আরও পড়ুন