ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পতনের শুরু যেখানে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৭, ২৮ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ২১:৪৬, ২৮ জুলাই ২০১৭

গত বছরের এপ্রিলে পানামাভিত্তিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকা’র এক কোটি ১৫ লাখ নথি ফাঁস হয়ে যায়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনকুবেরদের কর ফাঁকির গোপন তথ্য প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে রাজনীতিক, তারকা, ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের বিদেশে থাকা অবৈধ অর্থের ফিরিস্তি ছিল। যা বিশ্বজুড়ে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি নামে  দ্রুত পরিচিতি পায়।

বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলানো এই নথিতে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, তার তিন ছেলেমেয়ের নাম উঠে আসে। এরপরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন পাকিস্তানের তৃতীয় মেয়াদে ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসা এই প্রধানমন্ত্রী।

মোসাক ফনসেকার নথি ফাঁস করে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। নথি বিশ্লেষণ করে আইসিআইজে জানায়, অর্থ পাচারে বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্রপ্রধান, ২০০ দেশের রাজনীতিক, খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র তারকাসহ ২ লাখের বেশি মানুষ জড়িত।

নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে পানামা পেপারস ইস্যুতে প্রথমবারের মতো গত বছরের ৫ এপ্রিল নওয়াজ শরিফ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। অফশোর ফার্মে থাকা পরিবারের সদস্যদের অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বিচারবিভাগীয় কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।

বাড়তে থাকা চাপের মুখে আবারও ২২ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নওয়াজ। তিনি বলেন, ‘গোপন করার মতো কোনো কিছু নেই তার। একই সঙ্গে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুতে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান। তদন্তের জন্য আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ঘোষণা দিয়েছি। আমি যদি দোষী সাব্যস্ত হই; তাহলে বাড়িতে ফিরে যাব।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছি। যদিও আমি কোনো দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত নেই। গণতান্ত্রিক একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি মনে করি, বিষয়টি পরিষ্কার করা আমার দায়িত্ব।’

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির জেরে একই বছরের ১৬ মে নওয়াজ শরিফ তদন্ত কমিটি গঠনে পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। পার্লামেন্টে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কিছুর ভয় করি না এবং জবাবদিহিতার জন্য নিজেকে তুলে ধরেছি। পানামা পেপারস তদন্তের বিষয়ে আমি একটি সনদ তৈরির জন্য পার্লামেন্টকে আমার সঙ্গে অংশ নেয়ার অনুরোধ করছি; যা এর আগে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর সঙ্গে সাক্ষর করেছিলাম।’

এ সময় দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার ও বিরোধী দল পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি তদন্তে কমিশন গঠনে সম্মত হয়। ওই বছরের ২০ অক্টোবর পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াত-ই-ইসলামি, জামহুরি ওয়াতান পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শুনানি অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করে।

তবে তদন্তে আদালতের ধীরগতির জন্য ওই সময় হতাশা প্রকাশ করে ইমরান খানের পিটিআই। নভেম্বরে ইসলামাবাদ অচল আন্দোলনের চেষ্টা করে তারা। ওই সময় পিটিআইয়ের প্রতিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় নওয়াজ শরিফ নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকার।

২৮ অক্টোবর পানামা পেপারস ইস্যুতে নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শুনানির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে নওয়াজকে ক্ষমতার অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দিতে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চের কাছে পিটিশন দায়ের করে পিটিআই।

ওই বছরের নভেম্বরে নওয়াজের বিরুদ্ধে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এর আগে এপ্রিলে পাকিস্তানের আদালত নওয়াজকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই বলে জানান। ওই সময় নওয়াজকে অপসারণের দাবির পক্ষে তথ্য সংগ্রহ করতে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠনের আদেশ দেন আদালত।

অবশেষে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় শুক্রবার নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। রায়ে নওয়াজের জামাতা মুহাম্মদ সফদারকে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদে ও অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকেও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

নওয়াজ শরিফ ১৯৮৫ সালে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ১ নভেম্বর প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তানের মসনদে বসেন তিনি। তিন বছরের মাথায় ১৯৯৩ সালে দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয় তাকে।

১৯৯৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরিফ। সেবারও পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা হয়নি নওয়াজের। ১৯৯৯ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান তিনি। তৃতীয়বারের মতো পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন নওয়াজ।

সূত্র : জিও নিউজ, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি