পতাকা বিক্রি করে সন্তানদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে চান খোকন
প্রকাশিত : ২০:৪৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২০:৪৭, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮
পতাকা বিক্রেতা খোকন
মানুষ সারা জীবন সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে। কেউ দারিদ্র্যতার সঙ্গে, কেউ বা প্রকৃতির সঙ্গে। জীবীকা নির্বাহের জন্য মানুষ কত পেশার সঙ্গেই না যুক্ত থাকেন। তবে, পতাকা বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে হয়তো। কিন্তু পতাকা বিক্রি করে সন্তানদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে চান খোকন নামে এক ব্যক্তি। তার ভাষায়, বঙ্গবন্ধু দেশের লাইগা যুদ্ধ করছিল, অামি পোলাপানগো মানুষ করার লাইগা যুদ্ধ করি। আঞ্চলিক ভাষায় এমনটাই জানালেন খোকন।
খোকন ঢাকা শহরে পতাকা বিক্রি করেন। তিনি দীর্ঘ বিশ বছর ধরে মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে পতাকা বিক্রি করে যাচ্ছেন। ঠিক কত সালে পতাকা বিক্রি করা শুরু করেছিলেন তা এখন অার মনে নেই খোকনের। তবে অনুমান করে বলেন, বিশ বছর তো হবেই। তখন হাফ প্যান্ট পড়ত। খালি গা বা স্যান্ডু গ্যান্জি পড়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খেলনা বিক্রি করতো। কিন্তু মার্চ মাস অার ডিসেম্বর এলেই শুরু করতো পতাকা বিক্রি। এখনও সেই মার্চ অার ডিসেম্বর এলেই পতাকা নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়।
খোকনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলের বিপরীতে। সুখী সুখী চেহারা নিয়ে ভাপা পিঠা খাচ্ছিলেন। কেমন অাছেন জানতে চাইলে হাসিমুখে বললেন, ভালো। তারপর অালাপ শুরু।
সারা বছর ভ্যান চালান খোকন। কখনো কখনো দিনমজুরের কাজও করেন। তবে চোখ কান খোলা রাখেন কখন মার্চ মাস অার ডিসেম্বর মাস অাসবে।
জানতে চাইলাম, মার্চ মাস অার ডিসেম্বর মাস কী? লাজুক হাসি দিয়ে খোকন জানায়, "মার্চে যুদ্ধ হইছিল। অনেক লোক মরল।" কার সঙ্গে কার যুদ্ধ এমন প্রশ্ন খোকন বিব্রত ভঙ্গীতে হাসে। পরমুহুর্তে ছটফট করে বলে, " ওই যে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ করল..."
নিজের হাতেই পতাকা বানায় খোকন। নানা অাকারের পতাকা। সবচেয়ে বড় পতাকাটির দাম হাঁকে তিন`শ টাকা। তবে দরদামে কেউ দেড়শ টাকা বললেই তা দিয়ে দেয়। অাজ কাল বেশ কিছু বড় পতাকা বিক্রি হয়েছে। তবে ১৬ তারিখের অাগে অাগে অারও বেশি পতাকা বিক্রি হবে এমন বিশ্বাস খোকনের। ছোট হাত পতাকার দাম ১০ টাকা। এগুলো এক দাম। সারাদিনে হাত পতাকা বিক্রি হয়েছে অনেক।
অামার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ক্রেতাদের পতাকা দেখায় খোকন। এক দম্পতি দুটি হাত পতাকা কিনে নেন। খোকন জানায় তার দুই ছেলে মেয়ে। বড় ছেলে জুয়েল ক্লাস এইটে পড়ে। মেয়ের নাম বীথি। ক্লাস টু`র ছাত্রী। খোকনের ভাষায়, দুটো ছেলে মেয়েই পড়াশুনায় ভালো। অাক্ষেপের সুরে জানায় খোকন, সেই ছোট ঈদে (কোরবানির ঈদ) গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর থেকে এসেছে। কতোদিন যাওয়া হয় না। ছেলে মেয়েরা ফোনে বলে, বাবা এসো। খোকন জানায়, কীভাবে যাবো। অাসা যাওয়ায় প্রচুর খরচ। তার চাইতে টাকা বিকাশ করলেই সুবিধা।
অা অা// এসএইচ/