পথে পথে
প্রকাশিত : ১৯:৫১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
অফিস থেকে বের হয়ে নীচে নামলাম। কদিন থেকে গাড়ী নেই। বাসার সামনে রাস্তা কাটা। ফ্লাটের অন্য বাসিন্দারা বাইরে রেখেছে। আমরা বোকা তাই বুদ্ধি পাইনি। রাস্তায় সিএনজি রিক্সা কিছুই নেই। যাওবা একটা পেলাম কাকরাইল শুনে যাবে না। মনে হলো কাকরাইল যেন চাঁদের দেশে, অনেক দূর। হাঁটতে থাকলাম।
হাতিরঝিল হয়ে হাঁটছি। মোড়ে এসে এক রিক্সা পেলাম। কত ? উত্তর ৮০ টাকা। কেন জানি বললাম ৬০ এ চলেন।
রিক্সা ঘুরিয়ে চলে গেলো। আর কোনো রিক্সা নেই। হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে দেখি এক ছেলে মাটি দিয়ে খেলছে। দুই মহিলা সড়কে বসে মাথায় উকুন দেখছে। দুজনেরই চুল লাল রুক্ষ। হাত পা ফাটা ফাটা। শাড়ি মলিন। এক বাদামওয়ালা বাদাম ভাজছে। মুখ তার বিষন্ন। বাড়ির কথা কি ভাবছে সে? মনে কি পরছে কোনো প্রিয় মুখ!!
পার হয়ে গেলাম। এক ডাবওয়ালা ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । বললাম কত? ৮০ টাকা। ৬০ টাকায় দিবেন ? না। আমি দাঁড়িয়ে আছি। রিক্সা নেই একটাও। একটু পর এক পুলিশ মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছে, কিরে ডাব কত ? ডাবওয়ালা বিগলিত। আসেন স্যার। দিয়েন। আমি ঘার ঘুরালাম ও পুলিশ দেখে কম। ভয় পান ? ডাবওয়ালার মাথা নীচু।
দূরে দেখি এক তরুণ পাগল বসে আছে ঝিলের পাড়ে এক চারকোনা সিমেন্টের স্ল্যাবের উপর। উদাস তার দৃষ্টি। যেন জগতে কেহ নাহি আর। খুবই সুন্দর এক দৃশ্য। আমারও বসে থাকতে ইচ্ছে করলো ওর মতো। পারলাম না। পাগল যা পারে আমি তা পারলাম না। অস্থির হয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। মনটা ভার লাগছে। থাইল্যান্ডে পার্কে দেখেছি একা একা অনেক মেয়েকে বসে থাকতে। এখানে একা বসা যায়না। লোকে পাগল ভাবে।
এক রিক্সা পেলাম। যাবেন? না, কাকরাইলে যাবে না। তবে মগবাজার পর্যন্ত যাবে। ভাড়া ৪০ টাকা। দামদর না করে উঠে পরলাম। গাড়ী, রিক্সা প্যা পু ঠেলে নামলাম মগবাজার।
আবার হাঁটছি। আদ্বদিন হাসপতালের সামনে রিক্সার ভয়াবহ জ্যাম। সব থেমে আছে। রাস্তার একপাশ দিয়ে শুধু হাঁটছি আমি। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হলো। বাহ এইতো এগিয়ে যাওয়া।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে এসে রিক্সা পেলাম। যাবেন ? কত ? ৪০ টাকা। উঠে পরলাম। হাসলাম একা একাই। বেইলী রোড পার হয়ে নওরতন কলোনী পার হয়ে বাসায় এলাম। সব মিলে খরচ কত হলো ? ৮০ টাকা। আজ সব কিছু কেন ৮০ টাকা? নিজেকে বললাম..তুই তো সেই ৮০ টাকাতেই এলি। তাহলে এতো কাহিনী করে হাঁটলি কেন ? প্রথমেই তো নিতে পারতি ? মন বললো, তাতে কি, এই এক ঘণ্টায় তোর যে কত কিছু দেখা হলো! তার মূল্য নেই?
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।