পবিত্র শবেমেরাজের তাৎপর্য ও গুরুত্ব
প্রকাশিত : ১৪:১৮, ২২ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৪:১৯, ২২ মার্চ ২০২০
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের অন্যতম অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো মেরাজ। মেরাজে গমন করে আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে উম্মতের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশসহ ইসলামি সমাজ পরিচালনার দিকনির্দেশনা পেয়েছিলেন মেরাজের রাতে। এ জন্য এ রাতটি মুসলমানের কাছে অতীব গুরুপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে এ সম্পর্কে সূরা বনি ইসরাইলে বর্ণিত হয়েছে, ‘পবিত্র মহামহিম তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে এক রাতে তাঁর অসীম কুদরতে কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য মসজিদুল হারাম থেকে নিয়ে যান বরকতময় পরিবেশপূর্ণ মসজিদুল আকসায়। নিশ্চয়ই তিনি সব শোনেন, সব দেখেন।’
মহানবী (সা.)-এর সব মুজেযার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজেযা হলো মেরাজ। এ রাতে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে নামাজে সব নবীর ইমাম হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালিনের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ফলে এ রাতটি নিঃসন্দেহে তার শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবোজ্জ্বল নিদর্শন বহন করে।
মেরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কাবা শরীফের চত্বর হাতিমে কাবায় অথবা কোনো কোনো গবেষকের মতে, উম্মে হানী বিনতে আবু তালিবের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। এমন সময় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) এসে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে ঘুম থেকে জাগালেন, অজু করালেন। তাঁর বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সীনা মোবারক ধৌত করে শক্তিশালী করেন।
মহানবী (সা.)-এর জীবনে অন্তত তিনবার এমনটা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে তিনি ‘বোরাক’ নামক এক ঐশী বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাস পৌঁছালেন। সেখানে নবীজি (সা.) ‘ইমামুল মুরসালিন’ হিসেবে সব নবী-রাসূলকে নিয়ে দু’রাকাত নফল নামাজের ইমামতি করলেন।
তারপর তিনি বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্ব আকাশে গমন করলেন। একের পর এক আসমান অতিক্রম করতে থাকেন। পথিমধ্যে হযরত মূসা (আ.)সহ অনেক নবী-রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সপ্তম আসমানের পর নবীজি (সা.)কে বায়তুল মামুর পরিদর্শন করানো হয়। এর পর হযরত স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেন।
বায়তুল মামুরে রাসূলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.)কে রেখে তিনি ‘রফরফ’ নামক আরেকটি ঐশী বাহনে চড়ে আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজির হন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, মেরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে দু’জনের মধ্যখানে মাত্র এক ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল। এখানে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হলো। পরবর্তী সময়ে পুনঃ পুনঃ আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহপাক দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতে মুহাম্মদির ওপর ফরজ করেন। যা ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম রুকন বা ভিত্তি। আর এই নামাজই মানুষকে যাবতীয় পাপাচার ও অনাচার থেকে রক্ষা করে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে তৈরি করে।
আল্লাহতায়ালা এক বিশেষ উদ্দেশ্যে অর্থাৎ তাঁর মহান কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সপক্ষে এক বিরাট আলামত, জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মুমিনদের জন্য জ্বলন্ত প্রমাণ, হেদায়েত, নিয়ামত ও রহমত, ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানার্জন, সৃষ্টিজগতের রহস্য উন্মোচন, সরাসরি বেহেশত-দোজখ দেখা, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সঙ্গে পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও পরিচিতি, সুবিশাল নভোমণ্ডল ভ্রমণ, মহাকাশ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম প্রভৃতি সামনাসামনি দেখিয়ে দেয়ার জন্য তার প্রিয় হাবিবকে নিজের একান্ত সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছিলেন; যাতে তিনি প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করতে পারেন।
আল্লাহ রাসূল (সা.)কে ইসলামের বাস্তবায়ন রূপরেখা, ভবিষ্যতের কর্মপন্থা এবং মুমিনদের জন্য সর্বোত্তম ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ামতস্বরূপ দান করেন। সে জন্য বলা হয়েছে, নামাজ মুমিনদের জন্য মিরাজস্বরূপ। ইসলামের প্রত্যেকটি ইবাদতের বিধান আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু নামাজই একমাত্র ইবাদত যা কোনো মাধ্যম ছাড়া আল্লাহতায়ালা সরাসরি মহানবী (সা.)-এর ওপর ফরজ করেছেন। সুতরাং আমাদের উচিত হলো সমাজে নামাজ কায়েম করতে সচেষ্ট হওয়া।
মিরাজের রাত অতি বরকতময় একটি রাত। এ রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগি করা অলি-বুজুর্গদের স্বভাব। সুফিরা এ মহামিলনের রাতকে নিজেদের মুক্তির জন্য অসিলা মনে করতেন। আজ বিশ্বব্যাপী যে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে, এ সময় এমন একটি সোনালি রাত নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। এ রাতে আমরা খোদার দরবারে কেঁদে তওবা করব। নবীজির মেরাজকে অসিলা করে বিশ্ববাসীর মুক্তি ও শেফার জন্য দোয়া করব। নিশ্চয়ই, আল্লাহতায়ালা আমাদের দোয়া কবুল করবেন।
এএইচ/