পবিত্র হজের খুতবায় যা বললেন আশ শিছরি
প্রকাশিত : ০২:৩৩, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১২:১১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
পবিত্র মক্কা ও মদিনা থেকে মিনায় ২০ লাখ হজযাত্রীর রওনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয় হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা। মক্কার অদূরে মিনার আরাফাত ময়দানে জড়ো হয়ে ২০ লাখ মুসল্লির কন্ঠে ধ্বনিত হয় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’। এই আরাফাত ময়দানে ১৪৩৮ হিজরীর হজের খুতবা দিয়েছেন খতিব সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সদস্য ড.সাআদ বিন নাসের আশ শিছরি।
আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরায় এই খুতবা দেন আশ শিছরি। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৩টা ২৫) খুতবা শুরু হয়। চলে প্রায় ২৫ মিনিট।
খুতবায় তিনি বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা তাকওয়া অর্জন কর। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা তাকওয়া অর্জন কর।
আল্লাহ যা নির্দেশ করেছে তা মানার চেষ্টা কর। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। তাওহিদ হচ্ছে মুসা, ঈসা ও মোহাম্মদের দ্বীন। তাওহীদ হচ্ছে আল্লাহকে এক ইলাহ বলে মানা। তার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।
হে মানুষ সকল, নিশ্চয়ই নাজাত ও মুক্তির পথ হচ্ছে ঈমান। রাসূল সা. আরকানুল ঈমানে বলেন, আল্লাহ তাআলার ওপর ঈমান আনো। রাসুলদের প্রতি ঈমান আনো। কিতাবের প্রতি ঈমান আনো।
হে মুমিনগণ! সালাত হচ্ছে দ্বীনের খুঁটি। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা নামাজের হেফাজত কর। জাকাত আদায় কর। এতে রয়েছে হৃদয়ের পবিত্রতা। চতুর্থ রোকন হচ্ছে, সিয়াম পালন করা। পঞ্চম রোকন হচ্ছে, হজ আদায় করা। হজ্জে মাবরুরের প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত। রাসুল সা. হজ আদায় করেছেন।
খতিব সবার উদ্দেশ্যে বলেন, হে মুমিনগণ! একে অপরকে সাহায্য করাই হচ্ছে দ্বীনের সৌন্দর্য। ইহসান ও একে অপরের প্রতি দয়া করা।
শরিয়তে বাবা মায়ের সাথে সুন্দর আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্তানদের সাথে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খারাপ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন মুমিন রক্ত ঝরাতে পারে না। নিশ্চয় প্রত্যেক মুসলিম একে অপরের নিরাপত্তার সহযোগী। যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের রক্ত ঝরাবে না। ওয়াদা ঠিক রাখা মুমিনের অন্যতম কাজ। মুমিনের কাজ হচ্ছে ওয়ালিউল আমরের কথা ঠিকভাবে মান্য করা। মুমিনের কাজ হচ্ছে অঙ্গীকার ভঙ্গ না করা।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তারা কী দেখে না যে আল্লাহ তাআলা হারামকে (মসজিদুল হারাম)নিরাপদ বানিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দিসকে নিরাপদ রাখুন।
হে মানুষ সকল, রাসুল সা. তার বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, আমার পায়ের নিচে জাহিলিয়াতের সব বিষয় রাখা হলো। অতএব কোনো ধরনের জাহেলি কাজ ইসলাম সমর্থন করে না। হজ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও ওমরা কর।
অতএব, এখানে কোনো দলীয় ব্যানার ও মিছিল বা প্রচারেরর কোনো সুযোগ নেই।
হে শাসকবর্গ! তোমাদের সামনে কোরআন রয়েছে। শাসনের জন্য, দেশ পরিচালনার এই কোরআনই যথেষ্ট।
হে ওলামায়ে কেরাম! আপনাদের সামনে রয়েছে কোরআন ও সুন্নাহ। অতএব সবক্ষেত্রে কোরআন সুন্নাহ অনুসরণের চেষ্টা করুন।
মিডিয়া কর্মীদের উদ্দেশ্যে খতিব বলেন, আপনারাও দ্বীনের জন্য কাজ করার চেষ্টা করুন।
মুরব্বি ও পিতা মাতাগণ, সন্তানের ব্যপারে সতর্ক হোন।
হে হাজিগণ! আপনারা জানেন, আপনারা সকলেই মর্যাপূর্ণ স্থানে মর্যাদপূর্ণ সময়ে রযেছেন। আজ ইয়াওমু আরাফা। দোয়া কবুল হওয়ার সময়। তাই নিজেদের জন্য চাইতে থাকুন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করুন। হে আল্লাহ, তুমি খাদেমূল হারামাইনের হায়াতে বরকত দান কর।
হে আল্লাহ! তুমি হাজিদের হজ কবুল কর, তাদেরকে নিরাপদে রাখ।
খুতবার পর মসজিদে নামিরায় একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন হাজিরা। সূর্যাস্থ পর্যন্ত এখানে অবস্থানের পর রাতে হাজিরা যান মুজদালিফায়। সেখানে রাতে অবস্থানের পর আজ শুক্রবার মিনায় গিয়ে কোরবানি ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন হাজিরা।
সূত্র: আরব নিউজ, সৌদি গেজেট।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন