পরকীয়ার অভিযোগে আটক ব্যক্তি ছাত্রশিবিরের উপজেলা সেক্রেটারি, বহিষ্কার করল দল
প্রকাশিত : ১৪:৩৯, ১৬ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৪৩, ১৬ মার্চ ২০২৫

সম্প্রতি বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাইনুল ইসলাম পলাশ পরকীয়া করতে গিয়ে আটক হওয়ার একটি ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তি ছাত্রশিবিরের কেউ নয় এমন একটি দাবি প্রচার হতে দেখা গেছে। একই দাবিতে ‘মসজিদের ইমামকে ছাত্রশিবিরের নেতা বানিয়ে অপপ্রচার’ শীর্ষক শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া আরও কয়েকটি নিউজ পোর্টাল তাকে গৌরনদী উপজেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করে।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বরিশালের গৌরনদীতে প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার অভিযোগে আটক হওয়া ব্যক্তি মাইনুল ইসলাম পলাশ ছাত্রশিবিরের কেউ নয় এমন দাবিটি সঠিক নয়।
মাইনুল ইসলাম পলাশ গৌরনদী ছাত্রশিবিরের ২০২৫ সালের চলমান কমিটির উপজেলা সেক্রেটারি। গত ৪ জানুয়ারি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি উপজেলা সেক্রেটারি হিসেবে ছিলেন। সাম্প্রতিক ঘটনার পর নৈতিকতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আজ ১৫ মার্চ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Md Turjaun’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৪ জানুয়ারি প্রচারিত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির গৌরনদী উপজেলার ২০২৫ সেশনের নবনির্বাচিত কমিটির বিষয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবি গৌরনদী উপজেলার ২০২৫ সেশনের নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক (মূলত সেক্রেটারি) হিসেবে মাইনুল ইসলাম পলাশ নামের ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়।
একই তথ্য পাওয়া যায় ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গৌরনদী উপজেলা’ নামের একটি ফেসবুক পেজের গত ৪ জানুয়ারির একটি পোস্টে। এই পেজটি তাদের ফেসবুক বায়োতে নিজেদের ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গৌরনদী উপজেলার একমাত্র অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
পোস্টটিতে বলা হয়, গৌরনদীতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর-২০২৫ সেশন এর উপজেলার দায়িত্বশীল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির গৌরনদী উপজেলার ২০২৫ সেশনের নবনির্বাচিত কমিটির সম্মানিত সভাপতি- মোঃ সাইফুল ইসলাম সজল এবং সেক্রেটারি মোঃ মাইনুল ইসলাম পলাশ সাথীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আরেক ব্যক্তির পোস্ট পাওয়া যায়, যেখানে পোস্টের ক্যাপশনে গৌরনদী উপজেলার নবগঠিত ছাত্রশিবিরের কমিটিতে সেক্রেটারি হিসেবে মাইনুল ইসলাম পলাশের নাম উল্লেখ করা হয় এবং পোস্টে সংযুক্ত ছবিতে সেক্রেটারিসহ নবনির্বাচিত কমিটির কয়েকজন সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়। ছবির ‘সেক্রেটারি’ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তির সাথে পরকীয়া করতে গিয়ে আটক ব্যক্তির চেহারার মিল বা সাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হয়।
এদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়ে গৌরনদীতে র্যালি’ শীর্ষক শিরোনামে ‘বাংলাদেশের খবর’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গৌরনদী উপজেলা শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে মাইনুল ইসলাম পলাশের নামই দেখা যায়।
ফলে, আপত্তিকর অবস্থায় আটক হওয়া মাইনুল ইসলাম পলাশ গৌরনদী উপজেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের চলমান ২০২৫ সেশনের ‘সেক্রেটারি’ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরিশাল জেলার পক্ষ থেকে আটক ওই ব্যক্তির সাংগঠনিক পদ বাতিল এবং বহিষ্কার করার ঘটনা থেকে। আজ ১৫ মার্চ ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বরিশাল জেলা’ ফেসবুক পেজ থেকে ওই ব্যক্তির সাংগঠনিক পদ বাতিল ও বহিষ্কার প্রসঙ্গে একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আটক ব্যক্তি মাইনুল ইসলাম পলাশকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ছাত্রশিবিরের উপজেলা সেক্রেটারি এবং সাথী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বরিশাল জেলার সভাপতি আকবর হোসেন স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদর্শ, শৃঙ্খলা ও ইসলামী নৈতিকতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগে বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার ‘সাথী’ ও উপজেলা সেক্রেটারি মাইনুল ইসলাম পলাশকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার (বাতিল) করা হয়েছে।’
সুতরাং, গৌরনদীতে পরকীয়া করতে গিয়ে আটক হওয়া ব্যক্তি মাইনুল ইসলাম পলাশ বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের গৌরনদী উপজেলার চলমান কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। এছাড়াও তিনি মসজিদের ইমাম ছিলেন বলে জানা যায়। তাই, আটক মাইনুল ইসলাম পলাশ শিবির নয়, কিংবা ইমামকে শিবির হিসেবে প্রচার করা হয়েছে কিংবা তিনি সাবেক শিবির এই দাবিগুলো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।
এএইচ