ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

পরমুখাপেক্ষিতা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বড় অন্তরায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আমাদের মধ্যে এক ধরণের চিন্তা আছে মামা-চাচা না হলে কোথাও চাকরী হয় না। আমাদের অগ্রগতির পথে একটা বড় বাধা হতে পারে অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় থাকার মানসিকতা এবং তার ফলে নিজের কাজে নামা থেকে বিরত থাকা। অথচ যে নিজে উদ্যোগী হয়, ভাগ্য বলি, নিয়তি বলি-তা তার সহায় হয়। আপাত ব্যর্থতা, প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সে এগিয়ে যেতে পারে সামনের দিকে। এ নিয়ে এক শিক্ষার্থীর জীবনের গল্পই কিছুদিন আগে পত্রিকাতে এসেছে। ছেলেটি এখন পড়ছে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

তিন বছর আগে তার সামনে ছিল এক কঠিন বাস্তবতা। এইচএসসি-র রেজাল্ট বেরুলো। সে পেয়েছে ৪.১০। একা একা একটি ঘরে বসে সে তখন ভাবছে সামনে কী হবে! কারণ, তার অন্য বন্ধুরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারছে। এদিকে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতাও সে হারিয়েছে। তার সামনে শুধু আইবিএ-র পথ খোলা। ওদিকে সে অংকে কাঁচা ছিল বলে তার কাছের বন্ধুরা বলছিল, আইবিএ-র জন্যে চেষ্টা করাটা বোকামি হবে। কারণ, প্রথমদিন ভর্তি কোচিংয়ে গিয়ে মাত্র ২০টা সমস্যার সমাধান করতে তার প্রায় আড়াই ঘণ্টা লেগেছিল। তারও মনে হলো, আমি কোনো ভুল করতে যাচ্ছি না তো! একসময় মনকে শক্ত করল সে। শুরু করল অনুশীলন। প্রতিদিনের অংক সমাধানের জন্যে টার্গেট ঠিক করত, প্রতিদিনই সেই টার্গেট পূরণের চেষ্টা করত। একদিনও সে অনুশীলন বাদ দেয় নি। করেই গেছে, করেই গেছে। ফলে দিনে দিনে আরো নিখুঁতভাবে সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। যেদিন আইবিএ-র ভর্তি পরীক্ষার ফল বেরুলো, নিজের চোখকে বিশ্বাস করানোর জন্যে দ্বিতীয়বার তাকে ফলটি দেখতে হয়েছে। সে দেখল, তার রোল নম্বরটি সেখানে আছে। 

আসলে সফল মানুষেরা তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা নেন এবং অবস্থা বদলাবার জন্যে নিজেরা উদ্যোগ নেন। তারা বিশ্বাস করেন প্রতিকূলতা যতই থাকুক সেটাকে তারা অতিক্রম করতে পারবেন। অন্যদের অপেক্ষায় না থেকে তারা নিজেরাই শুরু করে দেন। আর ব্যর্থরা তাদের ব্যর্থতার জন্যে বাহ্যিক অবস্থাকে দায়ী করে। তারা ভাবে অমুকে তাকে সাহায্য করবে। অমুক একটু দেখলে বোধ হয় তার অবস্থা এরকম হতো না। তার তো কেউ নেই, তাই তার হবে না। কিন্তু যে নিজের অবস্থা পরিবর্তনের জন্যে উদ্যোগ নেয় না, তার অবস্থা কেউ বদলাতে পারে না। এই পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটাও একটি বড় সিদ্ধান্ত। 

তাই শান্তভাবে মনের গভীরে খুঁজে দেখা প্রয়োজন যে, আমার মন কী চাইছে বা আমার মন কী বলছে। এক্ষেত্রে মন ছবি ঠিক করে নেয়া হতে পারে সবচেয়ে বড় সহায়ক। কেননা, মেডিটেশন বিক্ষিপ্ত মনকে প্রশান্ত করে, অস্থির চিন্তাকে স্থির করে। কারণ চিত্ত যদি বিক্ষিপ্ত থাকে, তা বুদ্ধিবিভ্রম সৃষ্টি করে। আর বুদ্ধিবিভ্রম নিয়ে কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। 

আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে এরকম অনেক অনেক মুহূর্ত আসে সিদ্ধান্ত নেয়ার। সেগুলো যেন সঠিক হয়, সময়মতো সে সিদ্ধান্তগুলো যেন আমরা নিতে পারি, সেজন্যেই এখন থেকে গভীর মন ছবি দেখা বা মেডিটেশনের স্তরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। যদি মেডিটেশন করার পর্যাপ্ত সময় হাতে না থাকে, তাহলে মুহূর্তে নিজেকে শান্ত করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করা যায়। মুহূর্তে নিজেকে শান্ত করার প্রক্রিয়া হলো-কয়েকবার বুক ফুলিয়ে লম্বা দম নিয়ে ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। তারপর মনকে জিজ্ঞেস করুন-মন এই মুহূর্তে আমার কী করণীয়? দেখবেন, মন খুব সুন্দরভাবে গাইড করছে।

আরকে// 
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি