৩৮ তম বিসিএস প্রিলি
পরিশ্রম ও মানসিক প্রস্তুতিই পাশের মূলমন্ত্র
প্রকাশিত : ১৬:২৭, ২১ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:০৬, ২৩ নভেম্বর ২০১৭
৩৬তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডার মো. শহীদুল ইসলাম
ক’দিন পরেই ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। দেশের প্রায় তিন লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত চাকরির আশায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন এ পরীক্ষায়। এ সময়ে নিশ্চয়ই ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন বিসিএস প্রত্যাশী বন্ধুরা।
কিভাবে এ স্বল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে পারেন- এ বিষয়ে ইটিভি অনলাইনের মাধ্যমে পাঠকদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শহীদুল ইসলাম সাঈদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন। শহীদুল ইসলাম মনে করেন, পরিশ্রম ও মানসিক প্রস্তুতি পাশের মূলমন্ত্র। শহীদুল ইসলামের টিপসগুলো পাঠকদের উদ্দেশে তোলে ধরেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান -
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিতে পারলে সফল হওয়া সম্ভব। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যখন পরিশ্রম যুক্ত হবে তখন সাফল্য খুব সহজেই ধরা দেবে। আর এ জন্য সর্ব প্রথম ভয় দূর করতে হবে।
৩৮তম প্রিলির জন্য এ পর্যন্ত যতটুকু পড়া হয়েছে ততটুকু ভালোভাবে রিভাইস দেওয়া হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। যে বিষয়গুলোতে দুর্বলতা আছে সে বিষয়গুলো বার বার রিভিশন দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
পড়াশুনার পাশাপাশি শরীরেরও যত্ন নিতে হবে। কেননা শরীর সুস্থ না থাকলে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়। প্রিলিতে যেহেতু অনেক বেশি প্রতিযোগি অংশ নেয়, সেহেতু প্রিলির জন্য নিজেকে ওইভাবেই প্রস্তুত করে নিতে হবে। পড়ার সময় যে বিষয়টি কঠিন মনে হবে সে বিষয়টি মার্ক করে পড়া যেতে পারে। তবে লিখে লিখে পড়লে তা বেশি কাজে দেবে। এবার আসা যাক বিষয় ভিত্তিক কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন সে বিষয়ে।
বাংলা: ৩৫
বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রথম সারির কবি-সহিত্যিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এছাড়া প্রধান প্রধান সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে ধারনা থাকতে হবে। প্রিলিতে ভালো করতে হলে বিসিএসসহ পিএসসির নন-ক্যাডার ও অন্যান্য সরকারি চাকরিতে আসা বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। কেননা বিগত বছরের প্রশ্নপত্র থেকে পরীক্ষাতে অনেক প্রশ্ন কমন পড়ে।
অন্যদিকে ব্যাকরণের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে। বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক সম্পর্কে প্রতিবছর প্রশ্ন আসে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম জেনে রাখতে হবে।
ইংরেজি: ৩৫
প্রথমেই বিগত বছরের বিসিএস ও পিএসসির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে রিভাইস দিতে হবে। ইংরেজির জন্য বিসিএসের সিলেবাসের আলোকে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রয়োজনে লিখে লিখে পড়া যেতে পারে। এতে গ্রামারের নিয়মগুলো সহজেই আয়ত্বে আসতে হবে। অন্যদিকে ইংরেজির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইংরেজি শব্দ ভাণ্ডার। ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখতে হবে। ইংরেজি সাহিত্যের ক্ষেত্রে বড় বড় সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তবে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়া থাকলে এক্ষেত্রে ভালো করা সম্ভব।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা :(১৫+১৫)
গণিতের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বার বার অনুশীলন। কেননা অনুশীলন ছাড়া গণিত বিষয়টিতে ভালো করা সম্ভব নয়। তাই কোনো গাফলতি না করে বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণির গণিতসহ উচ্চতর গণিত বইটি ভালোভাবে শেষ করতে হবে। গণিত অনুশীলনের সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। কেননা পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
মানসিক দক্ষতা অংশে ভালো করার জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগসহকারে পড়তে হবে। এজন্য বাজারে প্রচলিত জব সল্যুশনগুলোর একটি বইটি ভালোভাবে সমাধান করতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান: ৫০
সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সম্পর্কে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলা পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতা, সম্পাদকীয় ও মতামত, আন্তর্জাতিক, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিষয়গুলো পড়তে হবে। পত্রিকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে।
এছাড়া অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও সরকারি বিভিন্ন জরিপের প্রয়োজনীয় অংশ পড়তে হবে। বাংলাদেশ অংশের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন আন্দোলন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রাচীন স্থাপত্যের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো করার জন্য নবম ও দশম শ্রেণির ইতিহাস বইটি পড়া যেতে পারে।
সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি: (১৫+১৫)
নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে। এছাড়াও বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে পরলে বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো করা সম্ভব।
কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ভালো করতে হলে বিগত সালের প্রশ্নগুলো পড়ার পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞান লাভের মাধ্যমে আইসিটি বা কম্পিউটার বিষয়ে প্রস্তুতি নিলে ভালো করা সম্ভব হবে।
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা :১০
এ বিষয়ে ভালো করতে হলে মানিচিত্রের জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ এছাড়াও ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে নবম দশম শ্রেণির ভুগোল বইটি পড়ার পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত একটি বই পড়া যেতে পারে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হবে ।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন: ১০
এ বিভাগের প্রশ্নের উত্তরগুলো শতাভাগ নিশ্চিত না হয়ে দেয়া উচিত নয়। কেননা প্রশ্নের উত্তরের অপশনগুলো প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
এসএইচ/ এআর
আরও পড়ুন