ঢাকা, সোমবার   ০৩ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পলাতক দলটি দেশকে অস্থিতিশীল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে: ড. ইউনূস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩২, ৩ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা দেশটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। আজ সোমবার (৩ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যমটি। 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায় সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। 

একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির প্রশ্নেও।

আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গেছে বলে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, “আমার কোনো চিন্তা ছিল না, ভাবনা ছিল না যে আমি হঠাৎ করে একটা সরকারের প্রধান হবো, দায়িত্ব পাবো। এবং সেই দেশ এমন দেশ, যেখানে সব তছনছ হয়ে গেছে। কোনো জিনিস আর ঠিকমতো কাজ করছে না। যা কিছু আছে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে।”

“কাজেই আমার প্রথম চেষ্টা ছিল সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে আসল চেহারাটা বের করে আনা। মানুষের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে আনা। সেই চেষ্টাটার মধ্যে ছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে ভবিষ্যতটা কী হবে, সেটার জন্য চিন্তা করা – কোনদিকে আমরা অগ্রসর হবো।”

ড. ইউনূস বলেন, “যে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসেছিলাম, তার নতুন চেহারা আসছে। ভেসে উঠছে যে, আমরা অর্থনীতি সহজ করেছি। দেশ-বিদেশের আস্থা অর্জন করেছি। এটাতো পরিষ্কার- সারা দুনিয়ায় আমরা আস্থা স্থাপন করতে পেরেছি। এটা কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না যে আমি অমুক দেশের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। যে দেশেই বলুন, তারা আমাদের উপর আস্থা স্থাপন করেছে। শুধু আস্থা স্থাপন করেছে না, বিপুলভাবে করেছে। তারা বলছে আমরা অতীতে যা করি নাই তারচেয়ে বেশি করবো এখন, যেহেতু আমরা দেখছি যে সুন্দরভাবে সরকার চলছে এখন। সেইজন্য তারা বলছে।“

“কাজেই এটা একটাতো বড় প্রমাণ। যখনই আপনি দেশের সারিগুলা দেখবেন- প্রত্যেকটা দেশ নিজে এসে বলেছে, আমরা তোমাদের সমর্থন করছি। তোমাদের যা দরকার আমরা দেবো। অবিশ্বাস্য রকমের সহায়তা দিয়েছে তারা।”

তিনি বলেন, “দেশের মানুষের আস্থা আমাদের উপর আছে। বিপুল পরিমাণে আছে। কাজেই সেটা হলো বড় প্রমাণ। আমরা কী করছি না করছি- এগুলো খুচরো বিষয় আছে। আমাদের খুচরো বিষয় এটাতে ভালো, ওটাতে মন্দ- কিছু ভালো, কিছু মন্দ, হতে থাকবে। এটা একটা অপরিচিত জগৎ, আমরা এসেছি। আমরা কোনো এক্সপার্ট এখানে এসে বসি নাই। আমরা এসেছি যার যার জগৎ থেকে এসেছি, নিজের মতো করে চেষ্টা করছি কীভাবে করতে পারি। তারমধ্যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। কিছু ভালো করেছে, কিছু ভালো করতে পারেনি। এটা হতে পারে। এটা আমিতো অস্বীকার করছি না।”

“আমরা চেয়েছিলাম যে এখনই আমরা সংলাপটা শুরু করবো। এটাও পারি নাই। সংলাপ শুরু হতে হতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো সময়মতো আমরা করতে চেয়েছি, ওই সময়ে করতে পারিনি। আমরা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছি। আমাদেরকে ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের রিপোর্ট দেয়ার কথা। তারা দিতে পারে নাই। আমি অভিযোগ করছি না। কারণ বিশাল একটা কাজ। আরেকটু সময় চেয়েছে- এক মাস, দুই মাস। ওইটুকু একটু পিছিয়ে গেছে। এগুলো আর কী। কাজ করতে গেলে যা হয় “

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চেষ্টা করছি আমরা। সমস্যা আপনিও জানেন, আমিও জানি। প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুইদিন আগে তারা এদেরকে গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতে করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়মশৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকবো।

ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সরকার কি সহায়তা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “না, সরকার কোনো সহায়তা করে না। যে রাজনীতি করতে চায়, সে নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল সরকারের ভেতরে। যিনি রাজনীতি করতে মন স্থির করেছেন, তিনি ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে চলে গেছেন। উনি প্রাইভেট সিটিজেনশিপে রাজনীতি করবেন, কার বাধা দেওয়ার কী আছে?”

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ থেকে হুমকি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “অবশ্যই, এটাতো অবভিয়াস। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। এড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে। এই যে এড্রেস করছে। জাগো, কাজে নামো ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক আহ্বান জানাচ্ছে না- কর্মসূচি দিচ্ছে, হরতাল করো, অমুক করো। মানুষ কীভাবে নেবে এটাকে বলেন? এটা কি মিষ্টি মুখে চলে যাবে সব?”

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।”

“বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারবো না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ভারতের সাথে সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। তারা এখানে আসছে, আমাদের লোকজন সেখানে যাচ্ছে। প্রাইম মিনিস্টার মোদীর সঙ্গে আমার প্রথম সপ্তাহেই কথাবার্তা হয়ে গেছে।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি