ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানী জাহাজে করে ‘অস্ত্র আনার’ দাবিটি ভিত্তিহীন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:০৯, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ও ফেসবুকে গত ২০ ডিসেম্বরে দাবি প্রচার করা হয়েছে, আরেকটি কার্গো জাহাজ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছাবে (পৌঁছেছে) এবং চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করবে (করেছে)। এতে ৮২৫টি একক কন্টেইনার (২০ ফুট) আছে। একটি সূত্র অনুযায়ী, অন্তত তিনটি কন্টেইনারে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং অস্ত্র রয়েছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্য নিয়ে নির্ধারিত সময়ের এক দিন পর গতকাল (২১ ডিসেম্বর) ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ নামের একটি কনটেইনার জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছেছে। তবে, জাহাজটিতে করে রাইফেল ও অস্ত্র আনা হয়নি বরং পরিশোধিত চিনি, ডলোমাইড, সোডা অ্যাশ, কাপড়ের রোল, লোহার টুকরা, রেজিন, থ্রি–পিস ইত্যাদি পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গতকাল (২১ ডিসেম্বর) ‘পাকিস্তান থেকে সেই জাহাজে এবার যা যা এল’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্য নিয়ে নির্ধারিত সময়ের এক দিন পর গতকাল শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল পাঁচটার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ নামের জাহাজ। পাকিস্তান থেকে এবার সবচেয়ে বেশি এসেছে পরিশোধিত চিনি। মোট ২৮৫ কনটেইনারে ১ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ ব্যাগ চিনি আনা হয়েছে। চিনির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টন। চিনির পর পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে ডলোমাইট। ডলোমাইট আমদানি হয়েছে ১৭১ কনটেইনারে। পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া আরেকটি পণ্য হলো সোডা অ্যাশ। এই পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩৮ কনটেইনারে। 

এছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো এনেছে কাপড়ের রোল। মোট ৪৬টি কনটেইনারে রয়েছে কাপড়ের রোল। আলু আমদানি হয়েছে ১৮ একক কনটেইনারে। এ ছাড়া জয়পুরহাটের পিঅ্যান্ডপি ট্রেডিং ২০ কনটেইনারে আখের গুড় এনেছে। এসব পণ্যের পাশাপাশি পুরোনো লোহার টুকরা, রেজিন, থ্রি–পিস ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়েছে। পাকিস্তান ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে পণ্য। আমিরাত থেকে আনা হয়েছে খাদ্যপণ্য, খেজুর, লুব অয়েল, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি। পাকিস্তানের পাশাপাশি আমিরাত থেকেও ১০ কনটেইনার চিনি আমদানি হয়েছে। তবে, প্রতিবেদনটিতে অস্ত্র আমদানির বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এডিশনাল কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞার সাথে৷ তিনিও নিশ্চিত করেন, জাহাজটিতে করে অস্ত্র আমদানির দাবিটি ভুয়া।

উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু হয়েছিল গত নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথমবার ৩৭০ একক কনটেইনার আনা হয় জাহাজটিতে করে। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আনা হয় ২৯৭ একক কনটেইনার, বাকিগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। সেসময়ও চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজটি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ির শুরু হলে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজটিতে করে অন্যান্য দ্রব্যের পাশাপাশি রাইফেল ও অস্ত্র আনা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। 

তথ্যসূত্র

Prothom Alo – পাকিস্তান থেকে সেই জাহাজে এবার যা যা এল
Dhaka Post – ফের জাহাজ এলো পাকিস্তান থেকে, এবার রয়েছে যেসব পণ্য
Statement of Mohammad Tofsir Uddin Bhuiyan, Additional Commissioner, Chittagong Custom House
Rumor Scanner’s own analysis

এসএস//
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি