ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

পাখি বিহীন বিলে মাছ নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:২০, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের যে বিলগুলোতে পাখি দেখা যায় না, সেই বিলগুলিতে কোন মাছ নেই বলে জানিয়েছেন পাখি গবেষক ইনাম-আল হক। “মানুষের একটি সাধারণ ধারণা আছে যে, বিলের পাখিগুলো সব মাছ খেয়ে ফেলে, কিন্তু এটা সত্য নয়। বিলের পাখি কোন মাছ খায় না, খায় মাইক্রোস্কপিক জুপ্লাংকটন ও ফাইটোপ্লাংকটন। আর এসব উদ্ভিদ খেয়ে তারা যে মলত্যাগ করে, তা খেয়েই মাছ বেঁচে থাকে” বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশে পাখি ও প্রকৃতি বিষয়ক গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক গত ৪ ডিসেম্বর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘পাখি ও প্রকৃতি’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এম শমশের আলী।

বাংলাদেশের বিলগুলিতে পাখির অবদান তুলে ধরে ইনাম-আল হক বলেন, পাখির মল হচ্ছে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় এক লক্ষ পাখি আছে। এই পাখিগুলো যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম জলজ উদ্ভিদ খায়, তাহলে প্রতিদিন প্রায় ৫০ গ্রাম করে তারা মলত্যাগ করে। এতে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিদিন পাঁচ টন সার পড়ছে বলে দাবি করেন তিনি। আর শুধু এ কারণেই টাঙ্গুয়ার হাওর মৎস্য সমৃদ্ধ বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশে ১১ হাজার বিল আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১১ হাজার বিলে আমাদের কি সার দেওয়া সম্ভব ছিল? ছিল না । তবে এই সার দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে পাখিরা । মূলত,পাখিরা নীরবে নিঃস্বার্থ সেবা দিয়ে যাচ্ছে মানবজাতিকে, যা আমরা টেরও পাচ্ছি না। এসময় তিনি বলেন, দেশে প্রতি বছর বিলগুলিতে ২৫ প্রজাতির হাঁস আসে। অনেকেই মনে করেন, এগুলি বিলের মাছ খেয়ে ফেলে, কিন্তু এটা সত্য নয়। আসলে এ হাঁসগুলোর ঠোঁট এত চ্যাপ্টা যে মাছ ধরে খাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা মূলত খায় মাইক্রোস্কপিক জুপ্লাংকটন ও ফাইটোপ্লাংকটন। ডিমওয়ালা মাছ খেয়ে আমরা নিজেরাই আসলে বিলের মাছ শেষ করেছি।

এদিকে অরণ্যের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বেঁচে আছি পৃথিবীর সব অরণ্যের ওপর নির্ভর করে। গাছের পাতা থেকে পাওয়া অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। তবে এই পাতা পোকামাড় নষ্ট করে ফেলে। তবে ফুটকি নামের এক জাতের পাখি আছে যারা এ পোকা-মাকড়গুলো খেয়ে ফেলে পাতাকে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে। আর এই ফুটকি পাখি আসে সাইবেরিয়া থেকে। প্রতি বছর শীতকালে প্রায় পাঁচ কোটি ফুটকি পাখি সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে বাংলাদেশে।

পৃথিবীর ৭০ শতাংশ পাখি পোকামাকড় খায়। বাকিরা মাংসাশী আর মাত্র ৫ শতাংশ শস্য ও ফল খায়। প্রকৃতির ভারসাম্য বলতে বোঝায়- এখানে গাছ থাকতে হবে, পাখি থাকতে হবে, পোকাও থাকতে হবে। কিন্তু কোনোটির পরিমাণই বেশি হওয়া যাবে না। তবেই আমরা মানুষেরা টিকে থাকব। প্রকৃতির এই ভারসাম্য বজায় রাখছে পাখি। তাই আমরা আসলে সরাসরি পাখির ওপর নির্ভরশীল। পাখি বাঁচিয়ে রেখেছে পৃথিবীর অরণ্যগুলোকে।

এদিকে সমাপনী বক্তব্যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম শমশের আলী বলেন, আমাদের জীবন ও পরিবেশের সাথে পাখি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও বার বার এসেছে পাখির প্রসঙ্গ। হযরত সোলায়মানের সাথে হুদহুদ পাখির ঘটনায় আমরা দেখি, রাজার সভাসদও হতে পারে পাখি। কারণ হুদহুদ পাখি ছিল সোলায়মানের সভায় বার্তাবাহক। আবার হযরত দাউদের সাথে পাখিরাও আল্লাহর গুণগান গাইত। ছোট ছোট আবাবিল পাখিরা মিলে যুদ্ধ করেছিল পবিত্র কাবাঘর রক্ষায়। এই আবাবিল পাখি আমি দেখেছি বান্দরবানের লামার কোয়ান্টামমে গিয়ে।

পাখিদের কাছ থেকে শৃঙ্খলা শিখতে হবে জানিয়ে ড. শমসের আলী বলেন, আমরা যখন বাসে-ট্রেনে যাতায়াত করি তখন প্রায়ই ভিড় লেগে যায়, ধাক্কাধাক্কি হয়। কিন্ত লক্ষ লক্ষ পাখি একসাথে উড়ে গেলেও সেখানে একটা অনবদ্য শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

 

এমজে/

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি