পাঠ্যবইয়ে শহীদ আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ ভুল
প্রকাশিত : ২১:০৪, ৫ জানুয়ারি ২০২৫
সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন চলাকালীন গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার এই মৃত্যুতে কোটা আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়। এই আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। পরবর্তীতে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। কিন্তু পাঁচ মাস না যেতেই তার মৃত্যুর তারিখ ভুলভাবে লেখা হয়েছে নতুন পাঠ্যবইয়ে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রকাশিত চলতি শিক্ষাবর্ষের একই শ্রেণির ভিন্ন দুই পাঠ্যবইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের মৃত্যুর দুটি ভিন্ন তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের ১৬ জুলাই দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন দুর্বার রূপ নেয়, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। গুলি লাগার মুহূর্তে রাজপথে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের ছবি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সেই আন্দোলনই পরবর্তীতে রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে, যার তোড়ে ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু এনসিটিবি প্রণীত নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে ‘গ্রাফিতি’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিরস্ত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। তবে একই শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ শিরোনামে যে অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, ‘১৬ই জুলাই আন্দোলন তার সবচেয়ে কার্যকর ও পরিচিত ছবিটি পেয়ে যায়। এটা হলো রংপুরে আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলির সামনে এগিয়ে যাওয়া।’
শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, সারাদেশের মানুষ জানেন কবে শহীদ আবু সাঈদকে নির্মমভাবে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। আর পাঠ্যবই যারা লিখলেন তারা জানেন না? এক বইয়ের পরিমার্জনকারীদের সঙ্গে আরেক বইয়ের পরিমার্জনকারীদের মনে হয় না কোনো সমন্বয় ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ১৬ জুলাই গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। এ ঘটনায় ১৮ অগাস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাজহাট আমলি আদালতে পুলিশ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষকসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
এদিকে পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ নামের প্রবন্ধে জুলাই আন্দোলনে নিহত একজনের নাম ভুল এসেছে। ওই প্রবন্ধে টঙ্গীর সাহাজউদ্দিন সরকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শহীদ নাফিসা হোসেনের নাম ‘নাহিয়ান’ ছাপা হয়। পরে অবশ্য অনলাইন ভার্সনে তা সংশোধন করা হয়।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলেও ওই শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে তা ঠিক আছে। এ ভুলগুলো অনলাইন কপিতে আমরা সংশোধন করে দিচ্ছি। আর সবগুলো ভুলের বিষয়ে আমরা সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জারি করব।
এসএস//
আরও পড়ুন