পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় সুযোগ পেয়েছে ২২ জন কোয়ান্টা
প্রকাশিত : ১৯:৪০, ৩০ আগস্ট ২০২৩
২০২৩ সালে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ৪২ জন। এদের মধ্যে ২২ জন ছাত্র দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাতালিকায় চান্স পেয়েছে। বাকি ১৪ জন ছাত্রও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে।
মেধাতালিকায় চান্স পাওয়া ২২ জন ছাত্রের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন ভর্তি হয়েছে। বাকি ৬ জন ভর্তি হয়েছে যথাক্রমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চান্স পেয়েছে—আবরার রাফি (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে), অরবিশ চাকমা (শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে), ইয়াইয়ং ম্রো (চারুকলায় ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিভাগে), উথান্ট চাক (চারুকলার ছাপচিত্র বিভাগে), ফরহাদুল ইসলাম (চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগে), তনইয়া ম্রো (চারুকলার কারুশিল্প বিভাগে), এবং রাকিব হাসান ও সুব্রত চাকমা (চারুকলার গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে)।
এ-ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স প্রাপ্ত ৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হয় মিনহাজ উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় শহিদুল্লাহ, স্পোর্টস সায়েন্স ও ফিজিক্যাল এডুকেশনে তালহা জুবায়ের, অম্রাসিং মার্মা, থনওয়াই ম্রো ও বেনদিকার বম এবং পালি বিভাগে প্রাচুর্য চাকমা ও হ্লাথোয়াইছা চাক ভর্তি হয়।
আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয় কোয়ান্টা নাজমুল হাসান। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে হায়দার আলী এবং ম্যনেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে অংথোয়াইছা চাক ভর্তি হয়।
এ-ছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে উম্রাঅং মার্মা, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি বিভাগে মংমাইছা চাক এবং গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ভর্তি হয় তানভীর মাহতাব।
এবছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া কোয়ান্টাদের মধ্যে ৩ জন চাকমা, ৩ জন মারমা, ৪ জন চাক এবং ৩ জন মুরং সম্প্রদায়ের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া আবরার রাফি নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলে, 'ছোটবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে ছিল আমার। স্কুলে লেখাপড়া করার সময় থেকেই আমি এই মনছবি দেখেছি। আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিয়মিত পরিশ্রম করে গেছি।'
অরবিশ চাকমা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে, ‘আমি আগে থেকেই লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম—কোটা নয়, মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়ে ভর্তি হবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রভুর কৃপায়, আমার প্রচেষ্টায় ও স্কুলের সহযোগিতায় আমার এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।'
ইয়াইয়ং ম্রো যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিভাগে চান্স পেল, সেদিন তার গ্রামের সবাই খুব আনন্দ করেছে। তার বাড়ি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম এলাকা কুরুকপাতা ইউনিয়নের ক্রংলেং পাড়ায়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার বড় ভাই তাকে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও চার ভাইবোনকে নিয়ে সংসার চালানো তার ভাইয়ের পক্ষে কষ্টকর ছিল। তাই ছোট ভাইটিকে এত দূরের কসমো স্কুলে দিয়ে যেতে হয়েছিল। সেই ছোট্ট ইয়াইয়ং এখন একজন প্রাণবন্ত তরুণ। স্কুলে থাকা অবস্থায় ভলিবলে সে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় যেমন সাফল্য অর্জন করেছে, তেমনি ছবি আঁকা ও লেখাপড়ায়ও ছিল তার মনোযোগ।
প্রতিটি কোয়ান্টার সাফল্যের নেপথ্যেই আছে এরকম একেকটি অনুপ্রেরণার গল্প। লক্ষ্য নির্ধারণ, নিয়মিত রুটিন করে লেখাপড়া ও অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে তারা এভাবেই এগিয়ে চলেছে সফল জীবন গড়ার পথে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে একথাটিই বুনে দেয়া হয়—'কোটা নয় মেধা'। প্রচলিত কোনো কোচিং সেন্টারে নয়, বরং নিজস্ব ক্যাম্পাসেই শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এ শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়। এ পর্যন্ত বুয়েট, মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী।
কেআই//
আরও পড়ুন