ঢাকা, বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫

‘পালা, নইলে সবাইকে মারবো’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৫৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রত্যন্ত দুটি গ্রামে আটকে আছে হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। আটকা পড়া কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। কারণ এক দিকে শেষ হয়ে এসেছে তাদের খাবার অন্য দিকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য তাদের বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে,‘পালা, নইলে সবাইকে মারবো’।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশেষ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আহ নাউক পিন নামের ওই গ্রামে আটকে পড়া এইসব রোহিঙ্গাদের কথা। ওই গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় রয়টার্সের। তাদের একজন মং মং রয়টার্সকে টেলিফোনে বলেন, আমরা আতঙ্কিত। শিগগিরই আমরা খাদ্যাভাবে মারা যাব। তারা আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

রয়টার্স ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে, যিনি নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, রাখাইনের বৌদ্ধরা তাদের গ্রামে এসে হুমকি দিয়ে বলে গেছে- ‘পালা, নইলে সবাইকে মারব’।

মং মং বলেন, গ্রামবাসীর বিপদের কথা জানিয়ে তিনি কমপক্ষে ৩০ বার পুলিশকে অভিযোগ নিতে বলেছেন। তিনি জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি রাখাইনের পরিচিত এক গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফোন পান। ফোনে তাকে বলা হয়, কাল পালাও। না হলে আমরা এসে তোমার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেব।

তবে রাখাইন রাজ্য সরকারের সচিব টিম মং সোয়ে রয়টার্সকে বলেন, তিনি রাথিডং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাছে থেকে কাজ করেছেন। তবে রোহিঙ্গা গ্রামবাসীকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। উদ্বেগের কিছু নেই। রাথিডংয়ের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিরাপদ।

পুলিশের মুখপাত্র মিয়ো থু সোয়েও বলেন, তার কাছেও রোহিঙ্গা গ্রামের সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন। রয়টার্স বলছে, রাখাইন রাজ্যের আহ নাউক পিন গ্রামটি রাথিডংয়ের ম্যানগ্রোভ এলাকা। এর চারদিকে পানি। গ্রামবাসী বলছে, তাদের কাছে কোনো নৌকা নেই।

মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, রাথিডংয়ের টিকে থাকা পাঁচটি রোহিঙ্গা গ্রাম এবং সেখানকার আট হাজার বাসিন্দা খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রয়েছে।

আহ নাউক পিং এবং পার্শ্ববর্তী নং পিন গি গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পথ দীর্ঘ, কষ্টকর। রাখাইনের সশস্ত্র রোহিঙ্গাবিরোধী প্রতিবেশীরা প্রায়ই তাদের বাধা দেয়।

খবরে বলা হয়েছে, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে হামলাকারী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দুজন রাথিডংয়ের ছিল। এখন পুরো রাথিডং ধর্মীয় উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে।

উল্লেখ, ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর এই ভয়ঙ্কর অভিযান চলছে। মুসলমান রোহিঙ্গাদের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের বিদ্বেষ পেয়েছে নতুন মাত্রা। অন্তত চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনের এই পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ধ্রপদী উদাহরণ হিসেবে।

গত মাসের শেষ দিকে নতুন করে এই সহিংসতা শুরুর আগে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস ছিল রাখাইন রাজ্যে। কয়েকশ বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে এলেও সরকার তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি। এমনকি তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার উপরও রয়েছে কড়াকড়ি। মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের বিবেচনা করে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’হিসেবে।

আরকে/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি