ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

পালাগান: ড্রাগের চেয়েও বড় নেশা ফেসবুক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩২, ১৪ মে ২০১৮ | আপডেট: ২০:৪৩, ১৪ মে ২০১৮

‘ড্রাগের অপরনাম মরণঘাতী নেশা। তবে ড্রাগের চেয়েও মরণঘাতী নেশা আছে, যা আমরা প্রতিনিয়ত গ্রহণ করছি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের অজান্তে তা সাদরে গ্রহণ করছি। আর সেই নেশার নাম ফেসবুক নেশা। ইয়াবা-হেরোইন-গাজার নেশায় কতিপয় তরুণ-তরুণীরা বুদ হয়ে থাকলেও ফেসবুকের নেশায় গোটা জাতি-ই বুদ হয়ে পড়ছে। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। এতে একদিকে আমরা হারিয়ে ফেলছি চিন্তা শক্তি, অন্যদিকে শারীরিকভাবে হচ্ছি রোগাক্রান্ত। এমনকি অনেকেই ফেসবুকের ফাঁদে পড়ে হারাচ্ছেন সর্বস্ব। বিশেষ করে তরুণীদের ‘প্রাইভেসি’ বলতে কিছুই থাকছে না। এই সুযোগে এক শ্রেণীর ধান্দাবাজ-লাফাঙ্গা কোমলমতী মেয়েদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের বাধ্য করছে অনৈতিক যৌন সম্পর্কে জড়াতে।’

‘ফেসবুক এবং ড্রাগ’ শিরোনামে কয়েক দিন পরই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে রেলস্টেশনগুলোতে পালাগানের মাধ্যমে ফেসবুকের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে পালাগান মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। শুধু রাজধানী-ই নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহতেও মঞ্চস্থ হবে ফেসবুক এবং ড্রাগ। দেশে পালাগান জগতের পুনর্জাগরণের অগ্রদূত সাঈক সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি একুশে টেলিভিশনের কাছে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

সাঈক সিদ্দিকী বলেন, ‘পালা গানের সূত্রপাত-ই হয়েছিল মানুষকে সচেতন করার জন্য। মানুষকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই পালাগান আজও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে সুনাম অর্জন করে আসছে। বর্তমানে ফেসবুক একটি মহামারি হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে আসক্ত হয়ে পড়েছে সব শ্রেণীর মানুষ, সব বয়সের মানুষ। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ফেসবুকের আসক্তি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া একটা অপরিচিত মেয়ে কিংবা ছেলে ফেসবুকে হাজারটা অপরিচিত মানুষের সঙ্গে মেশার ফলে তাদের সময়ও প্রচুর পরিমাণে নষ্ট হচ্ছে। একদিকে অপরিচিত একজন মানুষের কাছে সবকিছু শেয়ার করার ফলে কোনো কিছুই আর গোপন থাকছে না। এতে মারাত্মক খেসারত দিতে হচ্ছে তরুণীদের। অনেক সময় আপত্তিকর ছবি নিয়ে তাদেরকে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করছে কিছু দুষ্কৃতিকারী। আবার অনেক সময় দেখা গেছে অনেক তরুণী-ই ফেসবুক প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’

ফেসবুক আসক্তির বিষয়ে বাবা-মায়েদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে সাঈক সিদ্দিকী আরও জানায়, ‘এখন প্রায়ই বাবা-মাদের অভিযোগ করেন, ‘সন্তানেরা খেলাধূলা-পড়াশুনার পরিবর্তে সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে ফেসবুক চালায়। যেখানে যায়, সেখানেই ফেসবুক। অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হচ্ছে যে, শরীরের সঙ্গে আরেকটি অঙ্গ সে বয়ে বেড়াচ্ছে, আর তা হলো ফেসবুক। এমনটা হওয়ার কারণ, কেউ যখন ফেসবুকে কিছু পোস্ট করে, তারপর থেকে তার শুরু হয় মানষিক তাড়া। কে কতটা লাইক দিলো, কে কোন কমেন্ট করলো, কে কে শেয়ার করলো? এসব নিয়েই সে ভাবতে থাকে। এতে দিনের কোনো একটা সময় কেউ ফেসবুকে কিছু পোস্ট করলেও, সারাদিনই তার সঙ্গে থাকে ফেসবুক চিন্তা। এতে তার পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে, কর্মস্থলে ব্যঘাত ঘটে। চিন্তার জগৎটা সংকুচিত হয়ে যায়। এতে সে বড় কিছু ভাবতে পারে না। আর ভাবনার জগৎটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় তার মেধাশক্তি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।’

‘ড্রাগের এবং ফেসবুক’ পালায় বিষয়গুলো সুন্দরভাবে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানান সিদ্দিকী। উল্লেখ্য, সাঈক সিদ্দিকী কিশোরগঞ্জের জেলার একজন কৃতী সন্তান। তিনি পালাগান বিষয়ে দেশ ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, নিজেই কখনো কখনো করেন অভিনয়। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন স্পেন, ভারতসহ দেশ ও বিদেশের হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি ভারতের নদীয়ায় পালাগানের প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছেন সাঈক সিদ্দিকী। এ ছাড়া পুণেতে নিজেই অভিনয় করেছেন একটি পালা নাটকে। 

ভারতের নদীয়ায় রুমিও এন্ড জুলিয়েটের ছায়া অবলম্বনে রচিত ভানুসুন্দরীর পালা মঞ্চায়িত করেছেন তিনি। চ্যাটার্জী ও গাঙ্গুলি পরিবারের ভানুমতি ও চন্দ্রকুমারের প্রেম-বিয়োগ সবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। এতেই ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো পালাগানের পথচলা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। ওই নাটকে ভারতেরই বেশ কয়েকজন শিল্পী অভিনয় করেছেন বলেও জানান তিনি।

এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি